মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আদ্যোপান্ত ( ১ম পর্ব )
সাদা অ্যাপ্রোন পরে,স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকে থাকে অনেকেরই। বড়ো হয়ে কী হতে চাও—কেউ এমন প্রশ্ন করলে ছোটবেলায় অনেকেই চট করে বলে দেয়,“ডাক্তার”। বাংলাদেশে প্রতি বছর মেডিকেল কলেজসমূহে ভর্তি হওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত হয় “মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা”। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৩৬টি সরকারি,৭১টি বেসরকারি এবং ৭টি সেনাবাহিনি পরিচালিত মেডিকেল কলেজ আছে। এসব মেডিকেল কলেজসমূহে ভর্তি হতে গেলে উত্তীর্ণ হতে হবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার খুঁটিনাটি।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা মোট ৩০০ নম্বরের হয়ে থাকে। এর মধ্যে বহুনির্বাচনি প্রশ্নপত্রে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ১০০ নম্বর এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০০ নম্বর থাকে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হতে হবে এবং এসএসসি ও এইচএসসি-তে সম্মিলিতভাবে মোট জিপিএ ১০.০০ এর মধ্যে কমপক্ষে ৯.০০ থাকতে হবে। অর্থাৎ, কেউ এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.০০ পেলে সে সহজেই এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। বহুনির্বাচনি পরীক্ষায় পাশ মার্ক ৪০। এসএসসি এবং এইচএসসির জিপিএ-র ভিত্তিতে যে ২০০ নম্বরের মূল্যায়ন করা হয়,সেটি হলো—
এসএসসির জিপিএ x ১৫ এবং
এইচএসসির জিপিএ x ২৫
অর্থাৎ,যদি কেউ এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫.০০ পায়,তাহলে সে (৫x১৫)+(৫x২৫)=২০০ নম্বর পাবে।
এখন চলে আসা যাক ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনি পরীক্ষার দিকে। ১০০ নম্বরের পরীক্ষার মানবণ্টন নিম্নরূপ—
জীববিজ্ঞান → ৩০
রসায়ন → ২৫
পদার্থবিজ্ঞান → ২০
ইংরেজি → ১৫
সাধারণ জ্ঞান → ১০
সাধারণ জ্ঞানের মধ্যে আবার ৬ নং থাকে বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়াবলিতে এবং ৪ নং থাকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে। প্রতিটি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের মান ১ এবং একটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নেগেটিভ মার্কিং প্রযোজ্য। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস হলো উচ্চ মাধ্যমিকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সম্পূর্ণ সিলেবাস।মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মোট সময় ১ ঘণ্টা। বাংলাদেশের ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজে বর্তমানে মোট আসন সংখ্যা—৪০৬৮টি। দ্বিতীয়বার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে (সেকেন্ড টাইমার) মোট নম্বর থেকে ৫ বিয়োগ করা হয়। এছাড়া, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা,জেলা কোটা ও আদিবাসী কোটা প্রযোজ্য। অংশগ্রহণকারী সকল পরিক্ষার্থীর জন্য ২০% জেলা কোটা এবং অল্প কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক আদিবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা আছে।
এখন জেনে নেয়া যাক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং সেনাবাহিনি পরিচালিত মেডিকেল কলেজসমূহের ব্যাপারে।মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হলেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলি তে ভর্তি হওয়া যায়।কিন্তু ভালোমানের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হতে মেধাতালিকায় ভালো অবস্থানও প্রয়োজনীয়। তবে,সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর তুলনায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজসমূহে পড়ালেখা করা বেশ একটু ব্যয়বহুল।
এছাড়া,বাংলাদেশ সেনাবাহিনি পরিচালিত একটি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ এবং ৬টি আর্মি মেডিকেল কলেজ আছে।এই মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য পৃথক একটি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।সেনাবাহিনি পরিচালিত পরীক্ষাটিতে আসন সংখ্যা খুবই সীমিত এবং বেশ কিছু আসন সামরিক বাহিনির কোটা দ্বারা সংরক্ষিত।
সুতরাং, চিকিৎসক হয়ে দেশকে সেবা করার মহান ব্রত নিতে চাইলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিশেষ মনোযোগের সাথে পড়াশোনা করার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: শিক্ষার্থী, পাবনা মেডিকেল কলেজ।
অনেক দরকার ছিল এরকম একটা লেখার৷ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ। সবার উপকারে আসলেই আমার সার্থকতা।