নিজের মধ্যে জীবন পরিবর্তনকারী ছোট ছোট অভ্যাস যেভাবে গড়ে তুলবেন!
আপনি কি জানেন যে, সহজ ছোট ছোট ভাল কিছু অভ্যাস নিজের মাঝে গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি নিজেকে পুরোপুরি পজিটিভলি চেঞ্জ করতে পারবেন? আর এই অভ্যাসগুলো এত ছোট যে এগুলো করতে প্রতিদিন ১০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট সময় লাগবে। ছোট ছোট অভ্যাসের মাঝেও জীবন কে পরিবর্তন করে দেওয়ার মত শক্তি রয়েছে। কিন্তু সেটা কিভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে।
আপনি কি সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘুমো ঘুমো চোখ নিয়ে মোবাইল খুঁজতে থাকেন? আর ফোন খুঁজে পাওয়ার পর আপনি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার একাউন্ট চেক করতে থাকেন যে কে কত শেয়ার করেছে? কালকের পোস্টে কত লাইক এসেছে? কে কমেন্ট করেছে? আর মা-বাবারা বলেন যে এগুলো আপনার বদ অভ্যাস আর এগুলো ছেড়ে দিতে।
অভ্যাস আমাদের জীবনের সেন্ট্রাল পার্ট। আমরা নিজেরাও জানি না যে আমরা অভ্যাসের সাথে বাস করছি। যেমন আপনি প্রতিদিন সকালে ব্রাশ করেন এটাও একটি অভ্যাস। এই অভ্যাস আপনি ছোটবেলা থেকেই কালটিভেট করা শুরু করেছেন। আর বছরের পর বছর এটা বারবার করার ফলে আপনার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। বিনা কোনো কারণে আপনি বারবার আপনার সেলফোন পকেট থেকে বের করে চেক করছেন এটাও একটি অভ্যাস। আমাদের জীবনের সবকিছুর ফলাফল নির্ভর করে অভ্যাসের ওপর। ছোটবেলা থেকেই আপনি আপনার দাঁত ঠিকভাবে ব্রাশ করেছেন বলেই আজ আপনার দাঁত ভালো আছে। এই অভ্যাস অনেকের না থাকার কারণে আজ তারা হয়তো আফসোস করেন যে কেন এটা ছোটবেলা থেকে করলাম না।
ভালো অভ্যাস করা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে যায়। আমরা মোটিভেট হয়ে শুরু তো করি কিন্তু বেশিদিন তা ধরে রাখতে পারিনা। যেমন ধরুন, আপনি কোনো একটি আর্টিকেল পড়ে মোটিভেট হয়েছেন যে আপনি সকালে অন্তত ১০০ টি পুশ-আপ দিবেন। কিন্তু আপনি ২০ টি পুশ-আপ দেওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে গেলেন অথবা ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত করতে পারলেন। তারপর আবার সেই পুরোনো রুটিনে ফিরে আসলেন। আর এখানেই মোটিভেশন শেষ।
ভালো অভ্যাস বানানোর জন্য মোটিভেশনের থেকে উইলপাওয়ার থাকাটা বেশি জরুরি। উইলপাওয়ার বলতে বুঝায়, ইচ্ছাশক্তি। মোটিভেশন হওয়া ভালো কিন্তু আমরা বেশিরভাগ সময় সেই জিনিসগুলোর ওপরই মোটিভেট হয় যেগুলো আমাদের ভালো লাগে। যেমন- ছুটির দিনে কোথাও একটা ঘুরতে যাওয়া, কিংবা নিজের পছন্দের কোনো গেম খেলা। কিন্তু যখন আপনার রুম গোছানোর কথা আসে তখন মোটিভেশন কোথাও পাওয়া যাবে না। যদি আপনি শুরুতেই আপনার অভ্যাস বদলানোর জন্য অনেক বড় টার্গেট করেন তাহলে আপনার উইলপাওয়ার আপনাকে সাপোর্ট করবে না।
ধরুন, যদি আপনি প্রথম দিনেই ১০০ টি পুশ-আপ দিতে চান তাহলে আপনি সেটা দিতে পারবেন না। প্রথম দিনেই যদি আপনি ৩০ মিনিট মেডিটেশন করতে চান, তো সেটাও আপনি করতে পারবেন না। তাই এটার সলিউশন হলো- মিনি হ্যাবিট। আপনি যা কিছুই নতুন অভ্যাসে পরিবর্তন করতে চান না কেন, সেটা শুরু করতে হবে ছোট হ্যাবিট থেকে। অনেক ছোট ছোট অভ্যাস থেকে।
