ল্যাপটপের যত্ন নেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি বিনা একটি দিনের কথাও কল্পনার ভেতরে আনা মুশকিল। আর তথ্যপ্রযুক্তির মূল হাতিয়ার হচ্ছে কম্পিউটার ৷ আর সবচেয়ে বেশী ব্যাবহৃত কম্পিউটারটি হচ্ছে ল্যাপটপ কম্পিউটার। যত দিন যাচ্ছে তত কম্পিউটারের আকার কমে আসছে। এখনতো প্রায় মানুষের হাতের মুঠোতে কম্পিউটার । বলতে গেলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় ল্যাপটপ কম্পিউটার। হিসাব নিকাশ, ইন্টারনেট,লিখালিখি,বিনোদন সব জায়গাতেই ব্যাবহৃত হচ্ছে ল্যাপটপ কম্পিউটার। আর তাই ল্যাপটপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান ইলেকট্রনিক ডিভাইস।

আপনার ল্যাপটপ  কম্পিউটারের যত্ন নেওয়ার কতগুলো বেসিক টিপস  নিচে দেওয়া হল:

১. আপনার কম্পিউটারের প্যাডেড সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

প্যাডেড সুরক্ষা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ করে ল্যাপটপ পড়ে গেলে অথবা আছাড় খেলে তাৎক্ষনিক স্ক্রাচ পড়ার হাত থেকে রক্ষা করবে। তার পাশাপাশি ভেতরের হার্ডওয়ার গুলো ঠিক রাখবে। সুতরাং নরম কোন আবরণী দিয়ে আপনার ল্যাপটপটি কে সযত্নে বহন করুন।

২.ল্যাপটপের যত্ন অনেকাংশে নির্ভর করে ল্যাপটপের ব্যাটারির যত্নের উপর।

ল্যাপটপ সম্পূর্ণ চার্জ না হওয়া পর্যন্ত চার্জার আনপ্লাগ করা উচিত নয়। সম্ভব হলে ৮ থেকে ১০ঘন্টা অন্তর অন্তর অন্তর ল্যাপটপ চার্জ দেওয়া যেতে পারে। তবে ঘন ঘন ল্যাপটপ চার্জ দিলে প্রায় ১ বছরের মাথাতেই ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৩.হার্ডওয়ারের যত্ন দেওয়ার পাশাপাশি সফটওয়্যার এর যত্ন নেওয়া আবশ্যক। নিয়মিত অ্যান্টিভাইরাস আপডেট বা হালনাগাদ করতে হবে। ল্যাপটপের সকল ধরনের গোপনীয়তা সুরক্ষিত করতে শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

৪.ডেক্সটপ অথবা ল্যাপটপ উভয় কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দ্রুত কম্পিউটার গরম হয়ে যাওয়া। দ্রুত কম্পিউটার গরম হয়ে গেলে ঘনঘন কম্পিউটার হ্যাং হয়, এটি সাধারণত হয় যখন ল্যাপটপের অভ্যন্তরীণ কোন হার্ডওয়ারের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে ল্যাপটপের কুলিং ফ্যান ঠিকঠাক মত কাজ না করে, তাহলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। সুতরাং আপনার কম্পিউটারটি তিন মাস অন্তর অন্তর নিকটস্থ কোন সার্ভিসিং সেন্টার থেকে চেক করে আনুন।

৫.ল্যাপটপ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ক্ষেত্রে বেশ যত্নবান হতে হবে। মনিটর এবং ল্যাপটপের উপরের অংশ কোমল সুতি কাপড় দিয়ে মুছে যেতে পারে। যদি ল্যাপটপের কিবোর্ড এর ভেতরে ধুলাবালি জমে তাহলে সেগুলো কটন বাড দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এলইডি মনিটরের ক্ষেত্রে পানির সংস্পর্শে না আসাই ভাল।

৬.ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময় ঘরে আলো-বাতাস ঢোকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। এয়ারকন্ডিশন অথবা ফ্যানের-ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। কখনোই ল্যাপটপটি কে চাদর কম্বল অথবা লেপের ওপর চালানো উচিত নয়।

৭.বেশিক্ষণ ধরে ল্যাপটপে কাজ করাটা মোটেও ঠিক নয়। এটি যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তেমনি ল্যাপটপের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই প্রতি ১.৫ থেকে ২ ঘন্টা কাজ করার পর কমপক্ষে ১ ঘন্টা বিরতি দিতে হবে।

৮.সাধারণ ট্রাবলশুটিং সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ল্যাপটপ কেনার পর ল্যাপটপের সাধারণ ট্রাবলশুটিং সম্পর্কে ধারণা থাকলে ল্যাপটপে কোন ধরনের গোলযোগ দেখা দিলে তা সাথে সাথেই ঠিক করা যায়।

৯.নিয়মিত কম্পিউটার চার্জারে অথবা কম্পিউটারের ভেতরের কোন যন্ত্রাংশ ত্রুটি রয়েছে কিনা সেটি দেখতে হবে। মাঝেমধ্যে মাদারবোর্ডের ক্যাপাসিটরে কোন ধরনের ত্রুটি হয়েছে কিনা সেটি খেয়াল করতে হবে। যদি এমন ধরনের কোনো ত্রুটি চোখে পড়ে তাহলে সাথে সাথে ক্যাপাসিটর টি ভালো করে সার্ভিসিং করতে হবে।

১০.অনেকেই ০% চার্জেও ল্যাপটপ খুলে রেখে কাজ করেন। এটি ব্যাটারির উপর চাপ ফেলে৷ ফলে পরবর্তী তে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়৷ যেমন চার্জ হয় খুব ধীরে৷ অনেক সময় ৪০-৫০% চার্জ রয়েছে, কিন্তু হুট করে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেল৷ আমি আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলছি৷ সুতরাং মাত্র কয়েক পার্সেন্ট চার্জ রেখে চার্জে দিয়ে আবার কম্পিউটার চালানো উচিৎ নয়।

১১.চার্জারের আম্পিয়ার মেইনটেইন করাটা খুবই জরুরী। তা না হলে এটা কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে। অনেক সময় কম্পিউটার কার্যক্ষমতা হারিয়ে। ল্যাপটপটি ঠিক যত আম্পিয়ারে চার্জ হয় ততো আম্পিয়ারের ফিউজ ব্যাবহার করতে হবে।

কম্পিউটার খুবই মূল্যবান একটি যন্ত্র। সুতরাং এটির যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করে ঠিকঠাকমতো কম্পিউটারের যত্ন নেওয়া যায়, তাহলে বলা বাহুল্য আপনার কম্পিউটারটি অনেক দিন টিকবে!

Similar Posts

One Comment

Comments are closed.