Abdul Kader / আগস্ট 5, 2020
আপনার সাথে এরকম কতবার হয়েছে, যে আপনি হয়তো সবেমাত্র দুদিন হল সকালে উঠে দৌড়াতে যেতে শুরু করেছেন এবং হঠাৎ একদিন এক বন্ধুর সাথে কথায় কথায় বলে ফেললেন, আমিতো এখন সকালে রোজ দৌড়াতে যাচ্ছি। এবার ভাই আমি এক মাসের মধ্যে পাঁচ কেজি ওজন কমিয়েই ছাড়বো। আপনার সেই বন্ধু শুনে বলল, আরে বাহ! সেটাই তো। আমিও আসলে মাঝে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কেবল তো ঐ দুই তিন দিন , তারপর ঘুম থেকে উঠতে এতো লেট হয়ে যায় ভাই, আর কন্টিনিউ করতে পারিনা। আর তার ঠিক দুই তিন দিন পর থেকে, কোনো এক অজানা কারণে আপনিও আর সকালে উঠে দৌড়াতে যাওয়াটা কন্টিনিউ রাখতে পারেন না। এমনটা কেন হয় জানেন?
রিসার্চ বলছে, যখন আমরা আমাদের কোনো ফিউচার গোলের ব্যাপারে অন্যদের সাথে আলোচনা করি, তখন সেই মুহূর্ত থেকেই আমাদের মধ্যে একটা গর্ব বা তৃপ্তিদায়ক অনুভূতি কাজ করতে শুরু করে দেয়। যেটা আসলে সেই গোলটাকে অর্জন করার পর, যে ধরনের অনুভূতি হবার কথা, তার সঙ্গে প্রায় একই রকম। যার ফলে, সেই ফিউচার গোল অর্জন করার আগেই, শুধুমাত্র সেটার ব্যাপারে অন্যদের সাথে আলোচনা করে, যখন আমরা সেই তৃপ্তিদায়ক অনুভূতিটা পেয়ে যাই, তখন আমাদের মধ্যে সেই গোলটাকে অর্জন করার খিদেটা অনেকখানি কমে যায়। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা সেই গোলটাকে অর্জন করার জন্য পরিশ্রম করাই বন্ধ করে দেই। সাইকোলজিস্টরা এই ঘটনাকে বলেন, সোশ্যাল রিয়েলিটি। তাই বুদ্ধিমানের কাজ এটাই, গোলটাকে অর্জন করার পরই একমাত্র খুব প্রয়োজন হলে, তবেই সেটা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা করা উচিত। আর তাছাড়া আপনি বড় বড় স্বপ্নের কথা বলে, তারপর সেগুলোকে যদি কোনো কারনে পূরণ করতে না পারেন, তখন অসংখ্য এরকম মানুষ ঘাপটি মেরে অপেক্ষায় বসে থাকবে, যারা সুযোগ পেলেই আপনার সেই ব্যর্থতাকে নিয়েই টুন কাটবে।
হয়তো আপনি আর আপনার এক বন্ধু, প্রায়ই এদিক-ওদিক টুকটাক খেতে বা ঘুরতে বেড়ান। এতদিন আপনার সেই বন্ধু জানতো, যে আপনার আর তার ইনকাম মোটামুটি এক। তাই যখন যেখানে যা বিল হতো, সেটা আপনারা দুজনেই সমানভাবে ভাগ যোগ করে পে করতেন। এবার আপনি যে রিসেন্টলি চাকরিতে প্রমোশন পেয়েছেন, সেটা আপনার বন্ধুর জানা ছিল না। কিন্তু যেদিন সে এই কেসটা জানতে পারল, যে এখন আপনার ইনকাম প্রায়ই ওর দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেদিন থেকে যখনই কোথাও কোনো বিল পে করতে হবে, হয়তো আপনার সেই বন্ধু আপনাকে বলবে, ভাই তোর তো এখন এত ইনকাম.. বিল টা একটু তুই পে করে দিতে পারিস। বা কোনদিন হয়তো এসে বড় অংকের একটা টাকা ধার চেয়ে বসল। আপনি জানেন যে এত টাকা ধার দিলে এই টাকা রিটার্ন পেতে আপনার বছর ঘুরে যাবে, কিন্তু আপনি নাও বলতে পারবেন না, বা কোনো বাহানা দিয়ে যে কাটিয়ে যাবেন সেটাও মুশকিল। কারণ ও তো জানে, আপনার এখন মান্থলি ইনকাম একজ্যাক্টলি ঠিক কত। ব্যাস ফেঁসে গেলেন। বা এর উল্টোটা হলেও সমস্যা। হয়তো আপনার চাকরি চলে গেল, বা আপনি হয়তো নতুন কোন একটা চাকরিতে জয়েন করলেন। সেখানে হয়তো আপনার সেলারি আগের থেকেও অর্ধেক। এবার সেটা জানতে পারার পর, যদি আপনি হুটহাট করে কোনোদিন ওর কাছে এসে, বড় অংকের টাকা ধার চেয়ে বসেন, সে ভয়েতে আপনার সেই বন্ধু হয়তো আপনাকে ইগনোর করতে শুরু করে দিতে পারে। টাকা কম থাকলে ও বিপদ, আবার বেশি থাকলেও অন্য রকমের বিপদ। তাই আপনার কাছে ঠিক কত টাকা আছে, বা আপনার এখন এক্সাক্ট মান্থলি ইনকাম কত, সেটা ঢাকঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানানোর কোনো দরকার নেই। কারণ এতে আপনার সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না।
