সর্বদা সুখী থাকার উপায়

প্রতিটি মানুষ সুখী হতে চায়। একটুখানি সুখের জন্য চেষ্টা-সাধনার অন্ত নেই কারো। কিন্তু প্রকৃত সুখী হতে পারে কতজন? সারাজীবন নিরন্তর ছুটে চলেও সুখ নামক সোনার হরিণের নাগাল পায় না অনেকে। শত ঝামেলা, প্রতিকূলতার ভীড়ে এক ঝলক সুখেরও দেখা মিলে না কারো কারো জীবনে। আবার কোনো এক অদৃশ্য ছোঁয়ায় কিছু কিছু মানুষের জীবন সবসময়ই সুখে পরিপূর্ণ থাকে। সুখ, শান্তি, ভালোবাসা যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ে তাদের হৃদয়ে, দুনিয়াতেই পায় স্বর্গীয় প্রশান্তি। কীভাবে সম্ভব? আসলে সুখ সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক একটি ব্যাপার। এটি অর্থ-বিত্ত, ধন-সম্পদের উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে মানসিক প্রশান্তির উপর। নীতি-আদর্শ বজায় রেখে ছোট ছোট কিছু বিষয় মেনে চলতে পারলে মানসিক প্রশান্তি অর্জন এত কঠিন বিষয় নয়।

বজায় রাখুন স্বকীয়তা, অল্পতে হোন তৃপ্ত

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে সৃষ্টিকর্তা আলাদা করে তৈরি করেছেন। প্রত্যেকের চিন্তা-ভাবনা, জীবনাচার, চলার পথ ভিন্ন। তাই নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখুন। ব্যক্তিগত সম্মান ও আত্মমর্যাদা ধরে রাখুন। কখনো নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করতে যাবেন না। কেউ আপনার চেয়ে বেশি সুখে থাকলে প্রতিহিংসায় জ্বলে উঠার দরকার নেই। মনে করবেন, আপনিই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। হতাশ হবেন না কখনো। নিজেকে কিংবা অন্য কাউকে অভিযুক্ত না করে কাজে লেগে থাকুন। আস্থা রাখুন নিজের উপর। আপনার জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া যে পূরণ হতে হবে, তা কিন্তু ঠিক নয়। কিছু বিষয়কে যেতে দিন না। নিজেকে শক্ত করে বাস্তবতাকে মেনে নিতে শিখুন। সপ্তাহে একদিন হাসপাতাল থেকে ঘুরে আসবেন। হাজারো মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ, হাহাকার আর আর্তচিৎকার শোনার পর, অল্পতে তৃপ্ত হতে সময় লাগবে না আপনার।

নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিন

কোনো কাজ করতে গেলেই নানা দুঃশ্চিন্তা ভর করে আমাদের মাথায়। কাজের ফলাফল কী হবে, মানুষ কী বলবে, তা নিয়ে পড়ে থাকি আমরা। কিন্তু এতসব ভাবার সময় কোথায়? অতিরিক্ত ভাবনার সাথে টেনশন বেড়ে চলে দ্বিগুণ গতিতে। তাই অহেতুক চিন্তা-ভাবনা বাদ দিন। সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন। অতীতের ব্যর্থতা-গ্লানি ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করুন। ভবিষ্যৎ সাফল্য-ব্যর্থতার দুঃশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিন এখনই। বর্তমানকে নিয়ে বাঁচতে শিখুন। একটু বেহায়া হোন। মানুষের সমালোচনা, টিপ্পনী, উপহাসকে পাত্তা না দিয়ে কাজে লেগে থাকুন।

সবাইকে সাথে নিয়ে সুখী থাকুন

একা একা কখনো সুখী থাকা সম্ভব নয়। আশেপাশের মানুষজন যদি দুঃখ-কষ্টে ভারাক্রান্ত থাকে, তাহলে আপনার সুখের পায়রাও ঠিকমতো উড়বে না। তাই সবাইকে নিয়ে সুখী থাকার চেষ্টা করুন। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে গল্প-আড্ডায় উপভোগ্য সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। নিজের মতো করে সবাইকে ভালোবাসুন। মানুষের বিপদে আপদে বাড়িয়ে দিন সহযোগিতার হাত। তাদের আবেগ অনুভূতিমাখা কথাগুলো শোনার জন্য হয়ে উঠুন উত্তম শ্রোতা। প্রিয় মানুষদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে বুকের গভীরে টেনে নিন। তাদের সব বিষয়ে নাক না গলিয়ে একটু স্বাধীনভাবে চলতে দিন।

নিজের পরিচর্যায় সময় দিন

আপনি নিজেই যদি ভালো থাকতে না পারেন, তাহলে আপনার চারপাশটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলবেন কীভাবে? শরীর সুস্থ না থাকলে মনে কখনো শান্তি আসে না। তাই সবার আগে নিজেকে ভালোবাসুন। নিজের জন্য একটু সময় বের করুন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নিজেকে নিয়ে চিন্তাভাবনা/ধ্যানমগ্ন হয়ে কাটান। বিশেষভাবে খাবার ও ঘুমের প্রতি যত্নবান হোন। শরীরচর্চা করুন নিয়মিত। অগোছালো না থেকে পরিপাটি থাকার চেষ্টা করুন।

ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করুন

ধৈর্য ছাড়া সফলতা আসে না। তাই সকল কাজে ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করে যান। কাল করবো, পরশু করবো – এই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কাজটি আজই শুরু করুন। তারপর কঠোর পরিশ্রম করে সেই কাজে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করুন। কখনো পিছপা হওয়ার চিন্তাও করবেন না।

নির্ভরশীলতা পরিহার করুন

সমাজে চলতে গেলে অনেক মানুষের সাথে মিশতে হয়। তবে বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতার বিকল্প নেই। অসৎ মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। আর কারো প্রতি নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি ছাড়া আপনার জীবন থমকে থাকবে – এ চিন্তা পরিহার করুন।

সুখের দেখা পাওয়ার জন্য এগুলো ছাড়াও আরো কিছু পরিবর্তন আনতে হবে আপনার জীবনে। জীবনের কঠিন সব সমস্যাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবেন না। কারণ খুঁজে বের করে ঠান্ডা মাথায় তা সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রিয় মানুষদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার পরিবর্তে বাস্তবে যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন। প্রাণখুলে হাসুন সবসময়। জীবনের বাস্তবমুখী লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে চলুন দুর্বার গতিতে। এতকিছু করার পরে সুখ আপনার দুয়ারে হাজিরা না দিয়ে পারবে না। ফুল-ফসলে শোভিত বাগানের মতো আপনার জীবনও হয়ে উঠবে তখন সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধিতে ভরপুর।

Similar Posts

3 Comments

  1. আসলেই, মানুষের সমালোচনা পাত্তা না দিয়ে একটু না হয় বেহায়াই হওয়া দরকার।

  2. ভালো লিখেছেন। আমি নিজেকে একজন সুখী মানুষ ভাবি। পরনির্ভরশীলতা না থাকা আর সকল নেগেটিভিটি থেকে খুঁজে খুঁজে পজেটিভিটি বের করে আনতে পারার কারণেই আমি নিজেকে সুখী মানুষ ভাবি ? আলহামদুলিল্লাহ

Comments are closed.