কিছু মৃত খাবার কি আপনার বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে?
আমাদের অনেককেই প্রকৃত বয়সের তুলনায় বেশি বয়সের মনে হয়। এর জন্য আমরা স্ট্রেস আর টেনশনকেই দায়ী করি। কিন্তু কিছু খাবারের প্রভাবেও বয়স্ক দেখাতে পারে। চলুন সেই সব খাবারের সাথে পরিচিত হই, যা একটু বেশী পরিমানে খেলে চেহারায় অকালে বার্ধক্যের ছাপ দেখা দিতে পারে। হারিয়ে যেতে পারে ত্বকের তারুণ্য অকালেই। বয়সের থেকে বুড়ো লাগতে পারে অনেককেই !
১। ময়দা এবং চিনিঃ
খাবারের একটি উপকারী উপাদান হচ্ছে আঁশ যা অন্ত্র পরিষ্কার রাখে বলে সহজে পেটের ক্যান্সার হয় না। খাবার বেশী ঘষে-মেজে কিংবা রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে সাদা, মসৃণ ও উপাদেয় করা হলে আঁশ চলে যায়। এ রকম খাবারকে মৃত খাদ্য বলা হয়। ময়দা ও সাদা চিনি মৃত খাদ্য। এগুলো দিয়ে তৈরী খাবার না খাওয়াই ভাল। কারণ ময়দায় যেমন ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে, তেমনি চিনি আমাদের হাড় পর্যন্ত ক্ষয় করে।
মিষ্টি কিছু খেতে হলে চিনি ছাড়া অন্য কোন উৎসের সন্ধান করা যেতে পারে। যেমন গুড় কিংবা মধু অল্প পরিমাণে খাওয়া চলে। সবচেয়ে ভাল হচ্ছে মিষ্টি ফলমূল। চিনির তৈরী পানীয় দ্রব্যও খারাপ। বিশেষ করে কোলাজাতীয় পানীয়গুলো। সেইসাথে ময়দা, তেল, মাখন ইত্যাদি দিয়ে তৈরী নানারকম মজাদার খাবার যেমন পরোটা, পাঁউরুটি, বিস্কুট, চিপস, নুডলস, সেমাই, কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিস, চানাচুর, বার্গার ও বিভিন্ন ‘ফাস্ট ফুড’ খাওয়ার অভ্যাস মারাত্মক সব রোগ, যেমন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র বা ডায়াবেটিসের জন্ম দিচ্ছে। এশিয়ায় অল্পবয়েসীদের মধ্যে বহুমূত্র রোগের হার অনেক বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে শুধু এ কারণে।
২।অ্যালকোহল বা মদঃ
স্বাস্থ্য উজ্জ্বল ত্বক ও জীবনের রহস্য লুকিয়ে আছে সুস্থ লিভারে। বেশী মদ্যপানের প্রভাব মারাত্মক ভাবে পড়ে লিভারে। আর অসুস্থ লিভারের বহিঃপ্রকাশ ঘটে অ্যাকনে , চুল পড়া,রিঙ্কেল এবং নির্জীব ত্বকে।
৩।হোয়াইট ওয়াইনঃ
অতিরিক্ত পরিমানে হোয়াইট ওয়াইনেও বয়সের তুলনায় বেশী বয়স্ক দেখাতে পারে। হোয়াইট ওয়াইন দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দিয়ে দাঁতের ক্ষতি করে, ও হলদেটে ছোপ পড়ে যায়।
৪। খুব বেশী ঝাল খাবারঃ
অনেকের ত্বকেই লালচে বা কালচে ছোপ ছোপ দাগ থাকে। অতিরিক্ত ঝাল খাবার নিয়মিত খেলে এসব দাগ আরও স্পষ্ট করে তোলে।
৫।বেশী লবনঃ
তরকারীতে বেশী লবণ বা আলাদা করে লবণ খাওয়া ভাল নয়। অতিরিক্ত লবণ খেলে নানাবিধ সমস্যা হয় । আবার শরিরে জল জমতে থাকে , ফলে ফোলা ফোলা দেখা যায়।
৬।রেড মিটঃ
প্রাণীজ আমিষের জন্য মাছ, মুরগীর মাংস ও ডিমের শ্বেতাংশ ভাল। লাল মাংস অর্থাৎ গরু-খাসির মাংস উপাদেয় হলেও ক্ষতিকর চর্বি থাকায় তা অনেক ভয়াবহ রোগের উৎস।রেড মিট খেলে শরীরে ফ্রি র্যডিক্লস-এর মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে ত্বক স্বাভাবিক কোলাজেন তৈরি করতে পারে না এবং ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে থাকে।
৭।পোড়া মাংসঃ
কাবাব, বার্বিকিউ, গ্রিল করা মাংসের ওপরে কালো এবং একটা পোড়া অংশ থাকে। এই পোড়া মাংসে থাকে এমন কিছু হাইড্রোকার্বন যা আমাদের শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন বাড়ায়। একই সাথে এটি আমাদের ত্বকের কোলাজেন ভেঙে ফেলে। কাবাব খাওয়ার আগে পোড়া অংশটি ফেলে দিন। না হলে খুব দ্রুত যৌবন হারাতে পারেন।
৮। ক্যাফেইনঃ
অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের স্বাভাবিক ময়শ্চার নষ্ট করে দেয়। ফলে ত্বক শুস্ক হয়ে যায়, দেখতে মলিন ও বয়স্ক লাগে।
৯। মার্জারিনঃ
বাটার বা মাখনের এই জনপ্রিয় বিকল্পটি আপনার ত্বকের অনেক বেশী ক্ষতি করতে পারে। ২০০১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত মার্জারিন কম খান তাদের চেহারায় বলিরেখা অনেক দেরিতে পড়ে যারা নিয়মিত এটি গ্রহন করেন তাদের তুলনায়। সম্ভবত মার্জারিনে বিশেষ এক ধরণের ক্ষতিকর ফ্যাট থাকায় এ সমস্যাটি দেখা যায়।
১০।ধূমপানঃ
অখাদ্য খাওয়ার অভ্যাস না করলে কষ্ট করে সে অভ্যাস বাদও দিতে হয় না। ধূমপান ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের নেশার বেলায়ও এ কথা খাটে। অ্যালকোহল, সিগারেট বা কোনও নেশার দ্রব্য বর্জন করুন৷এটি খুব তাড়াতাড়ি চেহারায় বয়সের ছাপ ফেলে৷
***তারুণ্য ধরে রাখতে হলে অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত ওজন খুব দ্রুত মানুষকে বুড়িয়ে দেয়৷ এমনকী কমিয়ে দেয় আত্মবিশ্বাসও৷ নিয়মিত ব্যায়াম ও খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেললে যৌবন ধরে রাখা সম্ভব৷ তা বলে একেবারে খাওয়া বন্ধ করেল কিন্তু হিতে বিপরীত হবে৷ শরীরের যাবতীয় গ্ল্যামার শেষ হয়ে, আপনার চেহারায় নেমে আসবে অকাল বার্ধক্য!