রাগ কন্ট্রোল করার উপায়

এঙ্গার বা রাগ অন্যান্য বাকি ইমোশনগুলোর মতই স্বাভাবিক একটি ইমোশন। যেটা একটি লিমিট অবধি আমাদের জন্য উপকারী। যেমন কোন একটি কাজ করার জন্য এনার্জাইজড করে তোলা, মনের মধ্যে সাহসের অভাবে চেপে রাখা না বলা কিছু সত্য কথা যেগুলো বলে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী সেগুলো বলে দিতে সাহায্য করা। এগুলো হলো রাগের ভালো দিক।

কিন্তু আবার রাগের লিমিট পেরোলেই এর থেকে ক্ষতিকর ইমোশন বোধহয় আর কিছুই নেই। কারণ মাত্রা অতিরিক্ত রাগ বা শর্ট টেম্পার আমাদের ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে তুলে, হার্টের ক্ষতি করে, প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সম্পর্ক গুলোকে নষ্ট করে দেয় এবং জীবনের আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভীষণভাবে নেগেটিভ ইফেক্ট করে। ঠিক টয়লেটের মতোই রাগও যদি ভুল জায়গায় ভুল সময়ে চলে আসে তাহলে প্রচুর সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে শেখাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা স্কিল। আর সেটা কিভাবে সম্ভব সেটাই আজ আমি আপনার সাথে শেয়ার করব। চলুন শুরু করা যাক।

how to control anger

তিন সেকেন্ডের রুল

সাইন্টিফিক রিসার্চ থেকে জানা গেছে, হট টেম্পার হওয়ার কারণে যে সেন্সেশনটা তৈরি হয় সেটা সাধারণত 2.5 সেকেন্ড স্থায়ী হয় অর্থাৎ রাগ বেরিয়ে আসার আগে আমরা যে অসহ্যকর মত একটা অনুভূতি অনুভব করি সেটা স্থায়ী হয় মাত্র 2.5 সেকেন্ড। এই সময়ের মধ্যে রিয়েক্ট করে ফেললে, বারবার সে অনুভূতিটা আসতে থাকে। আর রাগ আরো বাড়তে থাকে। কিন্তু যদি কোনোভাবে রিয়েক্ট না করে আমরা যদি এই 2.5 সেকেন্ড কাটিয়ে দিতে পারি, তাহলে সেই সেন্সেশনটা পেরিয়ে যায় এবং আমরা নিজেদের ওপর আবার কন্ট্রোল ফিরে পাই। তাই এক্ষেত্রে আপনাকে এই তিন সেকেন্ড রুলস ফলো করতে হবে অর্থাৎ যখনই ওই সেন্সেশনটা শুরু হবে তখনই আপনাকে নিজেকে তিন সেকেন্ডের একটা Pause দিতে হবে।

এর জন্য আপনার নিজের খুশিমতো যেকোনো টেকনিক ইউজ করতে পারেন। সেটা হতে পারে দশ থেকে এক পর্যন্ত উল্টা গুণা বা জোরে জোরে তিনবার নিঃশ্বাস নেওয়া। ষাঁড়েরা যখন লাল কাপড় দেখলে রেগে দৌড়ানো শুরু করার আগে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে, ওরকম আপনিও রেগে যাওয়ার আগে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে পারেন। তফাতটা হল এতে হয়তো ষাঁড়েদের রাগ বেড়ে যায় কিন্তু জোরে নিঃশ্বাস নেওয়াতে আপনার রাগ কমে যাবে। কারণ কোনরকম রিয়েক্ট না করে তিন সেকেন্ড পেরোতে পারলেই সেই সেন্সেশনটা নষ্ট হয়ে যাবে।

আমি আপনার সঙ্গে দুটো টেকনিক শেয়ার করলাম। এরকম অসংখ্য টেকনিক আপনি নিজেও খুজে বের করতে পারেন। যেমন দূরে কোন একটা জিনিসের উপর ফোকাস করা বা ফেইক একটা স্মাইল করা। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই তিন সেকেন্ড কোনরকম নেগেটিভলি রিয়েক্ট না করে পার করা, এটা সেই মুহূর্তে রাগটা কন্ট্রোল করতে আপনাকে অনেকটা সাহায্য করবে। কিন্তু এটা হল টেম্পোরারি একটা সলিউশন। কিন্তু যদি আমরা রাগের কোন পার্মানেন্ট সলিউশন চাই অর্থাৎ গোড়া থেকে রাগ কমাতে চাই তাহলে সেটা কী? সেটার জন্যই পরবর্তী দুটি স্টেপ।

