ব্রণ কেন হয়? ব্রণ দূর করার সহজ উপায়
সুন্দর এবং উজ্জ্বল ত্বক সকলেরই কাম্য। কিন্তু ব্রণ হলে ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকের উজ্জ্বলতাও কমে যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রণ কেন হয়? ব্রণ দূর করার উপায় কী?
ব্রণের সমস্যায় কম বেশি প্রায় সবাই ভুগে থাকে। অনেকেই ব্রণ দূর করার জন্য বাজারের ক্রীম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বাজারের ক্রীমগুলো আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে। তাই বলে কি ব্রণ দূর করতে পারব না?
অবশ্যই পরবেন। আপনি ঘরে বসেই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে আপনার ব্রণ দূর করতে পারবেন। তাছাড়া, প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে প্রথমে ব্রণ কেন হয় সেই কারণ সনাক্ত করতে হবে। তারপর ব্রণ দূর করার জন্য প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করতে হবে। তাহলে, চলুন জেনে আসি ব্রণ কেন হয় এবং ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে।
ব্রণ হওয়ার ৪ টি কারণ
ব্রণ হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। ব্রণ হওয়ার কারণগুলো জানা থাকলে ব্রণের চিকিৎসা সহজে করা যায়। তাছাড়া যে যে কারণে ব্রণ হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকলেই ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
১. অপরিষ্কার ত্বক
ব্রণ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অপরিষ্কার ত্বক। অপরিষ্কার এবং তৈলাক্ত ত্বকে সহজেই ব্রণ হতে পারে। কারণ, ত্বকে ময়লা থাকলে আমাদের ত্বকে যে ছিদ্র আছে তা বন্ধ হয়ে যায়।
ব্রণ থেকে বাঁচতে হলে দূষণ, ময়লা, মেকআপ এবং অন্যান্য টক্সিন থেকে নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখুন। বিশেষ করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে উঠে ফেশওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার অভ্যাস করুন।
২. অতিরিক্ত জাঙ্কফুড গ্রহণ
আমাদের খাদ্যাভ্যাসেরর ফলেও ব্রণ হয়ে থাকে। বিশেষ করে আমরা যখন অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাই তখন ব্রণ হতে পারে। বেশি জাঙ্ক ফুড খেলে হজমে সমস্যা হয়। বদহজমের ফলে ব্রণের উৎপাত হয়। তাই, চিজি পিজ্জা, মাংসের বার্গার বা পকোড়া, সিঙাড়া, ভাজাভুজি, মিষ্টি, ক্যাডবেরি, কোল্ড ড্রিংকসের মতো জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকুন।
৩. অতিরিক্ত টেনশন করা
অপরিষ্কার তৈলাক্ত ত্বক, খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও অতিরিক্ত টেনশন থেকেও ব্রণ হয়ে থাকে। টেনশন করলে ঘুম কম হয়। আর কম ঘুমের কারণে হরমোন ব্যালান্স ঠিক থাকে না। দেহে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয় না। ফলে ব্রণ হয়।
তাই প্রতিদিন ৬-৭ ঘুমানোর চেষ্টা করুন। নিজেকে যতটা সম্ভব চিন্তা মুক্ত রাখুন।
৪. মেকআপ প্রোডাক্ট
আপনার ব্যবহৃত মেকআপ যদি আপনার ত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী না হয় তাহলেও ব্রণ হতে পারে। তাই ত্বকের প্রকৃতি অনুযায়ী মেকআপ ব্যবহার করুন। রাতে ঘুমানোর আগে মেকআপ ভালোভাবে পরিষ্কার করে ঘুমান। উপরে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও অতিরিক্ত ঘাম, হরমোনের পরিবর্রতনের ফলে ব্রণ হয়ে থাকে। ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে হলে ব্রণ হওয়ার কারণগুলো থেকে দূরে থাকুন। এটাই ব্রণ প্রতিরোধের সহজ উপায়। এখন যদি ব্রণ হয়েই যায় তাহলে ব্রণ দূর করার উপায় কী? চলুন তাহলে জেনে আসি ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে।
ব্রণ দূর করার ৩ টি প্রাকৃতিক উপায়
সুন্দর ত্বকের জন্য ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে সবাই চায়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্রন দূর করার জন্য চেষ্টা করে অনেকেই ক্লান্ত। এখন থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণ দূর করার চেষ্টা করুন।
১. গোলাপজল ও চন্দন
চন্দনের গুঁড়া আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী হয়ে থাকে। চন্দন দিয়ে ব্রণ দূর করতে হল প্রথমেই একটি পরিষ্কার পাত্রে এক টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়া নিন।
