মাসলপুল বা মাংসপেশিতে টান লাগায় করণীয়
“রগে টান লেগেছে” এমন কেউ নেই যে এই তিনটা শব্দ শোনেনি। প্রত্যেককেই জীবনের কোনো না কোনো সময় এই শব্দ তিনটার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এটি তীব্র যন্ত্রনা ও প্রচুর বেদনাদায়ক অনুভূতি। একবার হলে সহজে ঠিক হতে চায় না। যার হয় সে অঙ্গ নাড়াতে গেলে ব্যাথা পায় আবার অনেক সময় ভেবাচেকা খেয়ে যায় সে কি করবে। কারন অঙ্গ নাড়াতে গিয়ে আরও টান খাওয়ার আশংকা থাকে। এমতাবস্থায় ঘাবড়ানোটাই স্বাভাবিক। এমনকি সে কি করবে ভেবে পায় না।
মাংসপেশিতে টান খাওয়া বলতে কি বুঝায়?
রগে টান জিনিসটা প্রকৃতপক্ষে মাংসপেশিতে টান। রগে টান বলে কিছু নেই। মানুষের শরীরে অসংখ্য ইয়ার ফোনের তারের মতো রগ রয়েছে। কিন্তু ইয়ার ফোনের তার পেঁচিয়ে গেলেও সৃষ্টিকর্তার কৃপায় মানবদেহের রগ কখনো একটার সাথে আরেকটা পেঁচায় না। তাই রগে টান কথাটা আসলে ভুল। এখন জানা যাক মাংসপেশিতে টান লাগলে আসলে কি হয়।
মাংসপেশিতে টান বা মাসলপুল বলতে মাংসপেশি মুচড়িয়ে যাওয়া, একটা পেশি আরেকটা পেশির উপর উঠে যাওয়া কিংবা ছিড়ে যাওয়াই বোঝায়। এসময় সাধারণত যা হয় তা হলো – তীব্র টানে টিস্যু ছিড়ে যায়, ফলে ব্যাথা অনুভূত হয় আর ল্যাকটিক এসিড নিঃসরণের কারণে জ্বালাপোড়া করে।
এই মাসলপুলের অনুভূতিটা ভয়াবহ। এর প্রভাব ১/২ দিন থেকে ছয়মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
মাসলপুল কি কারণে হয়?
নিম্নোক্ত কারণে মাসলপুল হয়ে থাকে
*ভারী বস্তু বহন করলে
*কোনো মাংসপেশি অনেক্ষণ ধরে ব্যাবহৃত হলে
*ব্যায়াম বা খেলাধুলার আগে ওয়ার্ম আপ না করলে
*পেশী ক্লান্ত থাকা অবস্থায় আকস্মিক নড়াচড়া করলে
*পেশির অনুপযুক্ত ও অতিরিক্ত ব্যাবহার করলে
*অনিয়মিত খাদ্যভাস ও পানি কম খেলে
*শরীরে সোডিয়াম পটাসিয়ামের ঘাটতি হলে
*ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ গ্রহণ না করলে
*ধূমপান, মদ্যপান, গর্ভসঞ্চার, কিডনি ফেইলিউর, মেন্সট্রুয়েসন হলে
*ধূমপায়ীদের পায়ে রক্ত চলাচল কমে যায় ফলে সামান্য হাটলেই টান লাগে
হঠাৎ মাংসপেশিতে টান লাগলে কি করা উচিত?
RICE থেরাপি তথা রেস্ট, আইস, কমপ্রেস ও এলিভেট থেরাপির ব্যাবস্থা করা।
*সব ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বন্ধ রেখে বিশ্রাম নিতে হবে
*বেশি ওজনের কিছু ব্যাথার স্থানে দেওয়া যাবে না
*আঘাতের স্থানে ২-৩ ঘন্টা পরপর বিশ মিনিটের জন্য বরফ দেওয়া
*আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটির নাড়াচাড়া নিয়ন্ত্রণে একটি ব্যাণ্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে
*এলিভেট অর্থাৎ আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটি যতটা সম্ভব উপরে উঠিয়ে রাখতে হবে
বি.দ্রঃ কোনো অবস্থাতেই ব্যাথার জায়গায় প্রথম কয়েকদিন গরম সেক বা মালিশ করা যাবে না। তবে ব্যাথা কমতে শুরু করলে সেক বা মালিশ করতে হবে, অন্যথায় মাংসপেশি বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাবে।
মাংসপেশিতে টান লাগলে চিকিৎসা
মাংসপেশিতে টান পড়লে ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি কাজ না হয় এবং অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পরেও মাংসপেশি ঠিক না হয় তবে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। মাংসপেশি টানটান করতে গিয়ে যদি ব্যাথা হয় তবে আর টানটান করা উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত অবস্থাও হতে পারে। পরিস্থিতি গুরুতর হলে অস্ত্রোপচার করা ছাড়া উপায় নেই।
মাংসপেশির টান এড়াতে ঠিক হয়ে চলাফেরা করুন। অতিরিক্ত ওজনদার বস্তু বহন করবেন না এবং ব্যায়াম বা খেলাধুলা কিংবা যেকোনো শারীরিক কসরত করার পূর্বে ওয়ার্ম আপ করে শরীর গরম করে নিতে হবে। এতে যেটা হয়, শরীর গরম হলে মাংসপেশিগুলো নরম হয়। ফলে দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জয়েন্ট গুলো নাড়াতে সুবিধা হয় এবং টান লাগার সম্ভাবনা থাকে না।
আজ এ পর্যন্তই। ধন্যবাদ।