বোবায় ধরা থেকে পরিত্রাণ পাবেন যেভাবে
‘বোবা ধরা’ এই শব্দ দুটি নিশ্চয়ই অনেক পরিচিত। আপনার আশেপাশের অনেককে বোবা ধরেছে এই কথা আপনি শুনেছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু এই বোবা ধরা কি আসলে? বোবা ধরলে কি হয়? বোবা কেনো ধরে? আর বোবা ধরলে কি করতে হয়? এসকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন আজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক বোবা ধরা জিনিসটা আসলে কি?
বোবা ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস হলো গভীর ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি একটি স্নায়ু জনিত সমস্যা। এক্ষেত্রে আপনার যেটা হবে, আপনার দ্রুত ঘুম ভেঙে যাবে এবং আপনি এমন একটা পরিস্থিতিতে থাকবেন যে আপনার মনে হবে আপনার বুকের উপর কোনো কিছু একটা চেপে বসে আছে ও আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিবে। এমনকি আপনার নিজেকে তখন শক্তিহীন মনে হবে কেননা আপনি কোনো শক্তিই অনুভূত করবেন না। হাত পা নাড়ানো এমনকি মুখ দিয়ে কথা বলার জন্য যে শক্তিটুকু লাগবে, সেটুকুও আপনি পাবেন না। আবার মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে গেলে আপনার মুখ থেকে গোঙানির মতো শব্দ বের হবে। দম আটকে আসতে চাবে এবং আপনার মনে হবে এই বুঝি আপনি মরে গেলেন। স্লিপ প্যারালাইসিস হলে খুব সম্ভবত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক/দু মিনিট এই অবস্থা স্থায়ী থাকবে, কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডই আপনার জন্য কয়েক ঘন্টার সফর হয়ে উঠতে পারে। যেটা খুবই বাজে অনুভূতি। এই অভিজ্ঞতাটাই স্লিপ প্যারালাইসিস যাকে প্রচলিত বাংলায় ‘বোবায় ধরা’ বা ‘বোবা জ্বীন ধরা’ বলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে বোবা ধরা আসলে সম্পূর্ন ইন্দ্রিয় ঘটিত একটি ব্যাপার। এই অবস্থায় ঘুমের মধ্যে শরীর এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায় প্রবেশ করে, তখনই আসলে এরকম ঘটনাটা ঘটে। তবে স্লিপ প্যারালাইসিস এর ক্ষেত্রে ক্ষেত্রবিশেষে একেকজন একেকরকম অনুভূতির শিকার হয়ে থাকেন। যেমন অনেকে দুর্গন্ধ পান, অনেকে বুকের উপর ছায়া জাতীয় কিছু জিনিস দেখেন, অনেকে ভৌতিক বা আধিভৌতিক কিছু দেখে থাকেন আবার অনেকে ভয়ানক কোনো প্রানীর আকৃতিও দেখে থাকতে পারেন। যাই দেখুক না কেন, মূল কথা হলো ঐ সময়ে হ্যালুসিনেশনের মতো একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়, যার কারণে মানুষ প্রচন্ড ভয় পায়। তখন তার সারা শরীর ঘেমে উঠে, উচ্চ রক্তচাপও হতে পারে।
তবে স্লিপ প্যারালাইসিসের “বোবা ধরা” নামটি এসেছে প্রাচীন বাংলার লোকাচারীয় কুসংস্কার থেকে। তখন বিশ্বাস করা হতো একটা প্রেতাত্মা বা ভূত ঘুমন্ত মানুষের উপর ভর করে তার বুকের উপর বসে থাকতো এবং সেই মানুষের নাক মুখ চেপে ধরে তাকে বোবা বানিয়ে দিত। তাই ঐ প্রেতাত্মাকে বোবা বলা হয়। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বোবা নামের ভূত বলে আদতে কিছুই নেই।
যে যে কারণে স্লিপ প্যারালাইসিস হয়-
*পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
*ভ্রমণের জন্য ঘুমের ঘাটতি হলে
*অসময়ে ঘুমালে
*নিয়মিত ধূমপান কিংবা মাদকাসক্ত হলে
*একেবারে সটান হয়ে ঘুমালে অর্থাৎ সোজা হয়ে শোয়ার সময় নাক ও পায়ের বুড়ো আঙুল এক সরল রেখায় হলে
*সক্রিয়তা বর্ধক ঘুমের ঔষধ সেবন করলে
*ঘুমের সময় পরিবর্তন করলে
*উপুড় হয়ে ঘুমালে
*কম ঘুমালে
*পরিবারের কারও স্লিপ প্যারালাইসিস থাকলে
*কোন ধরনের মেন্টাল ডিজঅর্ডার বা মানসিক সমস্যা থাকলে
স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার লক্ষণ-
*নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। মনে হবে বুকের মধ্যে কিছু চাপ দিয়ে আছে
*চোখ খুলতে ও চোখ নাড়াচাড়া করতেও সমস্যা হয়
*আশেপাশের ব্যাক্তিদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে যেতে পারে। তাদের তখন ক্ষতিকর বলে মনে হবে
*ভীষণ ভয় হয়, শরীর ঘেমে ভিজে যায়
*হৃৎস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়
আপনি যদি আপনার আশেপাশে কোনো ঘুমন্ত ব্যাক্তির মধ্যে এরকম কিছু কখনো দেখে থাকেন তাহলে আপনার প্রথম কাজই হবে তাকে হাত দিয়ে নাড়িয়ে জাগিয়ে তোলা। যদিও এই জিনিসটা কিছু সময় পর নিজে থেকেই চলে যাবে, তবুও তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলাই উত্তম।
বোবা ধরা এড়াতে-
*রাতে অন্তত ৬-৮ ঘন্টা গভীর ঘুম দেওয়া ( ঘুম গাঢ় হলে ভূত প্রেত টের পাওয়া তো দূরের কথা, আপনি কোন দুনিয়ায় আছেন সেটাই জানতে পারবেন না)
*নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন তৈরি করা
*আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমানো
*ঘুমানোর পূর্বে ভারী খাবার এবং ধূমপান, মদ্যপান এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকা
*ঘুমানোর অন্তত চার ঘন্টা পূর্বে ব্যায়াম করার চেষ্টা
*ঘুমানোর সময় আশেপাশে মোবাইল বা ল্যাপটপ অর্থাৎ ঘুম হারাম করতে পারে এমন কিছু না রাখা
*যদি স্লিপ প্যারালাইসিসের মধ্যে আপনি যাতায়াত করেন, তবে নিজেকে নিজেই সাহস দিবেন যে একটু পর সব ঠিক হয়ে যাবে, ভয়ের কিছু নেই।
*উপুড় হয়ে এবং একদম সটান হয়ে শোয়া যাবে না। ডানদিকে কাত হয়ে ঘুমাবেন বাঁ দিকে নয়। (বাঁ দিকে কাত হয়ে ঘুমালে হৃদপিণ্ডে চাপ পড়ে।)
আজ এখানেই শেষ করছি। ঘরে থাকুন ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।