সবার জন্য ব্রণ সমস্যার সমাধান

আমাদের ত্বকের সমস্যার একটি পরিচিত নাম হচ্ছে ব্রণ। ব্রণের সমস্যা আমাদের কম বেশি সবার থাকে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের গরমে যেন এই সমস্যা আরও বাড়তে শুরু করে। ব্রণের দাগ ও থেকে যায় অনেদিন দিন।  বয়সন্ধিকালীন কিশোর কিশোরীদের ব্রণ এবং ব্রণের দাগ পরিচিত একটা সমস্যা। কিন্তু  অনেকেই ভেবেই উপায় পান না কিভাবে এই ব্রনের সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে! 

অনেকেই আছেন না বুঝে, না জেনে বাজারের বিভিন্ন পণ্যের উপর নির্ভর করা শুরু করে। যার ফলাফল হিসাবে ত্বকের ক্ষতি, ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া সহ নানা রকম সমস্যা দেখা যায়। দিনশেষে ডাক্তারের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক কিছু উপাদান ব্যবহার করে ঘরে বসেই কিন্তু আমাদের এই ব্রণের সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব। সেটি যেকোন বয়স কিংবা যে কোন ত্বকের জন্য।

তবে কোন প্রোড্রাক্ট ব্যবহার করার ফলে যদি ইতিমধ্যে ত্বকে ক্ষতি হয়ে যায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলবো। 

আগেই বলেছি কিশোর কিশোরীদের ব্রণের  সমস্যা বেশি হয় কারন এই সময় আমাদের শরীরের বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন হয়। এছাড়া অন্যান্যদের ব্রণের সমস্যা হওয়ার  কারন মূলত বাহিরের ধুলাবালি,দূষন, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খাওয়া। 

আসুন প্রথমেই জেনে নেই আমাদের প্রতিদিনের যে সকল অভ্যাস পরিবর্তন করে আমরা ব্রণের সমস্যা কিছুটা হয়লেও প্রতিরোধ করতে পারবো- 

  • কখনো মুখ অপরিষ্কার রাখা যাবে না। মুখ পরিষ্কারের জন্য শুধুমাত্র পানি ব্যবহার না করে ভালো ফেসওয়াস ব্যবহার করা। যেগুলো ত্বকের ক্ষতিকর পদার্থ দূর করতে সাহায্য করবে। 
  • শরীরের জন্য পযাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতিদিন ৮ লিটার পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য বাধ্যতামূলক। পানি আমাদের শরীরের বর্জ্য বের করতে সাহায্য করে। শরীরের অতিরিক্ত পানি ঘামগ্রন্থি দিয়ে বর্জ্য সহ বের হয়ে আসে। তাই পানি না খেলে মুখ, গলা ও বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ব্রণের উৎপাদন হয়। 
  • ব্রণ যে স্থানে হয় সেখানে হাত দেওয়া কিংবা নখ লাগানো যাবে না। এতে করে ব্রণের মাঝে যেই জীবাণু থাকে সেগুলো হাত ও নখের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এতে করে ব্রনের মাত্রা গাণিতিক হারে বাড়তে শুরু করে। 
  • মুখে খুব বেশি প্রোড্রাক্ট ব্যবহার না করা। বিশেষ করে দিন শেষে সম্পূর্ন মুখ ডাবল ক্লিঞ্জিং এর মাধ্যমে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। 
  • শরীরের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ঘুমের কোন বিকল্প নেই। এই ঘুম কম হওয়ার কারণে আমাদের ত্বকের সমস্যা গুলো আরও বেশি দেখা যায়। প্রধান সমস্যা হলো ব্রণ। তাই ২৪ ঘন্টার মাঝে কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। 

শরীর সুস্থ রাখতে এবং ত্বকের সতেজ রাখার জন্য খাবারের বিকল্প নেই। ফাস্ট ফুড, কিংবা তেলে ভাজা যেমন শরীরের ক্ষতি করে তেমনি ত্বককে নিষ্প্রাণ করে দিতে পারে। ঠিক তেমনি এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে পারে অনেকদিন। যাদের চল্লিশ কিংবা পয়তাল্লিশ বয়সেও কিশোরীর মতো ত্বক দেখতে পাই তার পিছনের রহস্য কিন্তু ব্যালেন্স ডায়েট। 

এমন কিছু খাদ্য সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেই যেগুলো আমাদের ত্বকের ব্রণের হাত থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে। 

Ο গ্রীন ট্রি 

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অনেক পুষ্টিবিদ চা কিংবা কফির বদলে গ্রীন ট্রি খেতে বলেন। এর পিছনে কারন হলো গ্রীন ট্রির মাঝে অতিরিক্ত কোন ফ্যাট নেই। যেটি আমাদের শরীরের মাঝে অতিরিক্ত মেদ জন্মাতে দেয় না। 

গ্রীন ট্রি আর একটি ভালো দিক হলো আমাদের শরীরের টক্সিন নামক ক্ষতিকর পর্দাথ দূর করতে সাহায্য করে এবং আমাদের দেহের মাঝে ব্রনের উৎপাদনকারি ব্যাক্টেরিয়াকে ধংস করে। 

তাই যাদের চা কিংবা কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে। তার সেটি পরিবর্তন করে গ্রীন ট্রি শুরু করে দিন। এতে করে শরীরের সুস্থতা বজায় থাকবে সাথে ব্রণ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

