মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আদ্যোপান্ত (৫ম পর্ব)
গত চারটি পর্ব মনোযোগ দিয়ে পড়ে আসলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রায় সব ধরণের বিভ্রান্তিই দূর হয়ে যাওয়ার কথা। আমরা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একদম শুরু থেকে সবিস্তারে আলোচনা করেছি। আজকে আমরা কথা বলবো মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সম্বন্ধে কিছু অস্পষ্টতা ও প্রয়োজনীয় কিছু টিপস নিয়ে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এটা এই সিক্যুয়েলের পঞ্চম ও শেষ লেখা। আশা করি লেখাটির ভালোভাবে পড়লে যাবতীয় বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা দূর হবে।
দশমিকের ব্যবধানে ভাগ্য:
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের মান ১। আর একটি ভুল উত্তর দিলে ০.২৫ নেগেটিভ মার্কিং আছে। এ কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দশমিকে চলে আসে। দেখা যায়,মাত্র এক নম্বরের ব্যবধানেই কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। তাই, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি দশমিকের হিসেবে নির্ধারিত হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভাগ্য।
প্রতি আসনের জন্য ১৮ জনের লড়াই:
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি ৩৬টি মেডিকেল কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৪০৬৮টি। এসমস্ত আসনে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতি বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ৭২ হাজার শিক্ষার্থী। অর্থাৎ,প্রতি আসনের জন্য প্রায় ১৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। বেসরকারি ও সেনাবাহিনি পরিচালিত মেডিকেল কলেজগুলোতে সম্মিলিতভাবে আরো প্রায় ছয় হাজার আসন রয়েছে।
প্রশ্ন ফাঁসের গুজব:
প্রতি বছরই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আগে একটি অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁসের গুজব রটিয়ে পরীক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে। অনেক সময়ে তারা পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতারিত করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। আমাদের উচিত এসব প্রতারণার ফাঁদ থেকে সুরক্ষিত থাকা এবং মনোযোগ সহকারে পড়ালেখা করা।
মিডিয়াম ও ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা:
প্রতি বছরই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সময়ে ইংলিশ মিডিয়াম এবং ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীরা একটা অনিশ্চয়তায় ভোগে। ইংলিশ মিডিয়ামের এ লেভেল পাশকৃত শিক্ষার্থীদের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি এইচএসসি সমমান সনদ সংগ্রহ করতে হয়। মাত্র তিন মাসের সময়কালে তাদের পক্ষে সম্পূর্ণ নতুন সিলেবাস আত্মস্থ করা অনেকটাই কঠিন।
আর,ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সিলেবাস সম্পূর্ণ এক থাকলেও তাদের বইয়ের সাথে বাংলা মাধ্যমের পাঠ্যপুস্তকগুলোর কিছু তথ্যগত অসংগতি থাকে;সেগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে দেখে নিতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের ভাষা হিসেবে ইংরেজি নির্বাচন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের প্রশ্নপত্র ইংরেজিতে সরবরাহ করা হবে।
জেলা,আদিবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা:
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীই ২০% জেলা কোটার আওতায় পড়ে। দেশের প্রতিটি জেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। জেলা কোটায় ভর্তির সুযোগ পেলে শিক্ষার্থীকে ভর্তির সময়ে সংশ্লিষ্ট জেলায় তার স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে, অন্যথায় তার ভর্তি বাতিল হতে পারে।
