চুলের যত্নে মেথির জাদুর ছোঁয়া।
বর্তমানে আমাদের নানা সমস্যার ভিড়ে পরিচিত একটা সমস্যা হল চুলের সমস্যা। পরিবেশের ধুলাবালি আর বিষাক্ত গ্যাসে যেমন ফুসফুসের ক্ষতি করছে তেমনি মাথার চুলের ও ভয়াবহ ক্ষতি করে দিচ্ছে। এমন হয়ে যাচ্ছে যে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা ছাড়া বাহিরে বের হওয়া মোটামুটি অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।আরও ক্ষতিকর দিক হচ্ছে মাথা অতিরিক্ত চুল পড়া। সাধারণত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির প্রতি ২৪ঘন্টায় ১০০ চুল পড়া স্বাভাবিক কিন্তু বেশি চুল পড়া অবশ্যই চিন্তার কারণ।
আদিকাল থেকেই চুলের প্রতি মানুষের একটা আলাদা আকর্ষণ কাজ করে। কীভাবে চুলকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করা যায় তার প্রচেষ্টা। আমারা নাটক সিনেমা বা কবি, লেখদের চোখে নায়িকাদের বর্ণনায় দেখতে পারি সুন্দর লম্বা চুলই ছিল তাদের রূপের রহস্য। এছাড়াও সভ্যতার শুরু থেকেই মেহেদী রাঙ্গানো চুলের সবসময় কদর ছিল।
মুসলিম সমাজেও চুল-চর্চার নজির ছিল বেশ।অন্যদিকে বাঙ্গালীদের কেশ-চর্চার ইতিহাস পর্যালোচনার করলে দেখা যায় তাদের শিরোভূষণ ছিল সুন্দর লম্বা ও আকর্ষণীয় চুল। চুল নারী-পুরুষ উভয়ের এক প্রকার অব-সেশন। কিন্তু এতো কিছুর পরেও চুলের নানা সমস্যা তো থেকেই যায়। তাই নিয়মিত চুলের যত্ন করা চাই। তেল যেমন চুলের একটি প্রধান খাদ্য তেমনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান চুলের আলাদা আলাদা পুষ্টি যোগায়।
তেমনি একটি প্রাকৃতিক উপাদান মেথি নিয়ে আজকের আলোচনা।
তেলে ও মেথির গুনের মিশ্রণ:
আপনার জন্য যেই তেলটি উপযুক্ত বিশেষ করে খাঁটি নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। তেলের একতৃতীয়াংশ মেথি দানা নিন। ডাবল-বয়লিং প্রদ্ধতির সাহায্য তেল গরম করুন যতক্ষণ পর্যন্ত মেথি দানা লালচে হয়ে না আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত চুলার অপর রেখে দিন । মেথি দানায় কাঙ্ক্ষিত রঙ চলে আসলে আপনার তেল তৈরি। তেল ঠাণ্ডা করে বোতলে সংরক্ষণ করুণ। এই তেলটি সপ্তাহে ৩দিন লাগানোর চেষ্টা করবেন।
বিঃদ্র কখনো ময়লা চুলে তেল দিবেন না। এতে করে চুলের ময়লা গুলো চুলের সাথে লেগে যায় এবং ক্ষতির পরিমাণ বেশি দেখা যায়।
টক দই এবং মেথির প্যাক:
মেথি ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় মেথি বেঁটে ব্যবহার করা। আপনার চুলের জন্য যে পরিমাণ মেথি প্রয়োজন তার থেকে হাফ চা-চামচ কম পরিমাণে মেথি রাতে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। পরেরদিন দেখবেন ভেজা মেথি ফুলে দিগুণ হয়ে গিয়েছে। এই ভেজা মেথি গুলো বেঁটে নিন সাথে আপনার চুলের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী টক দই নিন মিশ্রণটি ভালো করে মিক্স করে ১ঘন্টা জন্য রেখে দিন।
এর মাঝে যদি আগের রাতে মাথায় তেল মালিশ করতে না পারেন এই সময়ে এই কাজটি করে ফেলতে পারেন। সবচেয়ে ভালো উপকার যদি তেল হালকা গরম করে মাথায় লাগাতে পারেন। এতে যে উপকার গুলো হবে
– মাথায় রক্তসঞ্চালন বেড়ে যাবে
– তেলের সম্পূর্ণ গুনাগুণ চুলে পুষ্টি যোগাবে।
এরপর আপনার তৈরি করা প্যাকটি চুলের গোরা থেকে আগা পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে নিন।
আরও ভালো ফলাফলের জন্য সহনীয় মাত্রায় একটি কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে মাথায় মুড়িয়ে রাখুন। এটি ষ্টীমের কাজ করবে। এতে করে তেল এবং প্যাকের পুষ্টি গুনাগুণ আপনার চুলের গোঁড়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পাবে।
এটি সম্ভব না হলে মাথায় প্যাক লাগানোর পর সওয়ার ক্যাপ অথবা পলি ব্যবহার করতে পারেন। প্রত্যেক প্যাকের জন্য এটি উপকারী। যা প্যাকের পুষ্টি গুনাগুণ রিজার্ভ করতে সাহায্য করে।
বাড়তি সতকর্তাঃ
– অবশ্যই প্যাকটি লাগাতে হবে পরিষ্কার চুলে
– সব কিছুই ব্যবহার করার আগে টেস্ট করে নেওয়া উচিত প্রোডাক্টতে আপনার এলার্জি আছে কিনা!
