উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ ।। পর্ব-১
“শেষ হয়ে গেলো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের ৬৫তম আসর। কিংসলি কোম্যানের করা গোলে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ ১-০ গোলে পরাজিত করে ফ্রান্সের প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (পিএসজি) – কে। বায়ার্নের মাথায় এখন ইউরোপের ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।”
এটা তো এখন সবারই জানা। ফুটবল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় খেলা। তাই ফুটবল বিশ্বকাপ ও ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ গুলো সবসময়ই ফুটবল বোদ্ধাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। কিন্তু অনেকেই এসব ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাস ও দল বিন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত না। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক ইউরোপের ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের আসর “উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ” এর আদ্যোপান্ত ।
শুরুটা যেভাবে: ইউরোপের ক্লাব গুলো নিয়ে সর্বপ্রথম আয়োজিত প্রতিযোগিতা ছিলো “চ্যালেঞ্জ কাপ”। এরপর একে একে মিত্রোপা কাপ, কুপ দে নেশনস, লাতিন কাপ আয়োজন করার পর মহাদেশ ভিত্তিক একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনের লক্ষ্য স্থির করে ইউনিয়ন অফ ইউরোপিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (উয়েফা)। এরই ধারাবাহিকতায় উয়েফা ১৯৫৫ সাল থেকে ইউরোপ ক্লাবের এই শ্রেষ্ঠত্বের আসর আয়োজন করে আসছে। ১৯৫৫ সালে “ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ক্লাবস কাপ” নামে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মাঝে ১৯৯২ সালে পূর্বের কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন সাধিত করে বর্তমান নতুন নাম নিয়ে আবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
প্রথম আসর : লিসবনের এস্তাদিও নাসিওনাল স্টেডিয়াম (পর্তুগাল) – এ ১৯৫৫ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বরে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ক্লাবস কাপের প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ঐ ম্যাচে স্পোর্টিং সিপি ও পার্তিজান মুখোমুখি হয়। উক্ত ম্যাচটি ৩-৩ গোলে অমিমাংসিত ভাবে শেষ হয়। প্যারিসের পার্ক দেস প্রিন্সেস স্টেডিয়াম (ফ্রান্স)-এ ১৯৫৬ সালের ১৩ই জুন প্রথম আসরের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ ৪–৩ গোলে স্তাদ দে রেঁস-কে হারিয়ে ম্যাচ এবং ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা জিতে নেয়।
আনুষঙ্গিক প্রতিযোগিতা সমূহ : উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ মূলত প্রথম স্তরের প্রতিযোগিতা, এখানে ইউরোপের সেরা ক্লাব গুলো অংশগ্রহণ করে থাকে। এছাড়া যেসব ক্লাব উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের মূল আসরে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হয় সেই দলগুলো দ্বিতীয় স্তরের, উয়েফা ইউরোপা লীগে অংশগ্রহণ করে থাকে। দ্বিতীয় স্তরেও উত্তির্ণ হতে ব্যর্থ হলে ক্লাবগুলো তৃতীয় স্তরের, উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লীগে অংশ নেয়।
এছাড়া চ্যাম্পিয়নস লীগ বিজয়ী দল পরবর্তী মৌসুমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, উয়েফা সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের জন্য মনোনিত হয়। তাদের কোনো বাছাই পর্বে অংশ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। পাশাপাশি উয়েফা ইউরোপা লীগ ও উয়েফা ইউরোপা কনফারেন্স লীগের শিরোপা জয়ী দল দুটির জন্য চ্যাম্পিয়নস লীগের মূল পর্বে অংশগ্রহণের শর্তসমূহ কিছুটা শিথিল করা হয়। এরা সরাসরি গ্রুপ পর্ব থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে। গ্রুপ পর্বে মোট ৩২টি দল নিয়ে মূল প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়।
শিরোপা : এভাবে একে একে ৬৫টি আসর শেষ হয়ে গেছে। তবুও এই প্রতিযোগিতার ঔজ্জ্বল্য লেসমাত্র কমে নি। উল্টো বেড়েই চলেছে। যেমনে করে বেড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের শ্রেষ্ঠত্বের হার। কেননা এখন পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠতম দল তারাই। মোট ১৩ বার এই শিরোপা ঘরে তুলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এছাড়াও এ প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি বার অংশগ্রহণের রেকর্ড (টানা ২২ বার, ১৯৯৭ সালের পর থেকে), টানা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড ( ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ক্লাবস কাপে টানা ৫ বার, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে টানা ৩ বার ) সহ এমন অনেক রেকর্ডই রিয়াল মাদ্রিদের দখলে। শিরোপার দিক থেকে রিয়াল মাদ্রিদের পরবর্তী স্থানে রয়েছে ইতালির ক্লাব এসি মিলান। তারা সর্বমোট ৭বার ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল, জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। উক্ত ক্লাব দুটি প্রত্যেকেই ৬টি করে শিরোপা জিতেছে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ অপরাজিত দল হিসেবে শিরোপা জিতে নেয় ২০১৯-২০ মৌসুমে।