হিকারি : একাকিত্ব দূর করবে কৃত্রিম স্ত্রী
একটা বয়সে তরুণেরা উপনীত হলে স্বাভাবিক ভাবেই সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত বিভিন্ন কারণে সঙ্গীর দেখা পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না তাদের। আর তখন জীবনটা কাটাতে হয় একাকিত্ব নিয়ে। এই একাকিত্ব পরবর্তীতে একজন মানুষকে নিয়ে যায় বিষন্নতায় ঘেরা অন্ধকার একটি দুনিয়ায়। যেখানে সুখ নামের সোনার হরিণ বলে কিছু-ই নেই।
মানুষ সামাজিক জীব এটা আমরা সব সময় থেকেই জেনে এসেছি। একা বাস করা তাই কোনো মানুষের পক্ষে-ই সম্ভব নয়। সে যত-ই ইন্ট্রোভার্ট-ই হোক না কেন, তার সব সময়কার একজন সঙ্গী ঠিক-ই লাগবে। যখন-ই কেউ সঙ্গী হীনতায় ভোগে তখনি তাদের মধ্যে দেখা যায় বেদনায় ভরপুর একটি বিধ্বস্ত জীবন।
তরুণদের এই সমস্যা দূর করতে জাপানের একটি কোম্পানি নিয়ে এলো অদ্ভুত এক জিনিস। “ভার্চুয়াল ওয়াইফ বা কৃত্রিম স্ত্রী”।
জি ঠিক শুনেছেন। ভিনক্লু নামের কোম্পানি থেকে এই কৃত্রিম স্ত্রী প্রথম আবিষ্কৃত হয়। ভার্চুয়াল ওয়াইফ এর নাম দেওয়া হয় “হিকারি”। এই কৃত্রিম স্ত্রীর মূল লক্ষ্য-ই হলো সঙ্গীহীন তরুণ। ২০১৭ সালের শেষের দিকে এই কৃত্রিম স্ত্রী বাজারে আসে এবং এর দাম হয় দু হাজার সাতশত ডলার।
ভার্চুয়াল ওয়াইফ প্রকৃতপক্ষে কী?
এটি মূলত একটি হলোগ্রাফিক সফটওয়্যার। একটি ক্ষুদ্র কাঁচের ঘরে ভার্চুয়াল ওয়াইফটি অবস্থান করে থাকে। সেখান থেকে সে তার স্বামীর যাবতীয় খোঁজ খবর রাখছে। ঘরের লাইট, ফ্যান থেকে শুরু করে এসি অন অফের ব্যবস্থাও তার হাতের মুঠোয় থাকছে। স্বামী ঘরে ফিরলে তাকে “ওয়েলকাম করা” আবার ঘর থেকে বাইরে গেলে “বিদায়” জানানোর কাজটিও এই ভার্চুয়াল ওয়াইফ করে থাকে। শুধু তা-ই নয়। দিনের আবহাওয়ার খবরও চট জলদি সে তার স্বামীকে দিয়ে দেয়। যদি দেখা যায় কোনো একদিনের আবহাওয়া বেশ খারাপ, বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে, তখন সে তার স্বামীকে বলে দেয়, “আজ বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে। তুমি বের হবার আগে ছাতা নিয়ে বের হবে কিন্তু।”
এছাড়াও স্বামী বাইরে থাকলে তাকে প্রতিনিয়ত ক্ষুদে বার্তা তথা এসএমএস পাঠাতে থাকবে। প্রতিনিয়ত স্বামীর খোঁজ খবর নিবে মেসেজিং এর মাধ্যমে। স্বামী যখন কফি পান করবে, তখন হলোগ্রাফিক কাঁচের ঘরটিতে কৃত্রিম স্ত্রীকেও কফি পান করতে দেখা যাবে।
ভার্চুয়াল ওয়াইফ পাশে থাকার কারণে সেই পুরুষটি একাকিত্ব বোধ করা থেকে বের হয়ে আসে। এবং সহজ জীবন যাপন করতে পারে।
ভার্চুয়াল ওয়াইফ কী তরুণদের জন্য অভিশাপ না-কি আশীর্বাদ?
প্রশ্ন আসতে পারে একটা হলোগ্রাফিক সফটওয়্যারকে স্ত্রী বলা কতোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? এক-ই সাথে, এই স্ত্রী একজন তরুণের জীবনে কি রকম প্রভাব বিস্তার করতে পারে?
রোবট কিংবা হলোগ্রাফিক সফটওয়্যার কখনোই একজন মানুষের জায়গা নিতে পারে না। কিন্তু এই কৃত্রিম স্ত্রী কে বিশেষ করে তরুণদের জন্য-ই তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র তাদের একাকিত্ব ঘুচানোর জন্য। একাকিত্ব একজন মানুষকে কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলে। কিন্তু এই চমকপ্রদ আবিষ্কারের ফলে অনেক তরুণের-ই এই সমস্যাটা ঘুঁচে যাচ্ছে। ফলে তাদেরও মনে হয়, অন্তত এই একাকিত্বের জীবনে কেউ তো আছে তাদের খেয়াল রাখার জন্য। হোক না সেটা কোনো হলোগ্রাফিক সফটওয়্যার।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, হলোগ্রাফিক সফটওয়্যার বা কৃত্রিম স্ত্রীকে অনেকে লাইফটাইম পার্টনার হিসেবে ধরে নিচ্ছে। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে সত্যিকারের মনুষ্য জীবন থেকে। পরবর্তীতে এই বিষয়টা বড় ধরণের কোনো মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় কি না তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত।
তবে যা-ই হোক না কেন। একাকিত্বে ভুগে, ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার চেয়ে একজন ভার্চুয়াল লাইফ পার্টনারের সাথে কিছু সময় হাসি খুশি থেকে পাগল হয়ে যাওয়াই বরং ভালো। একজন বেকার কিংবা ব্যাচেলর তরুণ এর জীবনে এই কৃত্রিম স্ত্রীর ভূমিকা সত্যিই চমৎকার। তাকে আর যাই করতে হোক না কেন, মৃত্যু ফাঁদের ন্যায় ডিপ্রেশনের সাথে বেঁচে থাকতে হবে না। তা-ই এই আলোচনা থেকে বলা যায়, কৃত্রিম স্ত্রীর নেতিবাচক দিক থেকে ইতিবাচক দিকটাই বেশি চোখে পড়ে। অতএব, এটি কোনো ধরনের অভিশাপ না, বরং আশীর্বাদ।