Ο বদলে ফেলতে পারেন রান্নার তেল 

আমরা প্রধানত সয়াবিল তেল কিংবা সরিষার তেল দিয়ে রান্না করে থাকি। কিন্তু এই দুইটি তেল কিন্তু আমাদের ত্বকের জন্য ভালো নয়। এর পরিবর্তে যদি অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারে এটি যেমন আপনার শরীরের জন্য ভালো তেমনি ত্বকের জন্য। অলিভ ওয়েল আমাদের শরীরের ইমিউনিটি শক্তিকে বাড়িয়ে দেয় এবং তার সাথে সাথে খাদ্য হজম করতে ও সহায়তা করে। তাই আপনার রান্নার ঘরে অলিভ অয়েল খুব সহজে জায়গা করে নিতে পারবে ।

Ο কাঁচা শাকসবজি 

আমাদের ত্বকের জন্য কাঁচা শাকসবজির উপকারিতা সম্পর্কে আসলে নতুন করে কিছু বলার নেই। অন্যান্য খাদ্যের তুলনায় এদের মাঝে ভিটামিন, মিনারেল এবং খনিজ উপাদানের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক বেশি থাকে। তাই ত্বকের সুস্থতার জন্য শর্করার চেয়ে এইগুলো খাওয়া উচিত বেশি পরিমাণ। 

এই শাক সবজির মাঝে কিছু সবজিকে আলাদা করেই বলা যায় তারা আমাদের ত্বকের জন্য কতটা উপকারি। 

  • টমেটো 

টমেটো মাঝে বিদ্যমান ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের সতেজতার জন্য প্রধান উপাদান গুলোর মাঝে একটি। ত্বকের ব্রণের জন্য যে সকল ক্ষতিকর দাগ আছে সেগুলো নিরাময় করতেও ট্মেটোর তুলনা নেই। তাই টমেটোর মৌসুমে টমেটো খেতে কখনো দুবার ভাববেন না। 

  • শসা

শসার মাঝে পুষ্টি ভরপুর । এতে আছে ভিটামিন ই, সি, বি এবং অ্যামাইনো এসিড। এটি আমাদের ত্বককে যেমন উজ্জ্বল করে তেমনি ব্রণ তৈরি করার জন্য যেসকল ব্যাকটেরিয়া আছে তাদের প্রতিরোধ করতে পারে। ডায়টের সময় কম খরচে শরীরের পুষ্টির যোগান দিতেও শসা কিন্তু এগিয়ে থাকে।

  • কাঁচা রসুন

প্রেসারের রুগীদের অনেক ডাক্তার ভাতের সাথে কাঁচা রসুন খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারন রসুনে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া উপাদান আছে যেগুলো আমাদের দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করতে পারে। এতে কিন্তু অন্যান্য সমস্যার সমাধানের সাথে সাথে ব্রনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আজ থেকেই খাবারের সাথে একটি বা দুইটি রসুশের কোয়া খেতেই পারেন। 

আসুন দেখে ফেলি ব্রণ হওয়ার পর কি কি উপায়ে তার থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে।

♥ বরফের ব্যবহার

এক টুকরো বরফ নিয়ে পরিষ্কার কাপড়ে পেছিয়ে ব্রণের স্থানে ধরে থাকুন কিছুক্ষন এতে করে। ব্রণের আকৃতি কমে যায় খুব তাড়াতাড়ি 

♥ লেবুর রস 

কিছুটা পরিমাণ লেবুর রস নিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে রাখুন । সারারাত রাখতে পারলে ভালো ফল পাবেন। 

♥ গরম ভাপ এবং ব্রন স্টিক

সম্পূর্ণ মুখে যদি আমরা গরম ভাপ নেই তবে আমাদের মুখের ছিদ্র গুলো বড় হতে শুরু করবে এবং এর পরপর যদি ব্রণ স্টিক ব্যবহার করে ব্রণের মাঝে সাল বের করে ফেলতে পারি তবে আমাদের ব্রণ খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে এবং ব্রণে কোন দাগ ও হবে না।  

সতর্কতা

ব্রণ স্টিক ব্যবহার করার আগে এবং পরে জীবানুমুক্ত করে নেওয়া উচিত। এবং একবার ব্যবহার করার পর আবার ব্যবহার করার সময় ও জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ফেলা উচিত। এতে করে একটা ব্রণের জীবাণু অন্য একটিতে প্রবেশ করবে না। অবশ্যই মুখ পরিষ্কার করার পর ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।  এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। 

ব্রনের দাগ দূর করবে যেই প্যাক 

  • মসুরের ডালের পেস্ট
  • মুলতানি   
  • মধু 

ব্যবহার-

নিজের প্রয়োজন মতো সব গুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন এবং সম্পুর্ণ মুখে ব্যবহার করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে  ব্রণের দীর্ঘদিনের দাগ ও হালকা হয়ে যাওয়া শুরু করবে ।

মুলতানি মাটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল কন্ট্রোল করে। মুখের ময়লা জমতে দেয় না। অন্যদিকে মুধ মুখে খুব বেশি শুষ্কতা হয়তে দেয় না। মসুরের ডাল ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে পারে খুব তাড়াতাড়ি ।

নিয়মিত সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন করে যদি প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন । আপনার ত্বকের দাগের সমস্যা দূর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।

ত্বক ভালো রাখার প্রধান শর্ত হলো সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তাই নিজেকে ভালোবেসে নিজের যত্ন নিন । 

Similar Posts