বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তি জিজ্ঞাসা (৩য় পর্ব)
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় অনেক শিক্ষার্থীই দ্বিধান্বিত থাকে কোন কোন কলেজে আবেদন করবে। আজ তাই আলোচনা করব কলেজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে যে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলো নিয়ে।
কলেজ বাছাইয়ে পরামর্শ :
১. প্রথমেই দেখতে হবে কলেজটি অনুমোদনপ্রাপ্ত কি-না। নিয়ম বহির্ভূত কার্যক্রমের জন্য অনেক মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যায়।
২. কলেজটিতে প্রতিটি বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে কি-না। কলেজের ওয়েবসাইট থেকে এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যেতে পারে।
৩. হাসপাতালের ইন্ডোর এবং আউটডোরে যথেষ্ট রোগীর উপস্থিতি থাকে কি-না। কারণ তৃতীয় বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ডে পাঠদান শুরু হয়। রোগী কম থাকলে তাদের হাতে-কলমে শিক্ষায় ঘাটতি থেকে যাবে যা একজন পরিপূর্ণ জ্ঞানসম্পন্ন চিকিৎসক হবার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই তিনটি বিষয় যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য বিবেচ্য। এরপর শিক্ষার্থী তার নিজের বিষয়গুলো চিন্তা করবে।
প্রথমেই আসে মেরিট পজিশন। যেহেতু ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয় তাই মেরিট পজিশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো শিক্ষার্থীর মেরিট পজিশন যদি তুলনামূলক পিছনে হয়ে থাকে আর সে যদি সেসব মেডিকেল কলেজে আবেদন করে যেখানে তার মেরিট পজিশনে পৌঁছার আগেই কলেজের আসন সব বরাদ্দ হয়ে যায়, তাহলে সেই শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে না। এজন্য আবেদন করার আগে ঐ কলেজে বিগত বছরগুলোতে কত মেরিট পজিশন পর্যন্ত ভর্তির সুযোগ পেয়েছে তা জেনে নিতে হবে। নিজের মেরিট পজিশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কলেজ বাছাই করতে হবে।
এরপরে অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়ও বিবেচনা করতে হবে। যেমন : বাড়ি থেকে দূরত্ব, আবাসন ব্যবস্থা, খাবারের যোগান, পরিবহন ইত্যাদি। সমস্ত দিক বিবেচনা করে একজন শিক্ষার্থীকে কলেজ বাছাই করতে হবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দরিদ্র ও মেধাবী কোটা —
প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বাধ্যতামূলক ৫% ‘দরিদ্র ও মেধাবী’ কোটা আছে। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ জন নিতে হবে এই কোটায়। এই কোটায় চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা সরকারি মেডিকেল কলেজের মতো খরচে পড়াশোনা করতে পারে। অর্থাৎ ভর্তি ও টিউশন ফি সরকারি মেডিকেল কলেজে যত টাকা তাদেরকে তত টাকাই পরিশোধ করতে হয়, এর বেশি না।
কারা পায় এ সুযোগ?
যাদের মেরিট পজিশনের অবস্থান খুবই ভালো এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের জন্য এই কোটা।
ভর্তি প্রক্রিয়া —
সাধারণ ছাত্রদের মতো একই সময়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হয়। তবে ‘দরিদ্র ও মেধাবী’ কোটায় আবেদন করলে সাধারণ তালিকায় নাম আসবে না এবং একই কলেজ থেকে কোটা ও সাধারণ উভয় প্রকার ফরম সংগ্রহ করা যাবে না। যেকোনো এক প্রকারের ফরম সংগ্রহ করা যায়। ফরম জমা দেওয়ার সময় অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে অভিভাবকের আয়ের সনদ, স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ (সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ) থেকে আর্থিক অসচ্ছলতার সনদ এবং পারিবারের আর্থিক অবস্থার নোটারীর কাগজ জমা দিতে হবে।
জমাকৃত তথ্য যাচাইয়ের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ আবদেনকারী শিক্ষার্থীদের সাক্ষাতকারের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়। সাক্ষাতকারে প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীর মেরিট পজিশন ও আর্থিক অবস্থার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ভর্তির জন্য মনোয়ন দেওয়া হয়।
এই কোটায় ভর্তি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গুঞ্জন ওঠে অনেক কলেজের ব্যাপারে। এগুলো অনেক ক্ষেত্রে স্রেফ গুজব, আবার হয়তো কখনো সত্যও হতে পারে। তবে কোনো শিক্ষার্থীরই উচিত নয় বিকল্প পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করা; কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের পদক্ষেপ প্রতারকদের প্ররোচনায় হয়ে থাকে। এতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি তো হতেই পারে না, উল্টো অর্থ ও সময় অপচয় হয়।
সর্বোপরি, আর্থিক সঙ্গতি ও দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে একজন শিক্ষার্থী তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বেছে নিতে পারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে। তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় কেউই থেমে থাকে না। সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানেই একজন শিক্ষার্থী একজন দক্ষ চিকিৎসক হয়ে উঠে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়েও উচ্চশিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন দেশের অগণিত চিকিৎসক। কাজেই ডাক্তার হতে হলে প্রতিষ্ঠানের চেয়ে নিজের প্রচেষ্টার গুরুত্বই বেশি। সবার জন্য রইল শুভকামনা।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি বিষয়ক সাধারণ প্রশ্নগুলো তিন পর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এর বাইরে কারো কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে নিঃসঙ্কোচে মন্তব্য ঘরে জানানোর অনুরোধ করছি।
লেখক : শিক্ষার্থী, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, সিলেট।
Bhai, I’m from Sylhet. May I get your contact info?
মুক্তিযোদ্ধা কোটার আলাদা কোন সুবিধা আছে? বাবা শিক্ষক হলে দরিদ্র ও মেধাবী কোটায় এপ্লাই করা যাবে?
মেধাবী কোটা এর জন্য মেরিট পজিশন সর্বনিম্ন কত থাকতে হবে?