পার্বত্য অঞ্চল ও সমতলে বসবাসকারী উপজাতি জনগোষ্ঠী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও সন্তানের সন্তানের জন্যও মেডিকেলে নির্দিষ্ট কোটা রয়েছে। এক্ষেত্রেও পরীক্ষার্থীদের ভর্তির সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে হবে। উপজাতি প্রার্থীদের ক্ষেত্রে কোটায় চান্স পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সার্কেল চিফ অথবা বোমাং প্রধানের সাক্ষরিত সনদ জমা দিতে হয়।
পরীক্ষা কক্ষে:
১/ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় যেহেতু নেগেটিভ মার্কিং বিদ্যমান,তাই খুবই সাবধানতার সাথে প্রতিটি বৃত্ত ভরাট করতে হবে। সম্পূর্ণ আন্দাজে কোনো উত্তর দেওয়া উচিত হবে না। দুইটি বিকল্পের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকলে স্থিরভাবে বিবেচনা করে একটি দাগানো যেতে পারে।
২/ কালো কালির বল পয়েন্ট কলম দিয়ে বৃত্ত সম্পূর্ণভাবে ভরাট করতে হবে। বৃত্ত আংশিক বা অসম্পূর্ণ ভরাট করলে খাতা ঠিকভাবে মূল্যায়ন হবে না।
৩/ পরীক্ষার খাতায় কোন অযাচিত দাগ দেয়া যাবে না।
৪/ প্রশ্নপত্রে কোনোপ্রকার দাগ দেয়া যাবে না।
৫/ উত্তরপত্র কোনো অবস্থাতেই ভাঁজ করা যাবে না।
৬/ এক ঘণ্টা নির্ধারিত সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৭/ যেহেতু হাতঘড়ি নেয়া যাবেনা তাই পরীক্ষা কক্ষের দেওয়াল ঘড়িটির দিকে নজর রাখতে হবে।
৮/ খুবই সতর্কতার সাথে ঠান্ডা মাথায় রোল নং ও রেজিস্ট্রেশন নং পূরণ করতে হবে। কোনো কারণে এটি ভুল দাগালে খাতা বাতিল করা হবে।
৯/ কোনো অবস্থাতেই একাধিক বিকল্পে বৃত্ত ভরাট করা যাবে না।
১০/ পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে অবশ্যই প্রবেশপত্র সাথে নিতে হবে।
১১/ একাধিক কালো কালির বল পয়েন্ট কলম সাথে রাখতে হবে।
১২/ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রওনা হয়ে বেশ কিছুটা সময় হাতে রেখেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে। এছাড়া,ট্রাফিক জ্যামসহ অন্যান্য বিষয়গুলির জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে দেরি হওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার।
১৩/ শান্ত মাথায় ধীর-স্থিরভাবে বৃত্ত ভরাট করতে হবে। এতো বড়ো পরীক্ষায় একটু নার্ভাস হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই চাপ সব পরিক্ষার্থীই সমানভাবে অনুভব করছে।
১৪/ প্রশ্ন ভালোভাবে পড়ে দাগাতে হবে। অনেক প্রশ্নই একটু জটিলভাবে দেওয়া হয়।
১৫/ পানির বোতল সাথে রাখা যেতে পারে।
পরীক্ষার প্রস্তুতি:
১/ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে পড়া ভালো।
২/ কোনো বিষয় মুখস্ত না করে বুঝে বুঝে পড়া উচিত।
৩/ একই জিনিস একাধিকবার রিভিশন দিলে সহজে মনে থাকবে।
৪/ বিগত বছরগুলোর প্রশ্নপত্র সমাধান করতে হবে। এতে করে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা হবে।
৫/ নির্দিষ্ট সময় ধরে বারবার পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যাচাই করতে হবে।
৬/ অযথা সময় নষ্ট না করে ভর্তি পরীক্ষার পূর্ববর্তী তিন মাস নিবিষ্টভাবে পড়াশোনা করতে হবে।
৭/ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার খুবই সীমিত করতে হবে।
৮/ বই দাগিয়ে অথবা খাতায় নিজে নোট করে পড়তে হবে।
৯/ প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করা উচিত। এতে মানসিক চাপ কমে,আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং মানসিকভাবে অন্যদের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকা যায়।
মঙ্গল হোক সকলের। খুব তাড়াতাড়িই দেখা হবে মেডিকেল কলেজের আঙিনায় সাদা অ্যাপ্রোনের জগতে!
লেখক:শিক্ষার্থী, পাবনা মেডিকেল কলেজ।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ লিখা,,,
ধন্যবাদ
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য লেখাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সবার উপকারে আসলেই আমার সার্থকতা।