যখন কিছুই করতে ভালো লাগেনা তখন কি করবেন?
মাঝেমধ্যেই এমন কিছু সময় আসে যখন কিছুই করতে ভালোলাগেনা। এমনকি সবচেয়ে পছন্দের মানুষের প্রিয় কথাগুলো শুনেও তখন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। অধিকাংশ সময় যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি অথবা দীর্ঘ ব্যস্ত সময় পার করি, তখনই এই ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
এইধরনের সময়গুলো কিভাবে ইফেক্টিভলি কাজে লাগাবেন, তাই জানাবো আজকের আর্টিকেলে।
১. মানিয়ে নিতে শিখে যান
কোনো কাজে যখন আপনি অনবরত সময় দিতেই থাকবেন,দিতেই থাকবেন তখন আপনার ঐ কাজটা আর ভালো লাগবে না, এটাই স্বাভাবিক। এইরকম ভালো না লাগার পরিস্থিতিতে পড়ার আগেই একটা ব্রেক নিয়ে নেন।
ঐ ব্রেকের সময় আপনার যা খুশি করেন। ঘুরতে মন চাইলে ঘুরেন, টিভি দেখতে মন চাইলে টিভি দেখেন, ঘুমাতে মন চাইলে ঘুমান। একদম ফ্রেশ মাথায় সময়টাকে উপভোগ করেন।
ব্রেকের পর যখন আবার কাজে বা পড়াশোনায় যেটাতেই ফিরবেন তখন দেখবেন আগের মতো আর ঐরকম ভালো লাগে না মনোভাবটা নেই। বরং নতুন একটা কর্মস্পৃহা কাজ করছে আপনার মধ্যে।
২. একটু বাইরে যান
দীর্ঘসময় ধরে ঘরে বা অফিসে বসে কাজ করলে বা পড়াশোনা করলে “ভাল্লাগেনা” শব্দটি মুখ দিয়ে বের হতেই পারে। এজন্য কিছু সময় বাইরে কাটান। পাখির ডাক শুনেন, সকালবেলার মৃদু বাতাসে হাঁটুন বা বিকেলে হালকা এক্সারসাইজ করতে বের হন।
প্রকৃতির যত কাছাকাছি থাকবেন তত আপনার মন ভাল্লাগেনা রোগ থেকে বের হবে।
৩. কারণ খুঁজে বের করুন
যখন ভালো লাগবে না তখন খুঁজুন কেন আপনার ভালো লাগছে না। ঐ সময় আপনার এইসব খুঁজতে মন চাইবেনা এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ দিন। বের করুন কেন আপনার ভালো লাগছে না –
আপনি কি চিন্তিত? চিন্তিত হলে কেন? বা রাগ করে আছেন? হতাশ? একা অনুভব করছেন? আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না ভাবছেন?
ভালো না লাগার কারণ বের করুন। এই কারণ সৃষ্টি হলো কেন, এটাও বের করুন।
একটা উদাহরণ দেই – ধরেন কোয়ারেন্টাইনে বসে বসে ফেসবুকের নিউজফিড ঘাঁটছিলেন। এতো এতো মানুষের আর্টওয়ার্ক,ইলাস্ট্রেশন,গান গাওয়ার ভিডিও দেখে ভেবে বসলেন ‘আমার তো কোনো প্রতিভাই নেই‘। এই ভাবনাটিই আপনার মধ্যে ‘ভাল্লাগেনা‘ শব্দের উৎপত্তি ঘটাবে। এখন এইটা দেখার পর আপনি দুইভাবে ভাবতে পারেন –
১. কিছুই করলাম না জীবনে৷ মানুষ কত ট্যালেট্যান্ড।
২. উনার আর্টওয়ার্ক টা তো সুন্দর হইছে। কিভাবে করে এইগুলা? আমিও ট্রাই করি একটু।
আমি আশা করবো আপনি দ্বিতীয়টা ভাববেন। দেখবেন ভাল্লাগেনা শব্দ সুড়সুড়িয়ে পালাবে।
৪. পুরোনো কিছু ভাবুন
ভালো না লাগলে স্কুল লাইফে বা কলেজ লাইফে বা ছোটবেলায় যে ভালো সময়গুলো কাটিয়েছেন ঐখানে ডুব দিন। স্কুল পালানোর সময়গুলো, বৃষ্টিতে ভিজে সারাদিন ফুটবল খেলা ঐ সময়ের কথাগুলো ডিটেইলে মনে করার চেষ্টা করুন। একটা ভালো স্মৃতি আসার সাথে সাথে দেখবেন আরেকটা মজার স্মৃতি মনে পড়ছে। কিছুক্ষণ এরই মাঝে থাকুন।
অথবা, পুরোনো কোনো বন্ধু,যার সাথে বহুদিন দেখা হয় না, কথা হয় না তাকে ফোন দিন। দেখবেন ঐ বন্ধু খুব খুশি হবে আর আপনার মন ও গভীর আনন্দে ভরে যাবে। আর যদি সময়,সুযোগ মিলে যায় তাহলে দেখা করে নিন।
জানেন তো-পুরোনো বন্ধুদের সাথে সময় সবচেয়ে ভালো কাটে।
৫.শিডিউল তৈরি করে নিন
কথায় আছে “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা“। অতি ব্যস্ততায় যেমন ‘ভাল্লাগেনা’ শব্দ বেরহয় তেমনি অতি কাজহীনতায় ও এইরকম মনে হয়৷ এজন্য সবসময় কেনো না কোনো কাজের সাথে যুক্ত থাকা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় প্রতিদিনের একটা করে রুটিন করে নিলে।
রুটিন করে যখন আপনার রুটিনের কাজগুলো পুরোপুরি শেষ করবেন তখন দেখবেন অবর্ণনীয় আনন্দ লাগবে। মনে হবে আজকের দিনটা সফল গেলো।
৬. পছন্দের কিছু করুন
ভালো না লাগলে দরজা জানালা বন্ধ করে দিন। আপনার পছন্দের গান ফুল ভলিউমে ছেড়ে ইচ্ছেমতো নাচুন। আইডিয়াটা নিঃসন্দেহে ক্রেজি কিন্তু খুবই ভালো কাজ করে। মানসিক চাপ অনেকখানি কমিয়ে দেয়। আবার, পছন্দের কোনো বই পড়তে পারেন, প্রিয় অভিনেতা/ অভিনেত্রীর মুভি দেখতে পারেন।
এইসব না-ভালোলাগার সময়ে কি করা যায় এ সম্পর্কে অনেক কিছু বললাম। এইগুলো আপনি কাজে লাগাবেন। আপনার খারাপ সময়গুলো তখন ভালো সময় হবে বলে আমার আশা।
তবে যে জিনিসটি আমি বলি নি তা হলো সৃষ্টিকর্তার কাছে উপাসনা করা। আপনি আপনার ধর্ম অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার কথা স্মরণ করুন, তার কাছে সাহায্য চান।