পারিবারিক সুসম্পর্ক ধরে রাখতে যা করবেন: পর্ব – ১
একজন মানুষের বেড়ে ওঠার সবচেয়ে প্রথম ধাপ হচ্ছে পরিবার। এই পরিবারে একজন মানুষ জন্ম নেয়। পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় হয়ে তাদের প্রতি ভালোবাসায় জর্জরিত হয়ে যায়। যে কোনো ধরনের বিপদে আপদে এই পরিবারের সদস্যরাই সবার আগে ছুটে আসে। পরিবারের ভূমিকা একজন মানুষের জীবনের তাই সত্যিই অনন্য।
কিন্তু এই পরিবারেই মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেক ধরনের সমস্যা। অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত পরিবার রক্ষা করা যায় না, ভেঙে যায়। এত সাধের, এত প্রিয় পরিবার পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার মূল কারণই হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়া। শুধুমাত্র সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে স্বামী স্ত্রী নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদ করে ফেলে, ভাই ভাই নিজের বৃদ্ধ মাকে ফেলে আলাদা হয়ে যায়, বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসে। তাই আমরা বুঝতে পারছি যে, পরিবারের বন্ধন নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সদস্যদের প্রতি সুসম্পর্কের ঘাটতি। আর তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে পরিবারের সদস্যদের সাথে কিভাবে সুসম্পর্ক স্থাপন করা যায়। তাই দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
কোন ব্যাপারে ঝগড়া হলে এড়িয়ে যান
ঝগড়া খুবই সাধারন একটা জিনিস। পরিবারের সদস্যদের সাথে একসাথে থাকতে হলে ঝগড়ার মতো মনোমালিন্য হতেই পারে। এটা কোন বিষয় না। বরং ব্যাপারটা খুবই সাময়িক। একটা পর্যায়ে গিয়ে প্রত্যেকে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় ঠিকই, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। সুতরাং চেষ্টা করুন পরিবারের কোন সদস্য যদি মাথা গরম করে ভালো মন্দ কিছু বলেও ফেলে তখন ব্যাপারটাকে ঝগড়ার দিকে ফেলে না দিয়ে বরং শান্ত থেকে তার সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। ঠাণ্ডা মাথায় সমাধান দিন, দেখবেন ঝগড়া বেশিদিন স্থায়ী যেমন থাকবে না, তেমন একে অপরের প্রতি সম্পর্কটাও থেকে যাবে।
প্রত্যেককে তার নিজের কাজের স্বীকৃতি দিন
কাজের স্বীকৃতি প্রত্যেক মানুষকেই দেওয়া উচিত। যেমন ধরা যাক, একটা পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য খাবার রান্না করে অন্তত প্রতিদিন তাকে তার এই কাজের জন্য স্বীকৃতি না দিয়ে একদিন তাকে বলুন “সে না থাকলে আপনাদের খাওয়ার বিরাট সমস্যা হতো” কিংবা “সে না থাকলে তার মত মজা করে খাবার রান্না করে কেউ খাওয়াতো না”
এভাবে বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকে ছোটখাটো কমপ্লিমেন্ট দিয়ে তার কাজের স্বীকৃতি দিন। এতে করে সে নিজেকে মূল্যহীন মনে করবে না। তার ভেতরে এমন মনোভাব কাজ করবে যে, “আমি ছাড়া এই পরিবারকে দেখে রাখবে কে? এই পরিবারকে ভালো রাখার জন্য আমার থাকতেই হবে”।
সংসারের কাজ গুলো ভাগাভাগি করে নিন
