ভাপা সন্দেশ ঘরে তৈরি করার রেসিপি
ভাপা সন্দেশঃ
বাংগালীর উৎসব, পার্বনে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে মিস্টি ছাড়া জমেই না। পরিবারে নতুন সদস্য এলে, পরীক্ষায় ভালো রেসাল্ট, দাওয়াতে যাবেন কোথায় নেই মিস্টি। কিন্তু সবসময় দোকানে তৈরি মিষ্টি ভালো লাগেনা । কখনো ইচ্ছে হয় কাছের মানুষ গুলোকে নিজের হাতে কিছু বানিয়ে খাওয়াতে। সেক্ষেত্রে ভাপা মিষ্টি তৈরি করে পরিবেশন করতে পারেন। স্বাস্থ্যকর এবং মজাদার এই মিষ্টি ভাপা সন্দেশ সবার মন ভুলিয়ে দিবে।
ভাপা সন্দেশ বানানোর উপকরনঃ
১।পানি ঝরানো নরম ছানা-১ কাপ ( ১লিটার দুধের , ছানা বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখবেন ১ ঘন্টা, ছানা যেন নরম থাকে অতিরিক্ত চাপাচাপি করা ঠিক না। নিচে ছানা বানানোর প্রসেস আছে)
২।গুড়া চিনি-২/৩ টেবিল চামচ( আপনি ইচ্ছে করলে আরও দিতে পারেন। কিন্তু এই ভাপা সন্দেশ হাল্কা মিষ্টি খেতেই ভালো লাগে)
৩।গুড়া দুধ ২ টেবিল চামচ( আপনার ইচ্ছে, না দিলেও চলে)
৩। গোলাপ জল/ কেওড়া জল- ১/২ চা চামচ
৪।এলাচ বিচি গুড়া -৩/৪ টার ( ইচ্ছা)
৫।বাদাম বা কিশমিশ সাজানোর জন্য
৬। ফুড কালার (আপনার যদি কয়েক রঙ এর লেয়ার করার ইচ্ছা থাকে। নাহলে শুধু সাদা রাখতে পারেন)
ভাপা সন্দেশ বানানোর প্রনালীঃ
১। নরম ছানার সাথে গুড়া চিনি , গুড়া দুধ, গোলাপ জল, এলাচ বিচি দানা গুঁড়া মিশিয়ে মসৃন করে মাখিয়ে নিতে হবে
২।একটা ছোটো পুডিং এর (স্টীলের হলে ভালো হয় তাতে বক্স থেকে ছেড়ে যাবে তাড়াতাড়ি )বক্সে সমান পুরু করে করে ছড়িয়ে ঢাকনা আটকে দিতে হবে তক
৩। পুডিং এর মতো চুলায় পানির ভাপে দিতে হবে। একটা বড় পাতিলে অথবা সসপ্যানে স্ট্যন্ড বসিয়ে তার উপর বক্স রাখতে হবে এবং পুরো পাতিল ঢেকে দিতে হবে। পানি স্ট্যন্ড পর্যন্ত হবে।
৪। ১৫-২০ মিনিট ভাপিয়ে নামাবেন। এবার বক্সের ঢাকনা খুলে দেখুন জমেছে কিনা। না জমলে আবার ভাপে রাখেন জমে যাওয়া পর্যন্ত। বক্সে পানি জমলে একটু কাত করে ফেলে দেবেন।
৫।এবার বক্স সহ ফ্রিজে ৩০ মিনিট রেখে দিন। আধা ঘন্টা পর ফ্রিজ থেকে বের করে পুডিং এর মতো সাবধানে উল্টে বের করুন। খুলে না আসলে একটি ছুরি দিয়ে পাশ ছাড়িয়ে উল্টে বের করুন। পছন্দ মতো শেপে কেটে বাদাম বা কিসমিস দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার ভাপা সন্দেশ।
ভাপা সন্দেশ এর জন্য ছানা তৈরীঃ
উপকরনঃ
১।লিকুইড দুধ-১ লিটার
২। সিরকা/ ছেকে নেয়া লেবুর রস
সিরকা ও লেবুর রস ২-৩ টেবিল চামচ সম পরিমান পানি দিয়ে মিশানো ( লম্বা বড় লেবুর রস কখোনো বেশীও লাগতে পারে কারন সব লেবুতেই পর্যাপ্ত টক ভাব নাও থাকতে পারে)
