নতুনদের মন-মানসিকতা বুঝতে শিখুন
আমাদের এই যুগের অনেক তরুণ-তরুণীদের বাবা মা তাদের মন-মানসিকতা সম্পর্কে একবারেই অজ্ঞ। নতুন প্রজন্মের সাথে তাদের এই দূরত্ব অনেক সন্তানের জীবন নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্তানরা তাদের মনের চাহিদা বাবা- মাকে ব্যাক্ত করতে পারছে না, তেমনি পিতা-মাতাও পারছেন না তাদের সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অভিবাবকদের তাদের সন্তানদের মানসিকতা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সন্তানের সুখ-দুঃখের কারণ বোঝার চেষ্টা করুন
আমাদের এই যুগের অনেক তরুণ-তরুণীদের বাবা মা মনে করে থাকেন যে তাদের সন্তানকে খুশি করা অনেক কঠিন, অল্পতে তারা বুঝি খুশি হয় না, এ ধারণা ঠিক নয়৷ এ যুগের বেশিরভাগ ছোকরা-ছোকরিরাই অল্পতেই অনেক খুশি হয়৷ এ ক্ষমতা তারা অর্জন করতে শিখেছে৷ কিন্তু তারা তা প্রকাশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছে৷ তারা নিজেদের আর কোনো প্রকার বিচার বিবেচনার মধ্যে ফেলতে রাজি নয়৷
অনেক বাবা-মায়ের দাবি তারা নাকি আবার কোনো কষ্টের ঘটনায়ও কষ্ট পাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ এ কথা মিথ্যা৷ তারা ঠিকই কষ্ট পায়, কিন্তু আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে তাদের সাব-কনশাস মাইন্ড কষ্ট পায় কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক তা প্রকাশ করতে বাধা দিয়ে রেখেছে৷ এতে তাদের কোনো দোষ নেই৷ এর জন্য তাদের ট্রমা দায়ী৷
মানুষ যতই আমাদের বুঝাক আর যাই করুক, আমরা চাইলেও অতীতকে ভুলতে পারিনা৷ পারবও না। অতীতে ঘটে যাওয়া অনেক আনন্দের ঘটনা আমরা ভুলে যেতে পারি, এটা সম্ভব কিন্তু বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলো মনের গভীরে কোনোনা কোনোভাবে জায়গা করেই নেয়৷ কোমল মনের অধিকারী ব্যাক্তিদের মনে তা আবার ট্রমা হিসেবে থেকে যায়৷ সে বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলো আবার অনেককে পাথরের মতো শক্ত করে ফেলে যে অনেকেই আবার তাদের পাষাণ হিসেবে আখ্যায়িত করে বসেন৷ না, তারা পাষাণ নয়৷ তাদেরও অনুভূতি আছে৷ কিন্তু তারা সে অনুভূতি দেখিয়ে আর ব্যাথিত হতে চায় না৷ সে অনুভূতিগুলো চাইলেই দেখাতে পারে না৷
আমাদের বাদামী চামড়ার বাবা-মাদের এ ব্যাপারে অভ্যস্ত ও সচেতন থাকতে হবে৷ নিজের সন্তানকে চিনতে ও বুঝতে শিখুন৷ আপনি তার অভিভাবক বলেই যে তাকে পুরোপুরি চিনেন ও তার মনের অবস্থা বুঝেন এ ধারণা ভুল৷ সে কি করতে চায়, সে সবকিছু কেমনভাবে নেয় বা অনুভব করে তা বুঝুন ও সমর্থন করুন, তাকে ভালোমতো সময় দিন৷ তার কথা শুনুন, সে কি বলতে চায় তা বুঝার চেষ্টা করুন৷ তাহলেই একদিন না একদিন সে তার ট্রমা নিশ্চয়ই কাটিয়ে উঠবে। তাকে এসব ব্যাপারে চাপ দিলে কোনো লাভ না হয়ে উল্টো ক্ষতি-ই হবে বলা চলে৷
নেশাগ্রস্ত সন্তানদের নিয়ে যা করণীয়ঃ
যেসব বাবা-মায়ের সন্তান নেশাগ্রস্ত, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনার সন্তান এমনি এমনি নেশাগ্রস্ত হয়নি, তার পিছনে নিশ্চয়ই যথাযথ কোনো কারণ রয়েছে, কারণ একজন মানুষ জেনেশুনে নিজের খারাপ কখনোই চাইবে না৷ আমার কথা আপনাদের অনেকেরই পছন্দ হবে না জানি, তা সত্ত্বেও বলছি তাকে বুঝার চেষ্টা করুন ও তাকে এর ক্ষতিকর দিকগুলো বারবার ধরিয়ে দিন, এক্ষেত্রে রেগে গেলে চলবে না, কারণ রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন৷ আপনি রেগে গেলে সে আরো হিংস্র হয়ে উঠবে ও তার কীর্তিকলাপ আরো বাড়িয়ে দিবে৷ আপনার সন্তানকে আপনিই খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করুন৷
মনে রাখবেন, অবসাদগস্ততা ও অতীতের কোনো ট্রমা-ই তাকে এসবের দিকে আকৃষ্ট করেছে৷ সেসব থেকে তাকে বের করে আনার চেষ্টা করুন, সে হয়তো বিনোদনের অভাবে আছে, তাকে সুস্থ বিনোদনের ব্যাবস্থা করে দিন৷ তাকে বুঝান যে সে যেগুলো করছে তাতে তার অবসাদগ্রস্ততা কমবে না, বরং বাড়বে, একদিন না একদিন সে এসব থেকে বেড়িয়ে আসবেই৷