চালন্দা গিরিপথ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
জায়গার বর্ণনাঃ চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্ব এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ন চালন্দা গিরিপথ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭’শ ৫৩ একর আয়তনের মধ্যে যেমন রয়েছে বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী, তেমনি রয়েছে উঁচু-নিচু পাহাড়। কখনো এসব পাহাড়ের কোল জুড়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া, কখনো বা উৎপন্ন হয়েছে ঝর্ণা ও গিরিপথ। সেটা স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়া আর কেই-বা জানেন! প্রকৃতির বিস্ময় অঘোষিত পর্যটন স্পটে পরিনত হয়েছে ‘চালন্দা গিরিপথ’।
এক এক করে স্মৃতিসৌধ, আইটি ভবন,লাইব্রেরি,জাদুঘর সব ফেলে চলে যাবেন কলার ঝুপরিতে। কলা ঝুপড়ির পাশে রয়েছে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির ঝরনা। ঝরনার পানির উৎপত্তিস্থলের দিকটি ‘ছড়া’র পানি বা মিঠেছড়া নামে পরিচিত। এই ছড়ার পানি দিয়ে পশ্চিমে প্রায় ঘন্টা খানিক হাঁটার পর দক্ষিণে দেখা মিলবে অদ্ভুত সুন্দর চালন্দা গিরিপথের। স্বচ্ছ পানির স্রোতোধারা ধরে গিরিপথে এগুতে থাকলে দেখা যাবে সেখানে পাহাড়ের আদা-সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল-মূল,শাক সবজি চাষাবাদ, পাহাড় থেকে কাঠ কেটে আনা কাঠুরিয়া, নানা জাতের নয়নাভিরাম গাছ গাছালি, পাহাড়ে স্থায়ী বাসিন্দা সাপসহ বিভিন্ন সরীসৃপ প্রাণীর অপরূপ দৃশ্য। ছড়ার পানিতে হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ করবেন, পাহাড়ের গাঁ বেয়ে নেমে আসছে বিশুদ্ধ পানি, যা আপনি পান করতে পারবেন। এই পানি পান করে পাহাড়ে চাষাবাদকারী কৃষকরা তাঁদের তৃষ্ণা মেটান। একটু সাবধান থাকবেন কারন অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি পানির ঝিরিতে দু একটা জাগয়ায় চোরা বালি আছে। ঘন্টা খানিক হাটার পর দেখতে পাবেন তিন রাস্তার মোড় আর খুব সহজে বুঝতে পারবেন বাম দিকে থেকে ঠান্ডা পানি এসে মিলছে ওই বাম বা দক্ষিণে দিক দিয়ে আর রাস্তাটা অন্ধকার হয়ে গেছে ভিতরের দিকে। এটাই চালন্দা গিরিপথ। পাশাপাশি দুটি পথ। একটি চালন্দার, অন্যটি সীতাকুণ্ডের দিকে। তাই ঠিক পথের ধারণা না থাকলে সীতাকুণ্ড চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গিরিপথের প্রবেশমুখে শীতল পানির প্রথম স্পর্শ অন্য রকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠা এ গিরিপথ ভ্রমণে যেমন উন্মাদনা আছে, রোমাঞ্চ আছে, অ্যাডভেঞ্চার আছে, তেমনি আছে বিপদও। একটু অসতর্কতার কারণে পড়তে হতে পারে বড় রকম কোনো বিপদের। মিনিট দশেক হাটার পর আশপাশ থেকে হরেক রকম পাখির কিচিরমিচির সুরেলা শব্দ আপনাকে বিমোহিত করবে। এর মাঝে হঠাৎ যদি সাপের শোঁ-শোঁ শব্দ কানে চলে আসে ঘাবড়ে যাবেন না। প্রকৃতি যেন তার রহস্যময় সৌন্দর্যকে লুকিয়ে রেখেছে চালন্দা গিরিপথের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে। গিরিপথে পানি দিয়ে কিংবা পাহাড় ঘেঁষেঘেঁষে হাটঁতে পারবেন কিন্তু