রকমারি রোদচশমা
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজকাল আমরা অনেকেই ব্যবহার করি রোদচশমা বা সানগ্লাস। বাহারি সব রোদচশমা এখন হয়ে উঠেছে আমাদের নিত্যসঙ্গী। তবে রোদচশমা ব্যবহারের ইতিহাস কিন্তু বেশ প্রাচীন। কিংবদন্তি বলছে, রোমান সম্রাট নিরো নাকি প্রথম রোদচশমা ব্যবহারের প্রচলন করেন। তবে নিরোর সমসাময়িক যুগে চিনেও রোদচশমা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেসময়ে মূলত খনির শ্রমিকেরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করতেন।
রোদচশমা যেমন আমাদের চোখকে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা করে, আবার একইসাথে এটি বর্তমানে হয়ে উঠেছে ফ্যাশনের একটি অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ। রোদচশমা কিন্তু আমাদের চোখ ও এর পার্শ্ববর্তী ত্বককে পথের ধুলোবালি থেকে রক্ষা করতেও সমান কার্যকর। এছাড়াও, বাজারে কিছু বিশেষায়িত রোদচশমা পাওয়া যায় যেগুলো সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি (Ultra Violet Ray) থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করে। এসব রোদচশমা অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে সুরক্ষিত রাখতে ৯৯ থেকে ১০০% কার্যকর। তবে এধরণের রোদচশমার দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি। সাধারণত রোদচশমা আমাদের চোখকে দৃশ্যমান রোদের প্রখরতা থেকে ৭০-৯০% সুরক্ষা দেয়।
নারী ও পুরুষদের ব্যবহারের উপযোগী নানান ডিজাইনের আকর্ষণীয় সব রোদচশমা এখন বাজারে পাওয়া যায়। সাধারণ মানের বিভিন্ন রোদচশমার দাম ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। তবে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের হালফ্যাশনের রোদচশমার দাম শুরু হয় ১৫০০ টাকা থেকে। এমনকি ৫০ হাজার টাকা দামের রোদচশমাও বাজারে পাওয়া যায়। তবে রোদচশমা খরিদ করার সময়ে মুখের গড়নের সাথে চশমাটির আকৃতি মানানসই হওয়ার দিকটি মাথায় রাখা দরকার। চেহারার সাথে বেখাপ্পা যে কোনো ধরণের রোদচশমাই হতে পারে দৃষ্টিকটু। ফ্রেম ও গ্লাসের বৈচিত্রে হরেক রকম রোদচশমা এখন সহজেই নজর কাড়ছে যে-কারুর।
রোদচশমার ফ্রেম ধাতব, প্লাস্টিকের কিংবা টাইটেনিয়ামের হতে পারে। এখন বিভিন্ন ধরণের পোলারাইজড কাঁচের চশমা পাওয়া যাচ্ছে। যাদের চোখ অতিমাত্রায় শুষ্ক থাকে, তাদের জন্য এধরণের চশমা বেশ উপযোগী। পোলারাইজড কাঁচের রোদচশমা বাইরের দৃশ্যকে স্বচ্ছভাবে দেখতে সহায়তা করে। এধরণের চশমা সাঁতার কাটার সময়ে ব্যবহার করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
যারা ইতোমধ্যে চোখের সমস্যার জন্য পাওয়ার লেন্স ব্যাবহার করেন তারা তাদের রোদচশমার লেন্সের সাথে তাদের চোখের পাওয়ার সমন্বয় করতে পারেন। এছাড়া মার্কারি সানগ্লাস বাইরের দিকে আয়নার মতো কাজ করে। এর ফলে আমাদের চোখ তীব্র আলোর ঝলকানি থেকে রক্ষা পায়। রোদচশমা যেহেতু ঘরের বাইরে পরার উপযোগী, তাই ঘরের ভিতরে এটি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। রোদচশমার সঠিক যত্ন নিলে এর দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।
রোদচশমা ব্যবহারের পর সবসময়েই একটি নির্দিষ্ট বাক্সে ভরে রাখা উচিত। ব্যবহারের সময়ে কাঁচ স্পর্শ না করে ফ্রেমে ধরা উচিত। এছাড়া একটি নির্দিষ্ট কাপড় ব্যবহার করে রোদচশমা নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। কোনো অবস্থাতেই রোদচশমা জামা কিংবা অন্য কোনো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা ঠিক না। এতে করে কাঁচের উপর স্থায়ী আঁচড় কিংবা দাগ পড়তে পারে। তাছাড়া রোদচশমা পরিষ্কার করার জন্য বাজারে কিছু তরল লেন্স ক্লিনার পাওয়া যায়। প্রয়োজন বোধে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
রোদচশমা শিশুদের নাগালের বাইরে রাখাই ভালো। তবে শিশুদের জন্য পৃথক রোদচশমাও কিনতে পাওয়া যায়। ফ্যাশন সচেতন মানুষের জন্য রোদচশমা এখন একটি নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে পরিণত হয়েছে। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এখনকার তরুণ প্রজন্মের অনেকেরই পছন্দের শীর্ষে বিভিন্ন মডেলের রোদচশমা।