কলা : উপাদান,উপকারীতা ও গুণ
কলা হলো স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু ফল। এতে থাকা খনিজ উপাদানগুলো আমাদের হজমে সাহায্য করে, হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। স্নাক বা হালকা খাবার হিসেবে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, সহজলভ্য এবং এর পুষ্টিগুণ ও অনেক।
এই আর্টিকেলে কলার উপাদান, উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।
গঠন উপাদান
কলা সারাবিশ্বে সমানভাবে জনপ্রিয় একটি ফল। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশেই অনেক ধরনের কলা পাওয়া যায়। সাধারণত কলা অপরিপক্ক অবস্থায় সবুজ থাকে এবং পাকলে হলুদ রং ধারণ করে।
একটা মাঝামাঝি আকারের কলা (১১৮ গ্রাম) থেকে প্রায় ১১৮ ক্যালরির মতো শক্তি পাওয়া যায়। কলাতে প্রাপ্ত উপাদানগুলো হলোঃ
- পটাশিয়াম – ৯%
- ভিটামিন বি-৬ – ৩৩%
- ভিটামিন সি -১১%
- ম্যাগনেসিয়াম-৮%
- কপার – ১০%
- ম্যাঙ্গানিজ- ১৪%
- তন্তু -(3.1 grams)
- প্রোটিন বা আমিষ-( 1.3 grams)
- ফ্যাট বা চর্বি – (0.4 grams)
কলা যখন সবুজ থাকে তখন বেশি পরিমাণে স্টার্চ থাকে আবার যখন কলা পাকে তখন এই স্টার্চ বিভিন্ন শ্যুগার যেমনঃ গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ,সুক্রোজে পরিবর্তন হয়ে যায়।
কলা যে রোগগুলো থেকে বাঁচায়
রক্তচাপ/ Blood Pressure
The American Heart Association এর মতে যত কম পরিমাণে আলাদা লবণ,সোডিয়াম খাওয়া যায় এবং যত বেশি পরিমানে পটাশিয়াম খাওয়া যায় হৃদপিণ্ডের জন্য তত ভালো। আর কলা হলো পটাশিয়ামের ভালো উৎস।
একটা মাঝামাঝি আকারের কলা দৈনিক পটাশিয়াম চাহিদার ৯% পূরণ করতে পারে।
শ্বাসকষ্ট /Asthma
২০০৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে কলা শিশুদের শ্বাসকষ্টের হার কমায়। কলার কোন উপাদানের কারণে এমনটি হয় এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায় নি। তবে, ধারণা করা হয় কলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ এবং পটাশিয়ামের আধিক্যের কারণে এমনটি হয়।
ক্যান্সার
কলাতে থাকে লেকটিন (lectin) নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তের ক্যান্সার বা লিউকেমিয়ার কোষগুলো বাড়তে বাধা দেয়।
২০০৪ সালের এক গবেষণা দেখায় যে যেসকল শিশুরা কলা,কমলার রস প্রায়ই খায় তাদের লিউকেমিয়ার ঝুঁকি কম।
হৃদপিণ্ডের যাবতীয় অসুখ
কলার তন্তু (fibre), পটাশিয়াম, ফোলেট,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,ভিটামিন -সি উপাদানগুলো আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
এছাড়া তন্তুময় যেকোনো খাবার হৃদপিণ্ডজনিত রোগের আশঙ্কা কমায়।
হজমক্রিয়ায় সাহায্য
কলার মধ্যে যে পানি এবং তন্তু থাকে তা আমাদের হজমক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। একটা মাঝামাঝি আকারের কলা দৈনিক যতটুকু ফাইবার বা তন্তু দরকার তার ১০% সরবরাহ করে।
ডায়রিয়ার সময় দেহ থেকে প্রচুর পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যায়। ঐসময় কলা খেলে পটাশিয়ামের অভাব পূরণ হয়।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে ও মন ফুরফু্রে রাখতে
কলাতে ট্রিপ্টোফ্যান নাম অ্যামিনো এসিড থাকে যা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে, কোনো তথ্য সহজে মনে রাখতে এবং মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
খাওয়ার জন্যে কিছু টিপস-
- কলা ফালি করে কেটে সকালের নাস্তার সাথে খেতে পারেন
- বেকারির কেকের বদলে কলার কেক বানাতে পারেন
- মধুর সাথে কলা মিশিয়ে খেতে পারেন
- স্কুল,কলেজ বা অফিসে ব্রেকের সময় কলা আপনার মেন্যুতে রাখতে পারেন ।
ঝুঁকি
পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু অতিরিক্ত পানি খেলেও মানুষের মৃত্যু ঘটে। অতিরিক্ত সব কিছুই খারাপ। তাই অতিরিক্ত কলা খাওয়াও উচিত নয়। অতিরিক্ত কলা খেলে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো হতে পারে-
- অতিরিক্ত কলা খেলে দেহে অতিরিক্ত পটাশিয়াম প্রবেশ করে। ফলে কিডনি/বৃক্ক তার কাজ করার স্বাভাবিক ক্ষমতা হারায়। এছাড়া অতিরিক্ত পটাশিয়ামের প্রভাবে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত কলা খেলে অনেকের অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
তাই, পরিমানমতো কলা খান। সুস্থ থাকুন।