একটা সংসারকে মজবুত এবং সুন্দর রাখতে হলে বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করা লাগে। তাই সংসার গুছিয়ে রাখার দায়িত্বটা যেরকম সবার। ঠিক সেরকমই সংসারের বিভিন্ন কাজকর্মগুলো সবার। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংসারের কাজগুলো ভাগাভাগি করে নিয়ে করা উচিত। এতে করে নির্দিষ্ট একজন মানুষের উপর সংসারের সম্পূর্ণ চাপ সৃষ্টি হবে না এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ না থাকার কারণে মন-মানসিকতাও সকলের ভালো থাকবে।
ব্যক্তিগত ইচ্ছা কিংবা প্রত্যেককে তার শখের মূল্য দিন
প্রত্যেকেরই কোন না কোন ইচ্ছা বা শখ থাকতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। ধরুন পরিবারের সদস্যরা একত্রে মিলে কোন মার্কেটে গেলেন এবং সেখানে একটি খুব সুন্দর শাড়ি একজনের পছন্দ হয়ে গেল। এখন সে ওই শাড়িটি কিনতে চাইবে। কিন্তু পরিবারের বাকি সদস্যরা যদি তার এই কেনা বা আগ্রহের ব্যাপারে অমত প্রকাশ করে, তবে কিন্তু ব্যাপারটা খুবই খারাপ দেখায়। যদি পরিবারের সদস্যদের শাড়ি কেনার ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা থাকে তাহলে তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে হবে এবং সব থেকে ভালো হয় আর্থিক অবস্থা উন্নত হওয়ার পরে ওই রকমই একটি শাড়ি তাকে সারপ্রাইজ গিফট করে দেওয়া। এতে করে তার খুশির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এভাবে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে তার ইচ্ছা প্রকাশ ও শখের মূল্য দিতে শিখুন। সবকিছু তাহলে অনেক ভালো হবে।
স্বামী স্ত্রীর কলহ শিশুর আড়ালে করুন
পরিবারে থাকতে হলে প্রেমের খুঁনসুটি যেমন হবে, ঠিক তেমনি মনোমালিন্য, ঝগড়া, কথা কাটাকাটিও হবে। সকল পরিবারেই এগুলো হয়ে থাকে এবং এগুলো সম্পর্কেরই অংশ। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঝগড়া যদি তাদের সন্তানের সামনে করা হয়, তবে তার প্রভাব সন্তানের উপর পড়বে। একজন শিশুর জন্য পৃথিবীতে তার সবচেয়ে আপনজন বাবা এবং মা। বাবা মা ছাড়া কোন কিছুই সে বুঝতে পারে না। এমন অবস্থায় যদি সে নিজের চোখে তার বাবা এবং মায়ের ঝগড়া, কথা কাটাকাটি, কিংবা গায়ে হাত তোলার মতো দৃশ্য পর্যন্ত দেখে থাকে, তবে সেটা তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই এই ব্যাপারটিতে সাবধান থেকে বাবা-মায়েরা শিশুদের আড়ালে নিজেদের কলহ ঝগড়াঝাঁটি মিটিয়ে নেবার চেষ্টা করবেন। কেউ কারো গায়ে হাত তুলতে যাবেন না। কারণ এটা তো কোন সমস্যার সমাধান হয় না তাই না? উল্টো পরিস্থিতি আরও বিপরীত দিকে যায়।
পরিবারের সদস্যরা মিলে জন্মদিন পালন করুন
জন্মদিন একজন ব্যক্তির জীবনে সেই বিশেষ দিন যার জন্য সকলেই বছর ধরে অপেক্ষা করে। তাই পরিবারের সদস্যরা সকলে মিলে ব্যক্তির জন্মদিন পালন করুন। এই দিনে তার জন্য ভালো মন্দ কিছু করার চেষ্টা করুন। অন্তত বছরের এই দিনটিতে ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দিন তার গুরুত্ব পরিবারে কত বেশি। তাকে ভালো কিছু উপহার দিন যাতে করে সে খুশি হয়। জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তায় এমন কিছু কথা লিখে দিন যাতে করে সে মনে করে এই পরিবারে তাকে কেউ কম ভালোবাসে না, সকলেই তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী, সকলেই তাঁর ভালো চায়।
সুপ্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলটির প্রথম অংশ এখানেই শেষ হচ্ছে। এর দ্বিতীয় অংশ খুব শীঘ্রই লিখে ফেলা হবে। ততদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন, ধন্যবাদ।