Bandwagon Effect : না বুঝেই অন্যকে অনুসরণ করা
কয়েকদিন আগে একবার গুজব উঠেছিল বাংলাদেশের লবণ মজুদ শেষ হয়ে আসছে, কয়েকদিনের মাঝেই লবনের জন্য হাহাকার শুরু হবে। সবাই হুড়োহুড়ি করে লবণ কিনতে শুরু করে দেয় পাছে যদি লবণ শেষ হয়ে যায়।
এইখানে কাজ করছে “ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট“। ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট মানে হলো ‘ না বুঝেই অন্যকে অনুকরণ করা‘।
প্রথমে কেউ একজন বলেছিলো লবণ শেষ হয়ে আসছে, এই শুনে এর পাশেরজন প্রভাবিত হয়ে আরো ১০ জনকে বললো, এই ১০ জন আরো ১০০ জনকে প্রভাবিত করলো। এভাবেই মূলত এটি ছড়িয়েছিলো ।
আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট সম্পর্কে জানবো।
ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট কি ?
ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট হলো কোনো মানুষের তার চারপাশের প্রভাব বিস্তারকারী মানুষদের আচরণ, স্টাইল, মনোভাবকে অনুসরণ করা। সে তাদের অনুসরণ করছে ঠিকই, কিন্তু তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় ‘কেন সে অনুসরণ করছে?’
তাহলে সে বলবে অন্যরা অনুসরণ করছে দেখে সে ও করছে৷ এখানে অনুসরণ করার পিছনে একটাই কারণ, সেটি হলো আরেকজনের দেখাদেখি।
যেমনঃ
১.কয়েকদিন পর পর নিদিষ্ট স্টাইলের কাপড় ভাইরাল হয়। আর, আমরা ঐ কাপড় কেনার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকি। কেন উদগ্রীব হই জানি না। শুধু সবাই কিনছে দেখে আমাদের ও কেনার ইচ্ছা জাগে।
২. একটা গান শুনলাম। ভাল্লাগলো না। কয়েকদিন পর কয়েকজন ফেসবুকে একইসাথে ঐ গানটা শেয়ার দিয়ে গানের প্রশংসাসূচক কিছু কথা লিখলো। আবার শুনে তা আমাদের ভালো লাগতে শুরু করে।
৩. প্রায়ই ফেসবুকে পোল হয়। যে পোলগুলোর অপশনগুলো সম্পর্কে আমরা ঠিকমতো জানি না কিন্তু এরপরেও ভোট করতে চাই, তখন আমরা কি করি?
তখন আমরা দেখি অধিকাংশ লোক কি ভোট দিলো। আমরা ঐটাই দেই।
এই ইফেক্টের কারণ কি?
ধরেন আপনার চারপাশে যে গ্রুপের লোকজন আছে তাদের অধিকাংশই একটা নির্দিষ্ট কাজ করছে। তখন ঐ কাজটি দিয়ে আপনিও উদ্দীপিত হবেন৷ আপনার ও ইচ্ছা হবে কাজটি করতে। এর পিছনে কারণ কি?
* গ্রুপ– যখন দেখবেন আপনার চারপাশের সবাই একই কাজ করছে শুধু আপনি ছাড়া তখন নিজের ভিতরে একটা প্রেশার অনুভব করবেন। এইটা আপনাকে ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্টের দিকে নিয়ে যাবে।
*সঠিক হবার ইচ্ছা – সবাই একই কাজ করছে শুধু আপনি আলাদা এরকম দেখার পরে আপনার মনে হতেই পারে আপনি হয়তো ভুল পথে আছেন। আপনি তাদের মতো হলে সঠিক পথে যাবেন। এটিও ইনফ্লুয়েন্স করে।
*টিকে থাকার ইচ্ছা – সবার থেকে যখন আপনি একটু আলাদা তখন আপনাকে নিয়ে অন্যরা কিছু বলুক আর না ই বলুক আপনার নিজের কাছেই অন্যরকম লাগবে বিষয়টা। তাই ডারউইনের Survival of the fittest কথা মনে করে তাদের দলে মিশে যাবেন।
ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্টের খারাপ প্রভাব
ধরেন, অনলাইন একটা ভোটগ্রহণ হচ্ছে। দুইজন শিল্পী থেকে একজন জয়ী হবে৷ আপনি তাদের কারোর গানই আগে শুনেন নি। এখন এই ভোটটি দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তাদের পারফরম্যান্স দেখার ইচ্ছে হচ্ছে না। আপনি এখন দেখলেন কার ভোট বেশি পড়েছে। যার ভোট বেশি তাকেই আপনি ভোট দিয়ে দিলেন। এইটা খুবই খারাপ এবং প্রায়ই আমরা এরকম করি। যার প্রাপ্ত ভোট বেশি তাকেই আমরা ভোট দেই।
এ নিয়ে বিখ্যাত উপন্যাসিক উইলিয়াম সমারসেট ম’মের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে-
If 50 million people say something foolish, it is still foolish.
সুতরাং নিজের মতামত কে গুরুত্ব দিন, স্রোতে অযথা ভাসবেন না। আপনার থেকেও নতুন স্রোত তৈরি হতে পারে।