হেঁচকি ওঠার কারণ ও থামানোর উপায়

হেঁচকি ওঠা খুব সাধারণ একটি বিষয়। খাবার খাওয়ার সময় বা কোনো কাজের মধ্যে, এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই মানুষের হেঁচকি শুরু হলে তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। হেঁচকি আমাদের সেরকম ক্ষতি না করলেও মাঝে মাঝে এমন সব সময় হেঁচকি আসে যেটা আমাদের সমস্যা না করলেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। আপনি অফিসে ইন্টারভিউ দিতে গেলেন, তখন আপনার হেঁচকি উঠা শুরু করলো, কি অবস্থাটা হবে তখন? কিংবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন, তখন যদি হেঁচকি শুরু হয়,সত্যি সেটা আপনার নিজের কাছে অসহ্য লাগবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই মূলত এই লেখা। তার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক হেঁচকি কেন হয়-

বিজ্ঞানীরা অনেক বছর ধরেই এই ক্ষতিহীন শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। হেঁচকি কেন হয়, হেঁঁচকি হলে কি হয় এসব প্রশ্নের যেন শেষ নেই। তবুও কিছুটা গবেষণা করে এর মূল কারন উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। ভাবা হয়ে থাকে, পরিপাকতন্ত্রের গোলমালের কারণে হেঁচকি হয়ে থাকে।

হেঁচকি যখন আসে তখন মূলত শ্বাসনালীতে সামান্য খিঁচুনির মতো হয় যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ করে। তখন ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে ‘হিক’ শব্দটা করে। মূলত ফুসফুসের নিচের পাতলা ডায়াফ্রামের হঠাৎ সংকোচনের ফলেই হেঁচকি তৈরি হয়।

হেঁচকি ও কুসংস্কার –

হেঁচকি নিয়ে অনেক রকম কুসংস্কার প্রচলিত আছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে এসব কুসংস্কার অনেকেই বিশ্বাস করে থাকে। যেমন অনেকে বলে চুরি করে খেলে হেঁচকি আসে।
আবার আরও একটা কথা প্রচলিত আছে, যদি কেউ কারও কথা মনে করে, তবে যার কথা মনে করা হচ্ছে তার হেঁচকি আসে।
কিংবা, কোনো ভালো কাজ করার আগে হেঁচিকি এলে সেটা নাকি উন্নয়নে বাঁধা। যদিও বাস্তবে এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই কিংবা কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। থাকলেও সেগুলো যুক্তিযুক্ত নয় বরং পুরো ব্যাপারটাই কাকতালীয়। এগুলো সম্পুর্ন অগ্রাহ্য করা উচিৎ এবং হেঁচকিকে অন্য সাধারণ জৈবিক ক্রিয়া হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে।

হেঁচকির কিছু কারণ-

* দ্রুত খাদ্য গ্রহন করা
*কিছু অসুখের পূর্বাভাস
*হাসি বা কাশির মধ্যে অতিরিক্ত মদ্যপান
*ঝাঁজ সহ পানীয় বেশি পরিমানে খাওয়া
*চেতনানাশক, উত্তেজনাবর্ধক, পার্কিনসন রোগ বা কেমোথেরাপির বিভিন্ন ধরনের ওষুধ নিলেও হেঁচকি হতে পারে।

তবুও কিছু কারণ ছাড়া হেঁচকি হওয়াটা একদম অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু হেঁচকি অনেক সময় বড় ধরনের রোগের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। যেমন ওষুধ নির্মাতা সংস্থা একমে’র সিনিয়র ম্যানেজার ও চিকিৎসক আফরোজা আখতার বলেন, “কিডনি ফেল করলে,স্ট্রোকের ক্ষেত্রে  কিংবা মাল্টিপল মেনিন জাইটিসের ক্ষেত্রেও অনেকের হেঁচকি তৈরি হতে পারে।”
এ বিষয়টা একটু মাথায় রাখতে হবে। তাই আবার হেঁচকিকে একদম অবহেলাও করা যাবে না।

হেঁচকি থামানোর পদ্ধতি-

*কাগজের ব্যাগে নিঃশ্বাস ফেলা। অবশ্যই মাথা ব্যাগের বাইরে রেখে।
*ভয় দেখিয়েও হেঁচকি দূর করা যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
*দুই হাটু বুক পর্যন্ত টেনে ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া।
*বরফ ঠান্ডা পানি খাওয়া।
*স্বল্প সময়ের জন্য দম বন্ধ করে রাখা।
*লেবু বা ভিনেগারের স্বাদ নেওয়া।
*কিছু দানাদার চিনি খাওয়া।

কখন হেঁচকির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-

*হেঁচকির তীব্রতা বেশি হলে।
*দীর্ঘ সময় ধরে হেঁচকি হলে।
*আপনা আপনি বন্ধ না হলে।
*দৈনন্দিন জীবনের কাজ বাধাগ্রস্থ হলে।
*ঘরোয়া পদ্ধতিতে হেঁচকি বন্ধ না হলে।

আশা করি বিষয়টা আপনাদের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে পেরেছি। ঘরে থাকুন৷ সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Similar Posts

2 Comments

  1. অবশ্যই আমাদের সকলকে হেঁচকির কারণগুলো থেকে বিরত থাকিতে হবে। আসলে, বেশিরভাগ সময়েই দ্রুত খাবার খাওয়ার ফলে হেঁচকি আসে। আম্মুরা এই হেঁচকির কুসংস্কারগুলো এখনো বলেন। যদিও বিশ্বাস করিনা।
    – ধন্যবাদ আপু!

Comments are closed.