ঈশপের গল্প কোথা থেকে এলো!
ছোটবেলা থেকে আমরা বিভিন্ন ছোট ছোট গল্প শুনে আসছি যার সারমর্মে ছিল একটি করে নীতিবাক্য। কখনো বনেরর বাঘের গল্প আবার কখনো চালাক শিয়ালের। এই ছোট ছোট গল্পের বিভিন্ন পশু পাখির বাস্তবিক রুপায়নে নীতিশাস্ত্রের পাঠ পড়াতে গল্পকার ছিলেন ঈশপ। এই ছোট ছোট গল্প গুলোকে বলা হয় ঈশপের গল্প।
কিন্তু কে এই ঈশপ ?
ঈশপ একজন গ্রীক গল্পকার ছিলেন। তার জন্ম তারিখ এবং জন্ম স্থান নিয়ে অনেক ধরণের মতবিরোধ রয়েছে। সঠিকভাবে কেউ তার জন্মের সময় ও স্থানের তথ্য দিতে পারে না। তবে থ্রেস, ফ্রিজিয়া, এথিওপিয়া, সামোস, এথেন্স এবং সার্দিস এই সকল শহর গুলো তাঁর জন্মস্থানের সমান দাবী উপস্থাপন করে এবং অনুমান করা হয় খ্রিস্টাপূর্ব ৬২০ সাথে এক দাস পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকেই তাকে নিয়ে একটা গুজব ছিল, যে তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন তবে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তার কথা বলার ধরন, অমায়িক ব্যবহার এবং তার তৈরি গল্প গুলোর সারমর্ম শুনে তার বুদ্ধিমত্তার একটি ধারণা হয়ে গিয়েছিল সবার। প্রজ্ঞা এবং বুদ্ধিমত্তার জোরে হাস্যোদ্দীপক ও মজার গল্প বলে খুব অল্প সময়ে মানুষের মন জয় করে ফেলেছিলেন ঈশপ।
তার জীবন আসলে কেমন ছিল এই নিয়েও বেশ বিতর্ক রয়ে গেছে। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময়ই এশিয়া মাইনর উপকূলের নিকটবর্তী সামোস দ্বীপে দাস হিসেবে জীবনযাপন করেন। ঈশপের গল্প বলার ভঙ্গি এবং দর্শন, বুদ্ধিমত্তা দেখে তার মনিব লোডম্যান তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে দেন।
ভ্রমন প্রিয় ঈশপ দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরতে লাগলেন। আসর জমানোর পটু ঈশপ যেখানেই যান সেখানেই গল্পের আসর জমিয়ে ফেলেন খুব সহজে। তাঁর মুখনিঃসৃত গল্প চারদিকে ছড়িয়ে যেতে থাকল। দিনে দিনে তাঁর ভক্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। গল্পে গল্পে তাঁর নীতিশাস্ত্রগুলো মানুষের মনে আবেগের সঞ্চার করত।
লাইডিয়া নামন এক নগর রাজ্যের রাজা ক্রোসেস যখন ঈশপের কথা শুনলেন তখন তাকে নিজ রাজ্যে আমন্ত্রণ জানান। ঈশপের গল্প শুনে মুগ্ধ হয়ে রাজ সভার সভাসদ হিসাবে তাকে নিযুক্ত করেন। রাজা ভেবেছিলেন ঈশপকে দিয়ে তাঁর রাজ্যে নীতিবাক্য ছড়িয়ে দিবেন।
নীতিবাক্য প্রচারের ঈশপের গল্প গুলো ধীরে ধীরে রাজ্যে ছড়িয়ে পরলো। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবার কাছে ঈশপের গল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।
কিন্তু এমন খ্যাতি ঈশপ এর কপালে বেশিদিন সয়নি। রাজ্যের কিছু প্রভাবশালী লোক মনে করতে লাগল ঈশপ ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের কুকর্মের কথা সকলের সামনে তুলে ধরছে। তখন তারা ফন্দি করে রাজাকে প্রভাবিত করে ঈশপকে পাঠালেন ডেলফিতে। রাজা ঈশপকে পাঠালের সেখানকার নগর রাজ্য ডেলফির নগরবাসীদের মাঝে সোনা বিতরন করার জন্য। তাঁর জন্য সেখানে চক্রান্তের নীল নকশা করা ছিল। সোনা বন্টনের পরিমাণ নিয়ে এক প্ররোচিত মনবিরোধ শুরু হয়ে গেল। অসহায় ঈশপ কোন উপায় না দেখে পুনরায় রাজা ক্রোসেস নিকট ফিরে যেতে চাইলেন কিন্তু শত্রুদের ষড়যন্ত্রের স্বীকার হলেন। ফিরে যাওয়ার পথে তাঁর মালামালের সাথে মন্দিরের একটি সোনার পাত্র রেখে দেওয়া হয়। যা ছিল ডেলফিরবাসীর নিকট খুবই স্পর্শকাতর। পবিত্র দ্রব্য চুরির দায়ে ঈশপের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলো।
এরপর বিধান অনুযায়ী ঈশপকে পাহাড় চূড়া থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হলো। এইভাবেই ৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে ঈশপের জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে।
ঈশপ না থাকলেও তাঁর রচিত গল্প গুলো এখনো মানুষের মাঝে রয়ে গেছে। ঈশপের গল্পের শৈল্পিক আবেদন এবং শিক্ষা আমাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভুল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। নীতিবাক্য কিভাবে ছোট গল্পের ঢঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছাঁনো যায় তাঁর এক অনন্য দৃষ্টান্ত এই ঈশপ।
আমাদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষার সাথে যদি আমরা ঈশপের গল্পগুলোও জীবন চলার পথে সংযুক্ত করতে পারি তবে আমাদের জীবনে সঠিক নীতিবোধ গড়ে তোলা আরও সহজ হবে।