মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা যে কাজগুলো করেন না! – ১ম পর্ব

২৩ বছর বয়সী একজন ইয়াং লেডি কিছুদিন হলো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একজন সাইকোথেরাপিস্টের জব করতে শুরু করছেন। ভালোবাসার মানুষটির সাথে বিয়ে করে সংসার শুরু করেছেন এবং এমনকি তিনি নিজে একটা বাড়িও কিনে ফেলেছেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে সাধারণত সফলতা বলতে যেটা বোঝায় তার সবকিছুই অর্জিন করে ফেলেছিলেন, 13 Things Mentally Strong People Don’t Do -এর রাইটার AMY MORIN (অ্যামি মরিন)। কিন্তু এরপর হঠাৎই একদিন তার কাছে তার বোনের একটি ফোন কল আসে।

things-that-mentally-strong-people-dont-do

তার বোন তাকে জানায়, তার মা হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে গেছেন এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অ্যামি আর তার হাজবেন্ড খবরটা পেয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছান এবং সেখানে পৌঁছে অ্যামি জানতে পারেন, তার মা ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে মারা গেছেন। যেখানে আগের দিন রাত অবধিও তার মা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। স্বাভাবিক নিজের সব থেকে কাছের মানুষটিকে হারিয়ে অ্যামি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েন। যেহেতু তিনি নিজে একজন সাইকোথেরাপিস্ট অর্থাৎ মনোবিজ্ঞানী ছিলেন। তাই তিনি জানতেন: কিভাবে এই হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। তবু তার বেরিয়ে আসতে অনেকটা সময় লেগে যায়।

এরপর যখন তিনি তার মায়ের মৃত্যুর শোক থেকে একটু রিকভার করে উঠেছেন ঠিক তখনই ২৬ বছর বয়সে হঠাৎই একদিন তার হাজবেন্ডের একটি হার্ট অ্যাটাক হয় এবং তার হাজবেন্ড মারা যান। ২৩ বছর বয়সী সেই সফল হাসিখুশি মেয়েটি ২৬ বছর বয়সে এসে এখন একজন বিধবা.. যার মাও তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন চিরদিনের জন্য।

এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর অ্যামি আবার তার জীবনে ভালোবাসা খুঁজে পান এবং দ্বিতীয়বার তিনি বিয়ে করেন। তিনি তার পুরনো বাড়িটি বিক্রি করে দিয়ে নতুন একটি বাড়িতে তার নতুন পরিবারের সাথে শিফট করে যান এবং আবার নতুন করে বাঁচতে শুরু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আবার কিছুদিন পরেই তার শ্বশুরের ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরপর তিনবার একই ঘটনা ঘটার কারণে, এবার অ্যামি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন।

তার মনে প্রশ্ন জাগে.. কেন সব সময় আমার সাথেই এগুলো ঘটছে? দু’বার তিনি যেভাবে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন, তৃতীয়বারও যাতে তাকে আবার সেই একই সমস্যা ফেইস করতে না হয় তাই তিনি তাঁর শ্বশুরের ক্যান্সার ধরা পড়ার কিছুদিন পর থেকেই একটি লিস্ট বানাতে শুরু করে দেন যে মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা কি কি ব্যাড হ্যাবিট সব সময় এড়িয়ে চলেন এবং এভাবে তিনি ১৩টি অভ্যাস খুঁজে পান যেগুলি মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা সব সময় এড়িয়ে চলেন। এই ১৩টি হ্যাবিট তিনি রোজ বারবার পড়তে শুরু করেন এবং সেইভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন।

কিছুদিন পর তার শ্বশুর মারা যান কিন্তু এবার অ্যামি সেই ১৩টি হ্যাবিট ফলো করে খুবই কম সময়ের মধ্যে নিজের মানসিক পরিস্থিতি সামলে নিতে সক্ষম হন। তারপর সেই ১৩টি হ্যাবিট তিনি নরমালি একটি ব্লগ পোস্টে লিখে ইন্টারনেটে পাবলিশ করেন। এটা ভেবে যে যদি কারো সেটা থেকে সাহায্য হয়। আর্টিকেলটি পাবলিশ করার সময় অ্যামি স্বপ্নেও ভাবেননি যে আর্টিকেলটি ভাইরাল হয়ে যাবে এবং সেটি ৫০ মিলিয়নের বেশি লোক পড়বে। পরবর্তিতে পাবলিক ডিমান্ডে তিনি এই ১৩টি হ্যাবিট নিয়ে ডিটেলসে ডিসকাস করার জন্য 13 Things Mentally Strong People Don’t Do বইটি প্রকাশ করেন এবং তার বইটি ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলিং বুকে পরিণত হয় এবং ৩০টি ভাষায় অনুবাদিত হয়ে ওয়ার্ল্ডওয়াইড পাবলিশ হয়। আজ এই বেস্ট সেলিং বই থেকেই কিছু স্মার্ট আইডিয়া’স আপনার সঙ্গে শেয়ার করবো।