ছানা বানানোর প্রনালীঃ
১। ১ লিটার লিকুইড দুধ নেড়ে নেড়ে জ্বাল দিন। বলক উঠলে নামিয়ে রেখে দিন। ৫-১০ মিনিট পর আধা চা চামচ করে করে সিরকা/ লেবুর রস দিবেন আর আস্তে করে নাড়বেন। যখন সবুজ পানি বের হবে তখন আর সিরকা দিতে হবে না।তবে যদি আরো লাগে তাহলে আরো দিতে থাকবেন সবুজ পানি আসা পর্যন্ত।
২।দুধ কিন্তু আর চুলায় দিবেনা। ছানা হলে ১৫-২০ মিনিট পর ছানা ছাকবেন।
৩। একটা পাতলা নরম সুতি কাপড় যেটাতে রং উঠার সম্ভাবনা নাই সেটা একটা ঝাঝরির উপর নিতে হবে। নিচে একটা পাতিল রেখে ছানার পানি ঝরান।
৪। ছানার উপর কলের পানি ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়ে নেড়ে ধুয়ে নিন তারপর পানি চেপে ফেলুন। এভাবে দুবার করলে সিরকার বা লেবুর গন্ধ থাকবে না।
৫। এবার ছানা সহ কাপড় উঠিয়ে হাত দিয়ে চেপে চেপে পানি ঝরান তবে এমন চাপ দিবে না যাতে ছানা বের হয়ে আসে।তারপর নরমাল বাতাস আছে এমন জায়গায় ঝুলিয়ে দিন কাপড়টা ১ ঘন্টার জন্য। বারান্দাতে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন এতে বার বার পানি চিপতে হয় না ও সুন্দর পানি ঝরে যায়।
৬। ১ ঘন্টা পর হাত দিয়ে চেপে বাড়তি পানি বের করে ছানা বের করে নিন। ছানা থেকে কিছুটা এক হাতের নিয়ে আরেক হাতের আঙ্গুল দিয়ে ৩-৪ সেকেন্ড ঘষে যদি একটা বল বানাতে পারো তাহলে বুঝবে ছানা রেডি ব্যবহারের জন্য।
আর যদি হাতের সাথে লেগে যেতে চায় বুঝবেন আরো পানি ঝরবে সেক্ষেত্রে ফ্যানের বাতাসে হাত দিয়ে নেড়ে নেড়ে আধা ঘন্টা রাখবেন( হাত দিয়ে বার বার নাড়লে ছানা বেশী শুকনা হয়ে যাবে) খেয়াল রাখবেন ছানা যেনো সফট থাকে। আর ছানা বেশী শুকনা লাগলে আধা বা ১ চা চামচ পানি দিয়ে মাখিয়ে নিতে পারেন।
কিছু টিপসঃ
অনেক সময় দুধ সঠিক সময়ে জ্বাল না দিলে বা অন্য যে কোন কারণে ফেটে যায়। সেক্ষেত্রে সেগুলো ফী না দিয়ে ছানা ছেঁকে নিয়ে এই ভাপা সন্দেশ বানাতে পারেন।
ছানা ছাকার পর যে পানিটা থাকে টা ফেলে দিবেন না। বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। পরের বার ছানা করতে টা ব্যবহার করতে পারবেন। দুধ গরম হবার পর আধা কাপ পরিমান দিয়ে দেখবেন। যতক্ষণ না দুধ থেকে ছানা হয়ে সবুজ পানি বের হচ্ছে ততক্ষণ দিতে থাকুন।
কয়েক রঙ এর লেয়ার করতে চাইলে স্টিলের বক্সে দিবার আগে ছানা গুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নিন। পছন্দ মত খাবারের রঙ মিশান। তারপর এক লেয়ারের উপর আরেক লেয়ার দিন।