রোমের গল্প (১)

গ্রীসের রাজধানী এথেন্স থেকে আমরা ইতালির রাজধানী রোমে পৌঁছেছিলাম এক বৃষ্টিভেজা বিকেলে। আগে থেকে রায়ানএয়ারের টিকেট কেটে রাখা ছিল যেটা ইউরোপের সবচেয়ে সস্তা এয়ারলাইন হিসেবে পরিচিত। সস্তার সব জিনিস ভালো হয়না তাই সেটা নিয়ে আর বেশি কিছু না বলি। তবে বিমানবন্দরগুলো শহর থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে যাওয়া আসাতেও অনেকটা সময় চলে যায়।

বাস যখন আমাদের নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে শহরের ভেতরে ঢুকে তখন প্রথমবারের মতো রোমকে দেখে মুগ্ধ বিস্ময়ে ঘাড় ঘুরিয়ে এদিকে ওদিকে দেখছিলাম। প্রাচীনত্বের মাঝেও যে কত সৌন্দর্য থাকে, রোম সেটাই মনে করিয়ে দেয়। রোমের সব স্থাপনাই যে অনেক পুরনো তা কিন্তু নয়। পরবর্তীতে তৈরী ভবনগুলোও দেখতে পুরনোগুলোর মতই, তাই সব মিলিয়ে প্রাচীনত্বের একটা দারুণ সামঞ্জস্য তৈরী হয়েছে।

রোম একদিনে তৈরী হয়নি। ইতালির রেনেসাঁ যুগের বিখ্যাত শিল্পীরা তাঁদের অসাধারণ শিল্পকর্ম দিয়ে রোমকে সাজিয়েছেন। রোম বলতে হয়তো চলে আসে জুলিয়াস সিজারের কথা। রোমের পেছনে তার অবদান এবং পরবর্তীতে উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের লেখনীতে সে পরিচয় আরো দৃঢ়তা পেয়েছে। তবে রোম যতটা জুলিয়াস সিজার আর অগাস্টাসের, তার চেয়েও বেশি মাইকেলাঞ্জেলো, বার্নিনি, রাফায়েলো স্যানজিওসহ  অন্যান্য রেনেসাঁ শিল্পীদের। তাঁদের সৃষ্ট ভাস্কর্য আর চিত্রকর্ম দেখার জন্য আজকের রোমে পুরো বছর জুড়ে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। গ্রীসের মতোই রোমের বেশ কিছু স্থাপনা আর ভাস্কর্য জুড়ে আছেন রোমান দেবদেবী ও পৌরাণিক চরিত্রেরা। গ্রীকদের পরের সভ্যতা হচ্ছে রোমান সভ্যতা। গ্রীস দখল করলেও গ্রীকদের সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে রোমানরা তাদের অনেক কিছুই গ্রহণ করেছিল। তাই গ্রীক দেবদেবীদের সাথে রোমান দেবদেবীদের অনেক মিল রয়েছে। সহজ করে বললে রোমে তাদের নাম পরিবর্তন হয়েছে মাত্র।

 

এঞ্জেলস ব্রিজ এবং এর সোজাসোজি অবস্থিত ক্যাসেল স্যান্ট এঞ্জেলো

 

রোমে আরো আছে ছোট, বড় অনেক চার্চ। সেগুলোর বাইরের অংশ যেমন নান্দনিক, ভেতরটাও প্রার্থনাগৃহের পবিত্র নিঃশব্দতা আর স্থাপত্যশৈলীর সৌন্দর্যে তেমনই অনন্য। ক্যাথলিক ধর্মানুসারীদের জন্য রোমের অভ্যন্তরের ছোট্ট দেশ ভ্যাটিকান একটা পবিত্র তীর্থস্থান। টাইবার নদীতীরের রোম শহর, ভ্যাটিকানের সাথে সেই সুদূর অতীত থেকেই কিছু ব্রিজ দিয়ে সংযুক্ত ছিল। এর মাঝে একটা হচ্ছে ভাস্কর জিয়ান লরেঞ্জো বার্নিনির নকশায় তৈরী এঞ্জেলস বা দেবদূতদের ব্রিজ। দশজন দেবদূতের ভাস্কর্য এই ব্রিজে শোভা পাচ্ছে, সেটা থেকেই এর নামকরণ হয়েছে। রোমানদের দাবি এই ব্রিজ শুধু রোম এবং ইতালি নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ব্রিজগুলোর একটা। আর এই ব্রিজের ওপরে হেঁটে যাওয়ার সময় মনে হবে রোমানদের সেই দাবি মোটেও অযৌক্তিক নয়। একসময় রোমে আসা তীর্থযাত্রীরা এই ব্রিজ পার করে ভ্যাটিকানের সেইন্ট পিটারস চার্চের দিকে যেতেন। আর আলোকিত এইসব দেবদূতেরা তাদের পথ দেখাতেন।

 

স্যান্টা মারিয়া সোপরা মিনারভা চার্চের অভ্যন্তর

 

ইউরোপের বাকি বড় শহরগুলোর মতো রোমেও ঘোরার জন্য প্রচুর হাঁটতে হয়। রোমের হিস্টোরিক সেন্টারের (যেখানে প্রায় সবগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে) সরু গলিপথ শুরু হওয়ার অনেক আগেই বাস নামিয়ে দিয়ে যায়। তবে সৌখিন পর্যটকেরা এই সরু গলিপথেও ঘোড়ার গাড়িতে করে ঘুরতে পারেন, যদিও মানুষের ভিড়ে সেই গাড়ির গতি খুবই ধীর হয়। আর মেট্রোর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। কারণ প্রায় পুরো শহরের নিচেই জালের মত অসংখ্য সুড়ঙ্গপথ বিছানো এবং সাথে সমাধিক্ষেত্রও রয়েছে; সম্রাট এবং পোপদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে সেগুলো তৈরী হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ সেগুলো আর নষ্ট করতে চায়নি। তবে আমরা দেখে এসেছিলাম কিছু মেট্রো স্টেশন নির্মাণাধীন। (চলবে)।

 

ইতালির সুপ্রিম কোর্ট

 

রোমের পূর্ববর্তী লেখাগুলো গ্রীস নিয়ে; সেগুলো নিচের লিংকে গিয়ে পড়া যাবে,

গ্রীস ভ্রমণ (১)- গ্রীক পুরাণ, প্রাচীন সভ্যতা ও আধুনিক গণতন্ত্রের মেলবন্ধন: https://banglavibe.com/travel-to-greece-part-1/

গ্রীস ভ্রমণ (২)- ভূমধ্যসাগরে এক সন্ধ্যা: https://banglavibe.com/travel-to-greece-part-2/

Similar Posts