নিজের উইকনেস এবং সিক্রেটগুলো কখনোই অন্যের সাথে শেয়ার করা উচিত না। একমাত্র যদি আপনি কাউকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতে পারেন, তবেই একমাত্র তার সাথে শেয়ার করা উচিত। যেমন ধরুন আপনার মা-বাবা। কিন্তু দুদিনের আলাপেই, অনেক সময় আমরা কাউকে প্রিয় বন্ধু বানিয়ে নিয়ে, তার সাথে নিজের সমস্ত উইটনেস এবং সিক্রেটগুলো শেয়ার করতে বসে যাই। এই প্রিয় বন্ধুটি যে কখন অপ্রিয় শত্রুতে পরিণত হয়ে যাবেন, তা আপনি টেরও পাবেন না। অন্যদিকে যদি কেউ আপনাকে বিশ্বাস করে, তার কোনো সিক্রেট বা উইকনেসের কথা শেয়ার করে, তাহলে সেগুলো অন্যদের সাথে গিয়ে শেয়ার করাটাও কখনোই উচিত না। এতে আস্তে আস্তে কেউ আপনাকে বিশ্বাস করে কিছু বলতে চাইবে না। কারণ আস্তে আস্তে সবাই জেনে যাবে, যে আপনার পেট পাতলা রোগ আছে। আপনি কোনো কথা আপনার পেটের মধ্যে চেপে রাখতে পারেন না।
ভাবুন, আপনার ওয়াইফের সাথে আপনার ঝামেলা হল। আর আপনার ওয়াইফ হয়তো বলে ফেলল, তোমার কাছে তো তোমার মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব এদের সবার জন্য টাইম আছে। শুধু আমার জন্যই তোমার কাছে কোন টাইম নেই। আর সেই কথাটা আপনি আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে গিয়ে শেয়ার করে বসলেন। এবার পরে যখন আপনার ওয়াইফের মাথা একটু ঠান্ডা হলো, তখন আপনি জানতে পারলেন, যে আসলে সেদিন তার অফিসে প্রচুর কাজের চাপ চলছিল, তাই সেদিন সে একটু ডিপ্রেস ছিল। আর সেই কারণে সেই ঐ কথাগুলো রাগের মাথায় বলে ফেলেছিল। এবার সেটা জানার পর, আপনার এবং ওয়াইফ এর মধ্যে ঝামেলাটা মিটে গেল। কিন্তু আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবরা, আপনার ওয়াইফকে খারাপ ভাবতে শুরু করে দিল। ফলে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিতে শুরু হয়ে গেল। তাই কারো সাথে কোন পার্সোনাল কনফ্লিক্ট অর্থাৎ ঝগড়া হলে, সেটা নিয়ে কখনোই অন্যদের সাথে আলোচনা করা উচিত না। এতে বিভিন্ন সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ভাবুন, যখন কেউ আপনাকে মুখের উপর এরকম কিছু বলে, ‘তুই না ভাই অনেক খারাপ বকিস’ বা সিমিলার কোনো রকম নেগেটিভ জাজমেন্ট পাস করে, তখন আপনার মনের ভিতর তার প্রতি কি ধরনের অনুভূতি তৈরি হয়? আপনিও সুযোগ খুঁজতে শুরু করেন, কিভাবে তারও কোন একটা খুঁত খুঁজে বের করা যায়? ইভেন কেউ যদি কোন ভুল কাজ করে, তারপরও যদি আপনি তাকে এরকম কোনো নেগেটিভ জাজমেন্ট পাস করেন, তাহলে সে হয়তো সেটাকে ভালো ভাবে নেবে না। আর ব্যাপারটা হচ্ছে, যদি কেউ সত্যি খারাপ বকে, তাহলে তাকে এটা বলাতে যে তুই অনেক খারাপ বকিস.. তাতে সে খারাপ বকা বন্ধ করে দেবে না। উল্টো বরং রেগে গিয়ে খারাপ বকাটা বাড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই কারোর ব্যাপারে কখনোই কোন রকম নেগেটিভ জাজমেন্ট পাস করে, কোনো লাভ হয় না। এতে শুধু শত্রুর সংখ্যাই বাড়ে।
তাই জীবনে সুখি হতে চাইলে, আপনাকে এই বিষয়গুলো প্রতি নজর রাখতে হবে:
FILED UNDER :লাইফস্টাইল
Comments are closed.
Comments
fatema says
ধন্যবাদ জীবনে সুখী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য।
Kader says
আপনাকে সাহায্য করতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আপনার পরিবার পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন।