গ্রীস ভ্রমণ (২)- ভূমধ্যসাগরে এক সন্ধ্যা
রাতের আলো ঝলমলে এথেন্স দেখতে অন্যরকম সুন্দর। মনাস্টিরাকি আর প্লাকার শপিং এরিয়া গুলোতে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেত টেরই পেতাম না। দীর্ঘ সরু গলিপথের এইসব দোকানগুলোর প্রতিটাই অন্যটার চেয়ে আলাদা। স্যুভেনির, পোশাক, বাদ্যযন্ত্র থেকে শুরু করে ব্ল্যাক ম্যাজিকের পসরাও সেসবের মাঝে ছিল। আর সেখানেই পাশে থাকা ছোট রেস্তোরাগুলোতে বসে খেতে খেতে যতক্ষণ খুশি আড্ডা দেয়া যায়, তাড়া দেবার কেউ নেই।
এথেন্স ভূমধ্যসাগরের ঠিক পাশেই এবং এথেন্সের পাশে থাকা ভূমধ্যসাগরের এই অংশটা এজিয়ান সাগর নামে পরিচিত। গ্রীস দেশটা অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে তৈরী, তার মাঝে মাত্র ২৭২ টা দ্বীপে মানুষ বসবাস করে। এথেন্সে ঘোরাঘুরি ছাড়াও পর্যটকেরা গ্রীসে আসেন এই সুন্দর দ্বীপগুলো ঘোরার জন্য। মনোরম সৈকত আর সাজানো গোছানো পরিপাটি শহরের জন্য এই দ্বীপগুলো বিখ্যাত। পর্যটকদের কাছে গ্রীসের সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ বললে হয়ত সান্তোরিনির কথা মনে পড়বে যেটার নাম সবাই জানে। কিন্তু এটা ছাড়াও আরো কিছু দ্বীপ আছে যেগুলোতে পর্যটকেরা যায়। এথেন্স ঘোরাঘুরি শেষে আমাদের হাতে আর খুব বেশি সময় ছিল না। তাই শেষদিনে আমরা এথেন্সের সবচেয়ে কাছের দ্বীপ এজিনাতে গিয়েছিলাম।
গ্রীসের বিভিন্ন দ্বীপগুলোতে যাবার জন্য প্রমোদতরী এবং ফেরী এথেন্সের পোর্ট পিরাউস থেকে ছেড়ে যায়। পোর্ট পিরাউস গ্রীসের সবচেয়ে বড় পোর্ট এবং ইউরোপের সবচেয়ে বড় পোর্টগুলোর একটা। এজিনাতে যেতে মোটামুটি দুই ঘন্টার মতো সময় লাগে অর্থাৎ দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। ফেরিতে আমাদের সাথে অন্য পর্যটকেরাও ছিলেন। এজিনাতে যাবার সময় মনে হচ্ছিল, গ্রীসে এসে এর সুন্দর দ্বীপগুলোর অন্তত একটাতে না ঘুরলে গ্রীস ঘোরাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নীল সমুদ্রের ঠান্ডা, নোনা হাওয়া আর সাথে ঝকঝকে রোদে এই জলযাত্রা যে কারো কাছেই ভীষণ ভালো লাগবে। আর এই যাত্রার পুরোটা জুড়েই সামুদ্রিক পাখিরা সঙ্গ দেয় কিছু খাবারের আশায়। আমাদের মতো সব যাত্রীরাই এমন সুন্দর মুহুর্ত ক্যামেরা আর মোবাইলে ধারণে ব্যস্ত ছিল।
এজিনা দ্বীপের বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে বাড়িঘর, দোকানপাট, রেস্তোরা, চার্চ সবকিছুর ছাদ লাল রঙের। দূর থেকেও একে লাল দেখায়। আর এর সৈকত আর ছোট্ট পোর্টটাও সুন্দর, ছিমছাম, সাজানো গোছানো। পড়ন্ত বিকেলে সেখানে বসে সমুদ্রের আছড়ে পড়া ঢেউ দেখতে যে কি ভালো লাগে! এজিনাতে পেস্তাবাদাম খুব ভালো হয়। দ্বীপের রাস্তায় কিছুদূর পরপরে ছোট্ট ছোট্ট দোকানে স্থানীয় অধিবাসীরা পেস্তাবাদাম বিক্রি করে। তারা অনুরোধ করে কেনার আগে সেই বাদাম পরখ করে দেখতে। আর সেগুলো সত্যিই এতো ভালো যে যারা পরখ করে তারা সবাই বাদাম কিনতে বাধ্য হয়।
ফেরার সময় যতক্ষণ পর্যন্ত ফেরি থেকে এজিনা দ্বীপ দেখা যায় ততক্ষণ তাকিয়েছিলাম। আর ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে ডেকে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বুকে সূর্য অস্ত যাওয়াও দেখছিলাম। গ্রীস ভ্রমণের সবচেয়ে সুন্দর অংশ ছিল এই সমুদ্র ভ্রমণ। জানিনা আবার কখনো গ্রীসে যাওয়া হবে কি না, তবে সুন্দর এই স্মৃতিগুলো অনেকদিন মনে থাকবে।