উদাহরণস্বরূপ- যদি আপনি প্রতিদিন ১০০ টি পুশ-আপ দেওয়ার হ্যাবিট বানাতে চান তাহলে শুরু করুন প্রতিদিন মাত্র ৫ টি পুশ-আপ থেকে। এর সাথে আপনার উইলপাওয়ারও আপনাকে সাপোর্ট করবে। কারণ, পাঁচটি পুশ-আপ দেওয়ার জন্য অনেক কম উইলপাওয়ার দরকার। ৫ টি পুশ-আপ দেওয়া খুব বেশি কিছু মনে হবে না। এর জন্য মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় যথেষ্ট। এগুলোই হলো- মিনি হ্যাবিট।
যদি আপনি প্রতিদিন ৩০ মিনিট মেডিটেশনের অভ্যাস করতে চান তবে শুরু করুন এক মিনিট থেকে। কিছুদিন পর এর সময় অটোমেটিকলি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আপনি সময় বাড়িয়ে ১ মিনিট থেকে ডাইরেক্ট ৩০ মিনিট পর্যন্ত করার কোনো দরকার নেই। ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হবে। যেমন- ১ মিনিট থেকে ২ মিনিট, ২ মিনিট থেকে ৩ মিনিট এভাবে করে। পুশ-আপ করার ক্ষেত্রে এভাবেই করবেন। ৫ টি পুশ আপ থেকে ডাইরেক্ট ২০ টি পুশ-আপে যাবেন না। আজকে ৫ টি, তার দু’দিন পর ৬ টি, তার দু’দিন পর ৭ টি এভাবে।
ঠিক একইভাবে যদি আপনি সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠতে চান, তাহলে আপনার টার্গেট সকাল ৫ টায় না রেখে শুরু করুন সকাল ৭ টা থেকে। কিছুদিন পর ১৫ মিনিট কমিয়ে সকাল ৬ টা ৪৫ মিনিটে ওঠার চেষ্টা করুন। তারপর ৬ টা ৩০ এ। এমন করতে করতে কিছুদিন পর সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
যদি আপনি এই মিনি হ্যাবিটগুলো ফলো করেন তাহলে এখন যা আপনি করে চলেছেন সেটাও করতে পারবেন না। যদি এই মিনি হ্যাবিটগুলো আপনি ফলো করেন তাহলে এগুলো আপনার জীবনের অংশ হয়ে যাবে। আর আপনি কোনো মোটিভেশন ছাড়াই এগুলো প্রতিদিন করতে পারবেন। যেমন- আপনার প্রতিদিন ব্রাশ করতে কোনো মোটিভেশনের দরকার পড়ে না। এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে? এটা এভাবে হয়- যখন আপনি কোনো বাইক চালানো শিখতে যান, শেখার সময় কোথায় ব্রেক চাপতে হবে? কখন ক্লাস ছাড়তে হবে? এই কনফিউশনে বিভ্রান্ত হয়ে যেতেন। আর আজ এটার উপর আপনাকে মনোযোগই দিতে হয় না। কারণ, আপনি এই হ্যাবিটকে আয়ত্ত করে ফেলেছেন। অর্থাৎ, আপনার সাবকনশাস মাইন্ড এটাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। আর এটা আপনার জীবনের অংশ হয়ে গেছে।
ভাবুন তো, বিনা কারণে বারবার ফোন চেক করা কেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে? কী লাভ এতে? কাজের মধ্যে বারবার ফেসবুক চেক করা এটাও একটা ব্যাড হ্যাবিট। ব্যাড হ্যাবিট মনকে হয়তো কিছুটা আনন্দ দিয়ে আপনার প্রচুর সময় নষ্ট করে। মনে রাখবেন, আমাদের বেহ্যাভিয়ার এমন যে আমরা নিজেরাও জানিনা, এগুলো কখন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আপনি যদি নিজেকে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে আপনি জানতে পারবেন, আপনার কোন কোন কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর কোন জিনিসটাকে বদলাতে হবে।