অতিরিক্ত রাত জাগলে মারা যেতে পারেন এক বছরের মধ্যে !
আজব লাগছে ? ব্যাপারটা আজব হলেও অনেকাংশে সত্য। নানা কারণে আমাদের মাঝে বর্তমানে রাত জাগার অভ্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে। কাউকে হয়ত অফিসে রাতের শিফটে কাজ করতে হচ্ছে , কেউ হয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাটিং করে, মুভি দেখে বা গেমিং করে রাত কাটিয়ে দিচ্ছে। আমাদের অনেকের কাছেই এটা তেমন বড় কোন বিষয় নয়, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এটি আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর একটি অভ্যাস। আপনি যদি কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা শুরু করেন তাহলে আপনার দেহে বেশ কিছু পরিবর্তন সংগঠিত হবে এবং নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে থাকবে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়গুলো আরো বিস্তারিত আকারে আলোচনা করবো। চলুন শুরু করা যাক-
রাত জাগা শুরু করলে প্রথমেই যে সমস্যা শুরু হয় তা হচ্ছে আমাদের দেহের বিভিন্ন হরমোনের পরিমাণে তারতম্য হতে থাকে। যেসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোনের কার্যক্রমে রাত জাগার অভ্যাস খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে সেগুলো নিম্নরূপ:
১। মেলাটনিন –
আপনার দেহের লজ্জাবতী হরমোন নামে পরিচিত একটা হরমোন হচ্ছে মেলাটনিন। এটি অন্ধকার অবস্থায় নিঃসৃত হয় । প্রাকৃতিকভাবেই রাত দশটা থেকে দুটোর মাঝে এটি নিঃসরণের পরিমাণ বেশি থাকে। এই হরমোন আপনার দেহে হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখে । ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রন করে । চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে । কিন্তু , গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে এই হরমোন সঠিক পরিমাণে নিঃসৃত হতে পারে না । ফলে দেহের সম্পূর্ণ হরমোন সাইকেল বিনষ্ট হয়ে যায়, আপনার ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পায় । সাথে সাথেই আপনার রক্তনালি শক্ত হয়ে যায় । এর গায়ে চর্বি জমতে থাকে। যা টেনে নিয়ে যায় হার্টঅ্যাটাক কিংবা ব্রেইন স্ট্রোকের দিকে । এক সমীক্ষায় দেখা যায় , কোনো শারীরিক কার্যক্রম ছাড়াই রাত জেগে থাকলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ১৮০/১২০ পর্যন্ত । একই সমীক্ষায় বলা আছে , নিয়মিত রক্ত চাপ একই পরিমাণে থাকলে আপনার এক বছরের মধ্যে মৃত্যু সম্ভাবনা সত্তর ভাগ ।
২। সেরাটনিন –
দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি হরমোন হলো সেরাটনিন হরমোন। সেরোটোনিন হল মূল হরমোন যা আমাদের মেজাজ, সুস্থতার অনুভূতি এবং সুখকে স্থিতিশীল করে। এই হরমোন আপনার পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে। এটি মস্তিষ্কের কোষ এবং অন্যান্য স্নায়ুতন্ত্রের কোষগুলিকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম করে। সেরোটোনিন ঘুম, খাওয়া এবং হজমে সহায়তা করে ।
রাত জেগে থাকলে দেহের সেরাটনিন সাইকেল মারাত্মক বিপর্যস্ত হয় এবং ওইসকল শারীরবৃত্তীয় কাজ ব্যাহত হয় যা সেরাটনিনের সাহায্যে সংগঠিত হতো যেমন মস্তিষ্কের কোষগুলোর বিপাকীয় কার্যক্রম , পরিপাক কিংবা পরিপূর্ণ রক্ত সংবহন ।
৩। পিটুইটারি গ্রোথ হরমোন–
কথায় আছে বাচ্চারা বড় হয় ঘুমের মাঝে । আসলে কথাটা একটি কথার কথা নয় । এর পিছনে দায়ী আমাদের পিটুইটারি গ্রোথ হরমোন ।
কিশোর বয়সের কেউ যদি রাতে পর্যাপ্ত না ঘুমায় তবে তার দেহের বৃদ্ধির পরিমাণও কমে যাবে । ফলে দেহের মেটাবলিক কাজে ক্ষতি সাধিত হবে । এই ক্ষতি ডেকে আনবে পরিণত বয়সের ডায়াবেটিস কিংবা ব্লাড প্রেসারের মত মরণঘাতি রোগ ।
এবারে আসুন জেনে নেই অতিরিক্ত রাত জাগলে আপনার দেহের বাহ্যিক কি রকম ক্ষতির আশংকা আছে –
ক- আপনার চোখের নিচে বরাবর কালি জমে যেতে পারে। যা একটি সুন্দর সুশ্রী চেহারার জন্য ক্ষতিকর ।
খ- দেহের বিভিন্ন অঙ্গে চর্বি জমে যেতে পারে। ফলে আপনার দৈহিক ওজন বেড়ে যাবে। এর সাথে আরো নানারকম শারীরিক সমস্যা টেনে আনবে এই বাড়তি ওজন ।
গ- তীব্র মাথাব্যথার সমস্যা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এই মাথা ব্যথা আপনার সারাদিনের কাজকে বিলম্বিত করতে পারে।
ঘ- আপনি যদি রাত জেগে মোবাইল চালান তবে , মোবাইলের নীল রশ্মি আপনার চোখ-মুখ-ত্বকের নানারকম ক্ষতি সাধন করে, । মোবাইলের রেডিয়েশন থেকে ক্যান্সার হবার ঝুঁকিও এড়িয়ে দেয়া যায় না ।
সব মিলিয়ে আপনি যদি কোন শারীরিক কার্যক্রম ছাড়াই অতিরিক্ত রাত জেগে থাকেন , রাত ১০টা থেকে ২টার মাঝে ঘুমাতে না যান তবে আপনার ব্লাড প্রেসার মারাত্মক ভাবে বেড়ে যেতে পারে কিংবা ক্তনালীতে চর্বি জমার মত সমস্যা হতে পারে। যা মাত্র ১ বছরের মধ্যেই আপনার মৃত্যুকে দেকে আনতে পারে। এজন্য আসুন সকলেই রাত জাগা পরিহার করি। সুস্থ্য সুন্দর জীবন-যাপন করি।
তথ্যসূত্র –
১- এক বছর ধরে রক্তচাপ ১৮০/১২০ থাকলে মৃত্যু হতে পারে-
https://www.lifespan.org/lifespan-living/do-you-have-high-blood-pressure-what-new-guidelines-say
২- মেলাটনিন হরমোন- https://en.wikipedia.org/wiki/Melatonin
৩- সেরাটনিন হরমোন – https://www.hormone.org/your-health-and-hormones/glands-and-hormones-a-to-z/hormones/serotonin#:~:text=Serotonin%20is%20the%20key%20hormone,sleeping%2C%20eating%2C%20and%20digestion.
৪- পিটুইটারি গ্রোথ হরমোন- https://www.yourhormones.info/hormones/growth-hormone/#:~:text=What%20is%20growth%20hormone%3F,to%20promote%20growth%20in%20children.