তারপর প্রয়োজন মতো গোলাপজল দিয়ে চন্দনের গুঁড়া আর গোলাপজল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এবার আপনার ত্বক দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। তারপর পরিষ্কার ত্বকে চন্দন আর গোলাপজলের পেষ্টটি লাগিয়ে নিন। এবার মুখে লাগানো পেষ্টটি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
মুখে লাগানো পেষ্টটি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে ব্রণ মুক্ত।
২. কাঁচা হলুদ ও টকদই
কাঁচা হলুদ ও টকদই আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী। কাঁচা হলুন ত্বকের ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতাকেও বাড়িয়ে তুলে।
প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্রে হাফ টেবিল চামচ কাঁচা হলুদের পেষ্ট নিন। কাঁচা হলুদ না থাকলে গুড়া হলোদ নিয়েও করতে পারেন।তবে কাঁচা হলুদ দিয়ে করলে বেশি ভালো হবে।
হলুদের পেস্টের সাথে ২ টেবিল চামচ নিন। এবার হলুদ আর টকদই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার হলুদ আর দইয়ের পেস্টটি আপনার পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে নিন।
মিশ্রণটি মুখে লাগানোর পর ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে হলুদ আর টকদই
এর মিশ্রণটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলে আপনি পাবেন উজ্জ্বল ও ব্রণমুক্ত ত্বক। তবে এই মাস্কটি শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশি ভালো হয়।
৩. লেবু ও মধু
লেবুর রস আর মধু আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। লেবুর রসে থাকা ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের মৃতকোষ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে।
একইভাবে, মধুও আমাদের ত্বকে মৃতকোষকে জীবিত করে ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধি করে। তাহলে চলুন জেনে নেই মধু আর লেবুর রসের ফেস প্যাক কিভাবে তৈরি করতে হবে।
একটি পরিষ্কার পাত্রে ২ টেবিল চামচ খাটি মধু নিন। মধুর সাথে একটি লেবুর রস বের করে নিন। এবার লেবুর রস আর মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এখন আপনার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। পরিষ্কার ত্বকে লেবু আর মধুর মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ৩ দিন এভাবে ব্যবহার করুন। আপনার ত্বকের পরিবর্রতন আপনিই লক্ষ্য করুন।
ব্রণ মুক্ত সুন্দর ও সুস্থ্য ত্বক পেতে হলে যে কারণগুলোর জন্য ব্রণ হয় সে গুলো থেকে বিরত থাকুন। ব্রণ হয়ে গেলে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিকারের চেষ্টা করুন। ত্বকে বাজারের ক্রীম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। কারণ বাজারের ক্রীম আপনার ত্বকের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করবে।
সুস্থ্য ত্বকের জন্য প্রতিদিন ১.৫ থেকে ২ লিটার পানি পান করুন। নিয়মিত ঘুমানো আর টেনশন মুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন। উপরের দেওয়া ব্রণ দূর করার উপায়গুলো অনুসরণ করতে চেষ্টা করুন। সর্বোপরি, আপনার ত্বকে খুব বেশি ব্রণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ধন্যবাদ এই হেল্পফুল পোস্টটির জন্য। আমি ২০১২ সাল থেকে হরমোনাল এবং পরবর্তীতে ‘Acne Vulgaris’ -এ আক্রান্ত সেক্ষেত্রে এই পোস্টে বর্ণিত কারণ গুলো ছাড়াও আরো নানা কারণ জড়িত এর সাথে। শুধু ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলেই নয় সাথে প্রোপার ময়েশ্চারাইজারও প্রয়োজন। স্কিন কেয়ার এখন অনেক ডেভেলপট, সেক্ষেত্রে স্কিন কেয়ারে স্যালিসিলিক এসিড, নিয়াসিনামাইড এইসব উপাদান থাকা আবশ্যক (অবশ্য ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করা জরুরী) আরেকটি ইম্পরট্যান্ট বিষয় সান প্রোটেকশন। শীত, বর্ষা কিংবা গ্রীষ্ম – যে ঋতুই হোক না কেনো সানস্কীন লাগানো জরুরী। আর এখানে যে বলা হয়েছে লেবু আর মধুর ব্যবহার। লেবু মুখের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর, এটি অ্যাসিটিক ন্যাচার হওয়ার কারণে মুখের ত্বককে অনেক সেনসিটিভ করে ফেলে, মুখে হাইপারপিগমেনটেশন দেখা দেয়, PH ব্যালেন্স নষ্ট হয়। তাই বলছি মুখে যেকোনো কিছু ব্যবহারে সাবধান হোন, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।