বাংলা চলচ্চিত্রের অবিস্মরণীয় কিছু মুখ

বাংলা চলচ্চিত্র এক সময় এদেশের দর্শকসমাজে যথেষ্ট সমাদৃত ছিল। তখন সিনেমা হলগুলো থাকতো মানুষের ঠেলাঠেলি ভীড়। এলাকার বড়লোক বাড়িতে শুক্রবার হলে টিভি বাইরে দিত আর পাটি পেতে এলাকার সিংহভাগ মানুষ জড়ো হতো সেই সিনেমা দেখতে। কালের বিবর্তনে সেই জৌলুশ হারিয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র। সেই জৌলুশ যে মানুষগুলো জন্য হয়েছিল তারাও হারিয়ে গিয়েছে সময়ের স্রোতের সাথে। তবে আজও তারা বিরাজমান এদেশের ভক্তমহলের হ্রদয়ে। আজ কিছু কথা হোকনা তাঁদের নিয়ে।

নায়ক রাজ রাজ্জাক

তার পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। বাংলা চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় নাম। তাকে বাংলা নায়কদের রাজ ডাক হয়। তার জন্ম কলকাতায় ১৯৪২ সালে। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতেন তিনি। মঞ্চনাটকের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু। তিনি জহির রায়হানের বেহুলা চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে সকলের নজরে আসেন। এরপর একের পর এক দর্শকমাতানো ছবি করেন। উল্লেখযোগ্য হলোঃ নীল আকাশের নিচে,জীবন থেকে নেয়া,ওরা ১১ জন, অবুঝ মন। তিনি ৩০০ টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তিনি একাধারে অভিনেতা,প্রযোজক ও পরিচালক। তিনি বেশ কয়েকবার বাংলা চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন। ২০১৭ সালের ২১ আগষ্ট বাংলা চলচ্চিত্র এই মহান অভিনেতা কে হারায়।


সালমান শাহ
এই নামটি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে লাখো ভক্তের হ্রদয়ে সাড়া জাগানো নাম। তিনি অভিনেতা ও মডেল। তার প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তিনি মোট ২৭ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সবগুলোই ব্যবসায় সফল চলচ্চিত্র ছিল। তিনি ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার রুপালি পর্দায় আগমন শুরু হয় বিভিন্ন নাটকের মাধ্যমে। তার প্রথম সিনেমা হলো “কেয়ামত থেকে কেয়ামত”।এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই নায়িকা মৌসুমির অভিষেক ঘটে। ১৯৯৬ সালে এই প্রতিভাবান নায়কের এক রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়।

 

শাবানা

সত্তর এর দশকে দর্শক সমাজে সমাদৃত ও জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী শাবানা। তার আসল নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। তিনি ১৯৫২ সালে গেন্ডারিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২৯৯টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং বহুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান। তার অভিষেক হয় চলচ্চিত্রকার এহতেশাম এর হাত ধরে। তার অভিষেক সিনেমা হলো নতুন সুর। তার ঠিক পরের বছরই এহতেশাম পরিচালিত উর্দু চলচ্চিত্র চকেরী-তে অভিনয় করে দর্শকমহলে পরিচিতি পান। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র গুলো হলোঃ দুই পয়সার আলতা,নাজমা,ভাত দে,অপেক্ষা,রাঙাভাবী,গরীবের বউ। ১৯৯৭ সালে হঠাত তিনি এই রুপালি পর্দা থেকে বিদায় নেন এবং আমেরিকা চলে যান।

আনোয়ার হোসেন

বাংলা চলচ্চিত্র সমাজে মুকুটহীন সম্রাট ডাকা হয় তাকে। তিনি ১৯৩১ সালে জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে তার অভিষেক ঘটে “এক টুকরা জমি” নাটকে অভিনয় করে। তিনি প্রথম সিনেমাতে সুযোগ পান ১৯৬১ সালে “তোমার আমার” ছবির মাধ্যমে। এরপর ১৯৬৭ সালে নবাব সিরাজুদ্দৌলা চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনিই প্রথম অভিনেতা যিনি একুশে পদক পান। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলোঃ সূর্যস্নান,কাচের দেয়াল,বন্ধন,সাত ভাই চম্পা। ২০১৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

দিলদার

কৌতুক অভিনেতা হিসেবে খ্যাত দিলদার। তিনি ১৯৪৫ সালে চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার অভিষেক হয় ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ চলচ্চিত্রে। যথেষ্ট সুনিপুণ কৌতুক অভিনয়ের পরিচয় দিয়ে দর্শক মাতিয়ে রেখেছেন এই অভিনেতা। তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে বেদের মেয়ে জোসনা, বিক্ষোভ, কন্যাদান, চাওয়া থেকে পাওয়া ইত্যাদি। ২০০৩ সালে তিনি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান। একই বছর ১৩ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Similar Posts