– অবশ্য চুলের ক্ষতি করে না এমন মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত।
প্যাকটির উপকার:
আমাদের শরীরের জন্য যেমন পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন তেমনি আমাদের চুলের জন্য ও পুষ্টির প্রয়োজন। এই পুষ্টির যোগানদাতা হল তেল।
-চুলের পুষ্টি জোগান
-স্বাস্থ্য-উজ্জ্বল রাখার কাজটা তেল করে থাকে।
সব কিছু তো বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয় সেই বাড়তি পুষ্টির জন্য চুলের প্যাক ব্যবহার।
অন্য উপকার গুলোর মাঝে আরও কিছু হলো-
– চুল পরা বন্ধ করবে।
– চুলের আগা ফাটার সমস্যা রোধ করবে।
– চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করবে।
– খুশকি দূর করবে।
– আর চুল স্বাস্থ্য-উজ্জ্বল তো হবেই।
এখন বলতে পারেন তেলের সাথেও মেথি দিবো আবার মেথির প্যাক ও এতো মেথি কেন ব্যবহার করবো!
আপনি হয়তো জানেন না মেথির মাঝে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং নিকোটিনিক এসিড যেটি আমাদের চুলে যেমন পুষ্টি যোগায় তেমনি চুলকে মজবুত করে।
চুলের বৃদ্ধি আর নতুন চুল গজাতে মেথির তো তুলনা নেই। কতশত ব্যবহার আছে মেথির তার সাথে যদি সরিষার দানা যোগ করে ফেলা যায় এই গুনের হাড়ি আরও ফুলে যায়।
হ্যাঁ, মেথির দানার মাঝে যেমন প্রোটিন, নিকোটিকিন আছে তেমনি আছে প্রচুর পরিমাণে লেসিথিন। লেসিথিন চুলের গোঁড়ায় পুষ্টি যোগায় চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আর সরিষা দানায় আছে ভিটামিন ‘এ’ যেটিও চুলের বৃদ্ধিতে অন্যতম উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে।
মেথি দানা ও সরিষার দানার প্যাক:
এক চা-চামচ মেথি দানা ও এক-চা চামচ সরিষার দানা পাউডার করে নিন অথবা বেঁটেও নিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আগে রাতেই পানি দিয়ে দানা গুলো ভিজিয়ে রাখতে হবে। মেথি ও সরিষা দানার মিশ্রণটি সহনীয় মাত্রার গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ঘন্টাখানেক। সেই পেস্টের সাথে আমন্ড অয়েল অথবা আপনার হেয়ার অয়েলটি মিক্স করে একটি প্যাক বানিয়ে ফেলুন। এবং চুলের গোঁড়ায় ভালো করে লাগিয়ে । ২ঘন্টার মতো রেখে দিন এই প্যাকটির জন্য ও গরম তোয়েল দিয়ে স্ট্রিম নিতে পারেন অথবা পলি দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে পারেন।
অবশ্যই শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ক্যামিক্যাল যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের না করার পরামর্শ দিবো । বাজারের নামিদামি ব্যান্ডের শ্যাম্পু গুলোর মাঝে যেই রাসায়নিক পদার্থ থাকে সেটি রেগুলার ব্যবহার আমাদের চুলের জন্য ক্ষতিকর।
এক্ষেত্রে শ্যাম্পুর সাথে সামান্য পরিমাণ পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন যাতে করে শ্যাম্পুতে রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ কমে যাবে। লিকুইড এর পরিমাণ হালকা হওয়ার কারণে চুল পরিষ্কার ও হয় ভালো।
বাড়তি সতকর্তাঃ
সবার ত্বক, চুল এবং শরীরের ধারণ ক্ষমতা এক নয়। সেক্ষেত্রে চুলের প্যাক সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত না। অন্য দিকে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন চুলের গোঁড়ায় তেল চুলের জন্য অনেক উপকারি । আবার সকলের জন্য সব পরামর্শ কার্যকর হবে না এটিই সত্য নয়। তাই আপনার জন্য উপযুক্ত যেটি সেটিই ব্যবহার করুণ।