আমড়া, পেয়ারা, জাম্বুরা, কামরাঙা খান তো?
বাজার ভর্তি এখন আমড়া, পেয়ারা, জাম্বুরা, লটকন, কামরাঙ্গা আরও হরেক রকম ফল। কিন্তু অতিথি আপ্যায়ন থকে শুরু করে আত্মীয় বাড়ি পাঠানো কোন আনুষ্ঠানিকতায় এদের স্থান নেই। ফল হিসেবে তারা এখনো কদর খুব একটা বেশী পায়না।
টেবিলে কিংবা ফলের ঝুড়িতে দামি দামি বিদেশী ফল থাকবে এইটাই রেওয়াজ হয়ে গেছে। কিন্তু ওইসব ফল গুলা আসলেই শোপিস হয়ে গেছে। এক মাস পড়ে থাকলেও পচবেনা। কি যাদুর ফল!
মৌসুমি ফল গুলার মধ্যে কার কি গুনঃ
আমড়াঃ
১. ভিটামিন-সি-সমৃদ্ধ (প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ২০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়)।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
৩.রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
৪.অ্যান্টি-অক্সিডেন্টজাতীয় উপাদান থাকায় আমড়া বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখে।
৫.আমড়াতে প্রচুর আয়রন থাকায় রক্তসল্পতা দূর করতে বেশ কার্যকর।
৬. আমড়া খেলে মুখের অরুচিভাব দূর হয়।
৭. বদহজম ও কোষ্টকাঠিন্য রোধে আমড়া উপকারী।
৮. রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৯.সর্দি কাশির ক্ষেত্রে এটি বেশ উপকারী।
১০.হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে।
পেয়ারাঃ
১. এতে লাইকোপেন(Lycopene), কোয়ারকেটিন(Quercetin), ভিটামিন সি এবং আরো কিছু পলিফেনল আছে যা কিনা শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আর এই এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কমায়।
*প্রোস্টেট ক্যান্সার কমাতে অনেক সাহায্য করে পেয়ারা। আর সেই সাথে পেয়ারা খেলে মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
২.ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে এটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে আর তাই ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি কিছুটা কম থাকে।
৩. শরীরের সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম এর ব্যালান্স বাড়ায়,যা কিনা ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে। পেয়ারা ট্রাইগ্লিসারাইড এবং LDL নামক একটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। যার ফলে হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
৪. পেয়ারাতে ভিটামিন এ আছে যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি খেলে চোখের ছানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
৫. এতে আছে ফলিক এসিড। ফলিক এসিড একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজন।সব গর্ভবতীদেরই ডাক্তাররা ফলিক এসিড দিয়ে থাকেন ।কারণ এটি বাচচার নার্ভাস সিস্টেমকে উন্নত করে। আর সেই সাথে এটি বাচচাদের নিউরোলোজিক ডিজঅর্ডার থেকে দুরে রাখে।
জাম্বুরাঃ
১. জাম্বুরা ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর জনিত সমস্যার জন্য খেলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় ।
২. এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
৩. এতে বিদ্যমান বায়োফ্লভনয়েড বেশি থাকায় ব্রেস্ট ক্যান্সারের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৪. ভিটামিন ‘সি’ বেশি থাকায় রক্তনালির সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জার ফলে ডায়াবেটিস, জ্বর, নিদ্রাহীনতা, মুখের ভেতরে ঘা, পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৫.কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
৬.নিয়মিত জাম্বুরা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ।
কামরাঙ্গাঃ
*দক্ষিণ এশিয়াতে আপেল ও চিনি দিয়ে কামরাঙা রান্না করার চল আছে। চীনে মাছ দিয়ে রান্না করা হয়। অস্ট্রেলিয়াতে সবজি হিসেবে রান্না করা হয়, আচার বানানো হয়।
*জ্যামাইকাতে কামরাঙ্গা শুকিয়ে খাওয়ার চল রয়েছে। হাওয়াই ও ভারতে কামরাঙ্গার রস দিয়ে শরবত বানানো হয়।
১.কামরাঙ্গায় ভিটামিন সির পরিমাণ আম, আনারস ও আঙ্গুরের চেয়ে বেশি।
২.এতে আয়রনের পরিমাণ পাকা কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, লিচু, কমলালেবু ও ডাবের পানির থেকেও বেশি
৩.এতে থাকে এলজিক এসিড, যা খাদ্যনালির (অন্ত্রের) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৪. কামরাঙ্গা পুড়িয়ে ভর্তা করে খেলে সর্দিকাশির সমস্যা ভালো হয়ে যায়।
৫. কামরাঙ্গা ভর্তা রুচি ও হজমশক্তি বাড়ায়। পেটের ব্যথায় কামরাঙ্গা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
তাই বাজারের বিষাক্ত ফল দাম দিয়ে না কিনে, মৌসুমি ফলগুলাই খান। বাচ্চাদের খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। অতিথির পাতে তুলে দিন কামরাঙা, জাম্বুরার ভর্তা। বলুন তোমাকে ভালবাসি তাই বিষ দিচ্ছিনা( বিষাক্ত ফল দেওয়া মানেতো বিষ খেতে দেয়া!)