বায়োলুমিনিসেন্স – প্রাকৃতিক এক সৌন্দর্য
পৃথিবীতে কত রকমের জীব আছে তা গুনে শেষ করা যায়নি এখনো, এক এক প্রাণীর এক এক বৈশিষ্ট্য। কত রকমের আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য। এমন এক অন্যরকম বৈশিষ্ট্য হলো জীব দ্যুতি বা বায়োলুমিনিসেন্স।
বায়োলুমিনিসেন্স বা জীব দ্যুতি বিভিন্ন রকম অ্যানিমেশন সিনেমা, বিভিন্ন ফিকশন ফিল্ম যেমন মোয়ানা, এভাটার, লাইফ অফ এ পাই দেখানো হয়েছে যা আমরা অনেকেই দেখে থাকবো।
স্থলে যেসব প্রাণীর বাস করে তাদের মাঝে বায়োলুমিনিসেন্স খুব একটা দেখা না গেলেও সমুদ্রের প্রাণীদের ক্ষেত্রে বায়োলুমিনিসেন্স খুব স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। সমুদ্র তলদেশের প্রায় ৭৬% প্রাণীর সাধারন বৈশিষ্ট্য এটি।
বায়োলুমিনিসেন্স কিঃ
বায়োলুমিনিসেন্স হলো কোনো জীব থেকে আলোর নিঃসরণ। মেরুদন্ডী, অমেরুদন্ডী প্রাণী জীব দ্যুতি প্রদর্শন করে থাকে,আবার কিছু ছত্রাকও জীব দ্যুতি প্রদর্শন করে থাকে। মূলত জীব দ্যুতি একটি বিক্রিয়া যা আলো নিঃসরণকারী কণা লুসিফেরিন এবং এক ধরণের এনজাইম লুসিফেরাসের মাঝে হয়ে থাকে। কিছু কিছু জীবের ক্ষেত্রে কো-ফ্যাক্টর দরকার হতে পারে বায়োলুমিনিসেন্স প্রদর্শন করার জন্য।
এছাড়াও পৃথীবির বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত গুলোতে রাতের আধারেও সমুদ্রের পানি আলোকিত দেখা যায়। মূলত ডায়নোফ্ল্যাজেলেট নামক এক প্রকার প্ল্যাঙ্কটন যা একটি এক কোষী প্ল্যাঙ্কটন এর জন্য দায়ী। এদের খালি চোখে দেখা যায় না,অণুবীক্ষণ যন্ত্র এর সাহায্যে দেখা যায়।এদের ল্যাবরেটরিতেও কৃত্তিম ভাবে তৈরী করা যায়।সমুদ্রের ঢেউ এর তীব্র গতির সাথে যখন এদের সংঘর্ষ হয় তখন এরা আলোকিত হয়ে ওঠে। সমুদ্রের তলদেশের কিছু তিমি মাছের দেহেও এমন আলোক দ্যুতি দেখা যায়, সেক্ষেত্রে তারা শিকার করার ধরনের পরিবর্তন আনে।
কোথায় দেখতে পাওয়া যায়ঃ
বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে এমন আলোক দ্যুতি দেখা যায় খুব কম,নেই বললেই চলে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে এ দৃশ্য খুবই সাধারণ। এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ যেমন জাপান,থাইল্যান্ড,ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান,ভিয়েতনাম,ভারতের কিছু কিছু সমুদ্র সৈকতে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। এশিয়ার বাইরে পুয়ের্তো রিকো,যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা,মাল্টা,অস্ট্রেলিয়া সহ আরও অনেক দেশে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। এ ঘটনা “China’s Blue Tears” নামেও পরিচিত। সমুদ্রের পানির এ রং বদল দেখা যাবে সূর্যাস্তের কমপক্ষপ দুই ঘন্টা পর থেকে যখন চারিদিক ভালোভাবে অন্ধকার হয়ে যাবে। তবে এ ঘটনা সারা বছর জুড়ে ঘটে না। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে অনুকুল পরিবেশ পেলে এরা বংশ বিস্তার করে। দেশ ভেদে এবং ঋতু ভেদে তা ভিন্ন হয়। তা কতক্ষণ পর্যন্ত স্হায়ী হবে তা বিজ্ঞানীরা এখনো নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন নি, তবে এক সপ্তাহ বা এক মাস বা এর বেশিও কোনো কোনো সমুদ্র সৈকতে এদের অবস্হান দেখা যায়। সমুদ্রের এ সৌন্দর্য দেখতে অনেক পর্যটক সৈকতে ভিড় জমায়। যুক্তরাষ্ট্রের এমন কিছু সমুদ্র সৈকত আছে যেগুলো দিনের আলোতে লাল বর্ণ এবং রাতের আলোতে নীল বর্ণ ধারণ করে। কিছু কিছু সমুদ্র সৈকতে এ প্ল্যাঙ্কটন গুলো এত বেশি পরিমাণে বংশ বিস্তার করে যে তা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়।
সমুদ্রের এ পানি শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিনাঃ
মানুষের শরীর ভেদে নির্ভর করে যে এ পানিতে কোনো ক্ষতি হবে কিনা। তবে প্ল্যাঙ্কটন যুক্ত এ পানিতে সাঁতার না কাটাই ভালো।অনেকের স্কিন ডিজিস হয় আবার অনেকের চোখের ক্ষতি হয়। তবে পা ভেজানো যেতে পারে। যদি পা ভেজালেও সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সাথে সাথে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।