এক্সারসাইজ করা:

দুদিন দু’রকম এক্সপেরিমেন্ট করে দেখুন। একদিনে সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে নিয়ে বসে পড়ুন ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এইসব সকালে বিছানা ছেড়ে ওঠার আগে থেকেই শুরু করে দিন। সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে মোবাইলে বা ল্যাপটপে, টিভি দেখে, উল্টাপাল্টা মুভিস দেখে কাটান এবং সন্ধ্যা বেলা নোটিস করুন আপনার মুডটা কেমন থাকে? মেজাজ খিটখিটে থাকে নাকি হাসিখুশি থাকে?

আরেকদিন সকালে উঠেই এক্সারসাইজ করুন। পার্কে গিয়ে জগিং করে আসুন বা হেঁটে আসুন। তারপর সঠিক ব্রেকফাস্ট করুন এবং প্রোডাক্টিভ কোন কাজ যা আপনি করতে ভালোবাসেন, এরকম কোন কাজের মধ্য দিয়ে দিনটাকে কাটান এবং সম্ভব হলে বিকালে আবারো একবার কিছু সময়ের জন্য বেসিক কিছু এক্সসাইজ করুন। তারপর সন্ধ্যা বেলা একবার ফ্রেশ হয়ে বসে নোটিশ করুন সেদিন আপনার মুডটা কেমন থাকে? খিটখিটে নাকি হাসিখুশি?

কারোর মুখের কথায় বিশ্বাস করার কোন দরকার নেই। নিজেই দুইদিন দু’রকম ট্রাই করে দেখুন।

এক্সারসাইজ করার ফলে আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন নামক একটি হরমোন ক্ষরিত হয়। এটাকে ফিল গুড হরমোন বলা হয়। কারণ এই হরমোনটি আমাদের স্ট্রেস লেভেল কমিয়ে মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। আর মন ভালো থাকলে অটোমেটিকেলি রাগও আমাদের কন্ট্রোলেই থাকে।

প্রপার ফুড এন্ড স্লিপ:

অনেকেই এই দুটো জিনিস কে ভীষণভাবে আন্ডারস্টিমেট করে। ঘুম এবং খাওয়া: অনেকেই আছেন যারা রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে সময়মতো সঠিক স্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে কাটান আর তারপর এটা নিয়ে অস্বস্তিবোধ করেন, যে আমি অল্পতেই এত রেগে যাচ্ছি কেন? খাওয়া এবং ঘুম সঠিক মাত্রায় এবং সঠিকভাবে না হলে যে আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু তবুও আজকে এই বাস্তবতার যুগে আমরা এই দুটো জিনিসই সব থেকে বেশি কম্প্রোমাইজ করার চেষ্টা করি।

সকালে সাতটায় উঠে অফিস বা কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হতে হবে এটা জানা সত্ত্বেও, রাত তিনটা চারটা অব্ধি মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকি। তারপর সকালে অর্ধেক ঘুম ঘুমিয়ে দেরিতে উঠে, ব্রেকফাস্ট যেটা কিনা দিনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মিল সেটাকেই বাদ দিয়ে দেই এবং খালি পেটেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। রোজ এই একই রুটিন চালানোর পরও আমরা আশা করি সুস্থতা শরীর এবং সুস্থ মনের অধিকারী হওয়ার। আমি জানি না সেটা কি কিভাবে সম্ভব?

যদি আমরা সত্যিই পিস অফ মাইন্ড চাই এবং এঙ্গার স্ট্রেস এই সমস্ত নেগেটিভ ইমোশন গুলোকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে চাই, কোন শর্টটার্ম নয় বরং লংটার্ম সমাধান চাই তাহলে তার একটাই উপায়। নিজের বডি এবং মাইন্ডকে সুস্থ রাখা। আর সেটা সম্ভব এক্সারসাইজ, প্রপার ফুট এবং সাফিসিয়েন্ট স্লিপের মাধ্যমে।

মাত্র তিনটা জিনিস যেখানে কোন কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয় কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই তিনটা জিনিসকেই আমরা সব থেকে বেশি কম্প্রোমাইজ করি এবং যার ফলে দিন দিন আমাদের মেজাজ আরো খিটখিটে হয়ে উঠছে।

Similar Posts