বলে রাখি পাহাড় ঘেঁষে হাঁটার মাঝে অন্যলেভেলের এডভেঞ্চারের সুখ পাবেন। যদিও যথেষ্ট রিক্স পাহাড়ের পথ। একবার পা পিছলে পড়লেই হাত-পা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ছোট পথ দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে হঠাৎ আবিষ্কার করবেন অনেক বড় একটা খোলা প্রান্তর। যেখানে বড় বড় সাইজের হরেক রকম পাথর দেখতে পাবেন। এটাকেই গিরিপথের শেষ বলা যায়। এখান থেকে আরো ভিতরে যাওয়া খুবই দুষ্কর। কিন্তু পাথরের জায়গা টার বামের পাহাড়ে আশাপাশের লতাপাতা বেয়ে উঠার চেষ্টা করবেন। পাহাড়ের ওপারে সরু নিচে নেমে যাওয়া কিছু খাদ দেখতে পাবেন। গিরিপথে ৩/৪ টা ছোট ছোট গুহা দেখতে পাবেন। ভুলেও লাইট বা লাঠি/বাশ দিয়ে গুঁতাগুঁতি করবেন না। সাপ কিংবা অন্যকিছুর বিপদ ঘটা অস্বাভাবিক কিছু না।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ সারা বছর চালন্দা গিরিপথে যাওয়া যাই, কারণ গিরিপথ এবং ঝিরিপথ উভয়ে যেকোন সময় গেলে পানি পাবেন। কিন্তু বর্ষা না যাওয়া ভাল কারণ তখন পানি অনেক বেড়ে যায় এবং গিরিপথের মাঝে লুকিয়ে থাকা গর্তগুলো পানি উচ্চতা গলা পর্যন্ত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত যাওয়া অসম্বব হয়ে পড়ে।
নোটঃ
*খুব হালকা একটা ব্যাগ পিঠে ঝুলায় নিবেন। হ্যাঁ যদি খুব বেশি কিছু নিতে না চান থাহলে ঝুপড়ির কোন এক দোকানে ব্যাগ গুলো জমা দিয়ে যান।
*হয় খালি পায়ে না হয় ভাল গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
*একটু লবন আর একটা দুটো ওয়ান্টাইম ব্যান্ডেজ সাথে রাখবেন।
*গিরিপথে আগে গিয়েছে এমন কাওকে অবশ্যই নিয়ে যাবেন।
হোটেল-মোটেলঃ যেহেতু ২-৩ ঘন্টার ট্রেকিং সুতারাং থাকার প্রয়োজন পড়বে না। যদি নিত্যন্ত থাকার প্রয়োজন হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাশে হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ডসহ আশে পাশে বেশ কিছু অবাসিক হোটেল পাবেন।
খাওয়া-দাওয়া ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশব্বিদ্যালয়ের কলা ঝুপড়ি বিখ্যাত ডাল সহ শুটকি ভর্তা, টেমেটু ভর্তা, আর হালকা মাছ সবজি অথবা মাংসা দিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। আর যদি তার থেকে কম টাকায় খেতে চান কষ্ট করে শাহজালাল হল গিয়ে ডাল ভাতে খেয়ে নিতে পারেন খুব আল্প টাকায়।
কিভাবে যাবেনঃ চট্টগ্রামের বটতলী ষ্টেশন/ষোলশহর ষ্টেশন হতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর ট্রেন ধরুন। বিনা পয়সায় ফ্রি মিউজিক ( শাটলের ছাত্রদের কর্তৃক গাওয়া) শুনতে শুনতে পৌঁছে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় ষ্টেশন হতে অল্প পায়ে হেঁটে চলে যান জিরো পয়েন্টে। জিরো পয়েন্ট হতে টমটম করে চাকসু/কলার ঝুপড়ি নামুন ভাড়া ৬/-। ঝুপড়ি হতে ৬/৮ মিনিট হাঁটার পরই পাবেন পানির ছড়া। পানির ছড়া (মিঠেছড়া) ধরে সোজা হাঁটতে থাকুন গিরিপথের মুখ দেখতে পাবেন।
ঝামেলা বাজাবে ৩টা Y পথ।
১ম Y পথে : ডানদিকে যাবেন
২য় Y পথে : বামদিকে ”
৩য় Y পথে : বামদিকে “
এই জায়গাটার নাম শুনসি অনেক। যাওয়ার ইচ্ছে আছে ?