ঈদ আনন্দের একাল সেকাল

শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

একটি বিশেষ দিনে সবাই কে নিয়ে আনন্দ উদযাপন করা, বন্ধন দৃঢ় করা, খুশিতে মেতে থাকাই হলো ঈদের দিনের প্রকৃত সংজ্ঞা। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুব আনন্দের দুটি দিন হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। ঈদের আনন্দ বয়ে যায় শিশু থেকে শুরু করে বয়ঃবৃদ্ধ পর্যন্ত। তবে আগেকার দিন ও বর্তমান সময়ের মধ্যে এই আনন্দ উদযাপনে এসেছে ব্যাপক পার্থক্য।

সেকালের ঈদ

সেকাল বলতে বর্তমান সময় থেকে ৫০-১০০ বছর আগেকার কথা বলছি। সেসময় যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল এত উন্নত না। তবে ধর্মীয় রীতিনীতি একই রকমই আছে। তখনকার ঈদ ছিল খুবই সাদামাটা। ঈদের দিন নামাজ শেষে সবাই বাড়ি ফিরে ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া করাই ছিল মূল বিষয়। সেসময় পাড়াপড়শিদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগির মধ্যেই ছিল ঈদের খুশি। পাড়াপড়শিদের বাড়িতে যাওয়া অথবা দাওয়াত দেয়া কিংবা সকলে একত্রিত হয়ে রান্না করে খাওয়াদাওয়ার মধ্যে ঈদের দিনটি কাটতো। আশেপাশে আত্মীয় স্বজনরাও আসতো ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। যদি দূরে কোন আত্মীয় বাড়িতে ঈদ উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো তবে ঈদের কয়েকদিন আগে রওনা দেয়া হত কারন তখন একস্থান থেকে অন্যত্র যেতে অনেক সময় লেগে যেত।

গল্পগুজব, কুশল বিনিময়ের মধ্যেই দিনটি কাটতো। এছাড়া গ্রামে বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হতো তার মধ্যে নৌকা-বাইচ, কুস্তি খেলা অন্যতম। বিকেলবেলা মহল্লার সবমানুষ এসে জমা হতো এবং এই খেলা উপভোগ করতো। সেসময় মানুষের বস্ত্র ছিল সাধাসিধে। ছেলেরা লুঙ্গি/পাজামা ও সুতির পাঞ্জাবি এবং মেয়েরা সুতির শাড়ি পড়েই ঈদের দিন কাটিয়ে দিত।  অভিজাত মানুষেরা অভিজাত কিছু পরিধান করতো বটে তবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না।

কোরবানি ঈদে দেখা যেত ব্যবসায়ী ও পয়সাওয়ালা মানুষরাই একা কোরবানি দিত। কিন্তু কোন প্রতিযোগিতা ছিল না। তখন ছিল যৌথ পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি। মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো বাবা,চাচা সবাই মিলে যৌথভাবে কোরবানি দিত। তখনকার দিনে  কোরবানির পর মেয়েবাড়ি, কুটুমবাড়িতে গরুর রান পাঠানো ছিল আভিজাত্যের ব্যাপার। তখন মাংস সংরক্ষন করে রাখা হতো জাল দিয়ে। এছাড়া গরুর চর্বিও ব্যবহার করা হতো মাংস সংরক্ষনে।

একালের ঈদ

একালের ঈদ অনেকের কাছে পালিত হয় খুব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে। আবার বেশকিছু মানুষের কাছে সাদামাঠাভাবে কিন্তু কিছু মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ বলতে কিছুই থাকে না। একালের ঈদ  তিন ভাবে পালিত হয়। তবে রীতি রেওয়াজ আগের মতই আছে। দীর্ঘ একমাস সংযম পালন করে প্রতিটি মুসলমানের চোখের আনন্দের ঝলকানি দিয়ে আসে ঈদুর ফিতর। সকালে বাবা,চাচা,ছেলে নতুন পায়জামা পাঞ্জাবি পড়ে যায় ঈদগাহ মাঠে। নামাজ শেষে কোলাকুলি করে বাড়িতে যায় সবাই। বাড়িতে মাতৃসম্প্রদায় শেমাই বানিয়ে ঘরকে নতুনের মত করে গুছিয়ে রাখে। বাড়িতে এসে সালাম করে সালামি নেয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে ছোটরা। তাদের মধ্যে একরকম প্রতিযোগিতা লেগে যায় যে কে কত বেশি সালামি নিল।

একালে ঈদকে সামনে রেখে চাঙ্গা হয়ে উঠে কাপড় ব্যবসায়ীরা। সবার মধ্যেই একটা ধুম পড়ে যায় নতুন কাপড় কিনে ঈদ করবে বলে। অনেকরকম বুর্জোয়া বিলাস দেখা যায়। অনেক নায়ক-নায়িকাদের নামে নতুন বিলাসবহুল ফ্যাশনের জামা বের হয় এবং দামে বিক্রি হয়। অনেকে ঈদকে সামনে রেখে দেশের বাইরে গিয়ে কাপড়চোপড় কিনেন।

একালের ঈদে মানুষ অনেকটা ঘরমুখী অথবা রেস্টুরেন্ট এর দিকে ঝুকে থাকে। পাড়াপ্রতিবেশীদের সাথে মেলামিশা সেকালের তুলনায় কম বরং মানুষ ঘরে বসে টিভিতে ঈদের অনুষ্ঠান সে তুলনায় বেশি উপভোগ করে।

কোরবানির ঈদে একালে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সবাই কমপক্ষে একটি গরু কোরবানি দিতে দেখা যায় এবং ক্রেতাদের মধ্যে একরকম প্রতিযোগিতা দেখা যায়।

উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে ঈদের আনন্দ অনেক বিলাসবহুল হলেও নিম্নবিত্তদের মধ্যে ঈদ আনন্দ আর সেকালের মত নেই। তাদের চেয়ে থাকতে হয় সমাজের এই উঁচু দুই স্থানে। তবে ইদানিং বেশ কিছু সংস্থা আছে যাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল উদ্যোক্তা তরুণরাই। এসব সংস্থা গরীব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফান্ড করে ঈদের তাদের খাবার ও পোষাকের ব্যবস্থা করে।

ঈদ মানেই আনন্দ তা একাল হোক বা সেকাল। ঈদের আনন্দ ধনী-গরীব প্রত্যেকের মধ্যে সমভাবে বন্টনের মাধ্যমেই একটি ঈদের দিনের পূর্ণ সার্থকতা ফুটে ওঠে।

(Visited 254 times, 1 visits today)

শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

Similar Posts