উচ্চরক্ত চাপ? এখন থেকেই সাবধান হোন!

রক্ত প্রবাহের সময় ধমনীর গায়ে যে চাপ অনুভব হয় তাকে রক্তচাপ বলা হয়। হৃদপিন্ডের সংকোচন বা সিস্টোল অবস্থায় ধমনীর গায়ে রক্তচাপের মাত্রা সর্বাধিক থাকে বলে মনে করা হয়।

বিগত কয়েক বছরে রক্তচাপ বা উচ্চ রক্তচাপ সকলের কাছে একটি চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে কিছুদিনের মধ্যেই হয়তোবা উচ্চরক্তচাপ বাংলাদেশ মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। সুতরাং এখন থেকেই সকলকে সচেতন করা অত্যাবশ্যক।

উচ্চরক্ত চাপ

রক্তচাপ কম থাকা উচিত নয়, আবার বেশি থাকা উচিত নয়। সেই জন্যই চিকিৎসকরা একটি আদর্শ রক্তচাপ নির্ধারণ করেছেন। চিকিৎসকদের মতে সাধারণত পরিণত বয়সে একজন মানুষের ক্ষেত্রে আদর্শ রক্তচাপ 120/80 মিলিমিটার বা তার কাছাকাছি। প্রথমটি উচ্চমান এবং দ্বিতীয়টি নিম্নমান। রক্তের উচ্চচাপ কে সিস্টোলিক চাপ বলা হয় এবং এর আদর্শ মান 120 মিলিমিটার এর নিচে বা তার কাছাকাছি। নিম্নচাপ কে ডায়াস্টোলিক বলা হয়এই চাপটির আদর্শ মান 80 মিলিমিটারের নিচে বা তার কাছাকাছি। এই চাপটি হৃদপিন্ডের দুটি মাঝামাঝি সময়ে রক্তনালিতে সৃষ্টি হয় এবং এই দুই ধরনের রক্তচাপের পার্থক্য কে বলা হয় ধমনী ঘাত চাপ।

রক্তচাপ সম্পর্কিত প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেল। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে কিছু মৌলিক বা ফান্ডামেন্টাল ধারণা!!

বিশেষজ্ঞরা উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলে থাকেন। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট মতে 2020 সাল অর্থাৎ এই সালের ভেতরে স্ট্রোক বা করোনারি ধমনীর রোগ হবে বিশ্বের, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার এক নম্বর মরণব্যাধি এবং যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। একপর্যায়ে মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। হৃদরোগ এবং স্ট্রোক এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে উচ্চরক্তচাপ।

আমরা বলেছিলাম যে রক্ত চলাচলের সময় ধমনির গায়ে যে চাপ সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় রক্তচাপ আর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তচাপকে বলে উচ্চ রক্তচাপ।

“বাবা অথবা মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সন্তানের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি।”

এছাড়াও যারা স্নায়বিক চাপে ভোগেন, ধূমপান করেন, অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত খাবার খান তারা উচ্চ রক্তচাপের মতো ভয়াবহ ব্যধিতে ভোগে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারের অন্য সদস্যদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি পরিবারের সদস্যদের কোলেস্টরেল অথবা ডায়াবেটিস পূর্ব ইতিহাস থাকলে তাদের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।

মাতৃকালীন সময় অথবা সন্তান প্রসবের সময় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত নারীর খিচুনি রোগের কারণে মৃত্যু হতে পারে। সুতরাং এটি একটি ভয়াবহ ব্যাপার তা আমরা সকলে উপলব্ধি করতে পারছি।

উচ্চ রক্তচাপের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন:
১. ঘাড় ব্যথা করা
২. বুক ধড়ফড় করা
৩ শরীর দুর্বল হওয়া
৪.মাথা ব্যথা করা
৫. বিশেষ করে মাথার পেছনে ব্যথা করা
৬.নাক দিয়ে রক্ত পড়া
৭.মাথা ঘোরা
৮.শরীর দুর্বল অনুভব করা
৯.অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, ইত্যাদি

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে প্রায় 50 শতাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপ হলে তার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। একদম সরাসরি স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাক হয়।

উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় এর একটি সঠিক পদ্ধতি রয়েছে। রক্ত চাপ মাপক যন্ত্র বা বিপি যন্ত্র ব্যবহার করে রক্তচাপ মাপা হয় রক্তচাপ মাপার শুরুতে রোগীকে কয়েক মিনিট নিরিবিলি পরিবেশে শান্তভাবে সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে হবে যা আমাদের দেশের অধিকাংশ রোগী করতে নারাজ। কমপক্ষে 15 থেকে 20 মিনিটের ব্যবধানে রেখে রক্তচাপ নির্ণয় করতে হবে।

রক্তচাপ এর প্রতিকার: উচ্চরক্তচাপ প্রতিকার করতে অবশ্যই শাকসবজি এবং টাটকা ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। নিজের শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে যথেষ্ট পরিশ্রম এবং ব্যায়াম করতে হবে। অবশ্যই চর্বিজাতীয় খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যদি পরিবারের কারো অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তা ত্যাগ করতে হবে এবং ধূমপান তো একদমই নিষিদ্ধ।

নিয়মমাফিক চলার পরেও কর্মতৎপরতা, স্বাস্থ্য, বয়স এবং রোগের কারণে রক্তচাপের মাত্রা কম বেশি হতে পারে। বিশেষ করে যারা অতিরিক্ত স্থূল তাদের ওজন কমানো অত্যাবশ্যক। তা না হলে তাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সুতরাং যদি আমরা একটি সুন্দর জীবন উপভোগ করতে চাই তাহলে উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে রক্তচাপের ঝুঁকি কমিয়ে আনা আবশ্যক।

Similar Posts