১. মানসিক দিক থেকে শক্তিশালী লোকেরা- নিজের প্রতি দুঃখিত অনুভব করে তাদের সময় নষ্ট করেন না

আপনি কি আপনার সাথে খারাপ কিছু ঘটলেই সবার আগে এই প্রশ্নটা করেন- আমার সাথেই কেন সবসময় এরকম হয়? তাহলে জেনে রাখুন: আপনি নিজেই নিজেকে দিনদিন মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলছেন। কারণ, এটা সাইন্টিফিক্যালি প্রমাণিত: যে আত্মকরুণা আমাদেরকে সব সময় মানসিক দিক থেকে দুর্বল করে তোলে। কারণ, এভাবে ইনডাইরেক্টলি আমরা নিজেকে নিজে বলি যে আমার জীবনের পরিস্থিতিগুলোকে বদলানোর জন্য আমার কিছুই করার নেই। আমরা সব সময় নিজের পরিস্থিতির জন্য অন্য কাউকে ব্লেইম করতে শুরু করি। যেখানে উচিত নিজে নিজের লাইফের প্রতিটা সিচুয়েশনে রেস্পন্সিবিলিটি নিয়ে সেগুলোকে নিজের হাতে বদলানোর চেষ্টা করতে শুরু করা। কারণ, যখন আমরা অন্যকে ব্লেম করার বদলে নিজে নিজের লাইফে রেস্পন্সিবিলিটি নিতে শুরু করি তখনই আমরা মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠি।

২. মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা- কখনো পরিবর্তনকে ভয় করেন না

এই পৃথিবীতে একটা জিনিসই ধ্রুবক আর সেটা হলো- পরিবর্তন। তাই মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা কখনো পরিবর্তনকে ভয় পেয়ে সেটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন না। বরং সেটাকে আলিঙ্গন করে স্বাগত জানান। যদি আপনার এখনো অভ্যাস থাকে প্রতিদিন কলেজ বা অফিস থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সোজা ল্যাপটপ বা ফোন নিয়ে খাটের উপর বসে পড়া আর রাতে ঘুমাতে যাওয়া অবধি সেটা নিয়েই বসে থাকা। তবে সেই অভ্যাসটাকে পরিবর্তন করে ইভিনিং ওয়ার্ক করার অভ্যাসটাকে নিজের মধ্যে আনতে আপনাকে অনেক মানসিক বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। যেটা সবার জন্যই ভীষণই আনকম্ফোর্টেবল একটা মানসিক অবস্থা। আর এই আনকম্ফোর্টেবল মানসিক অবস্থাটা যাতে ফেইস করতে না হয় তাই মানসিকভাবে দুর্বল লোকেরা সেই পরিবর্তনটাকে বারবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। যেটা তাদের দিনদিন আরও মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। কিন্তু মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে ভালো কিছু করতে কখনো ভয় পান না। কারণ, তারা জানেন- এটা তাদের দিনদিন মানসিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

৩. মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা- সেই সমস্ত জিনিসের উপর কখনো ফোকাস করেন না যা তারা কোনোদিনও কন্ট্রোল করতে পারবেন না

আপনার স্ত্রীর কথায় কথায় ঝগড়া করার অভ্যাস, আপনার বসের রুড বিহ্যাভ, কলেজের স্যার বা ম্যাডামের রুড বিহ্যাভ, রাস্তার ট্রাফিক, আজকের ওয়েদার এগুলোর কোনোটাই আপনি যত ইচ্ছা চেষ্টা করে নিন কোনোদিনও কন্ট্রোল করতে পারবেন না। তাই মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা কখনো এই ধরনের জিনিসগুলোর প্রতি ফোকাস করে তাদের টাইম এবং এনার্জি নষ্ট করেন না। কারণ, তারা জানেন যে এতে তারা মানসিকভাবে আরো দুর্বল হয়ে পড়বেন।

যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে শেখা, সঠিক সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে কাজগুলো কমপ্লিট করা, পরিস্থিতি অনুযায়ী মাথা ঠান্ডা করে অ্যাকশন নেওয়া- এগুলো সবই আপনার নিজের কন্ট্রোলে। তাই মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা এই ধরনের জিনিসগুলোতেই ফোকাস করেন এবং নিজেদের টাইম এবং এনার্জি এই সমস্ত জিনিসগুলোর পিছনেই ইনভেস্ট পারেন যেগুলো তারা কন্ট্রোল করতে পারবেন। যেটা তাদের আরো মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

চলবে..

Similar Posts