হাঁপানি বা অ্যাজমা নিয়ে কিছু কথা
ফুসফুস শ্বসনতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এবং এই অংশটি প্রতিনিয়তই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফুসফুসে অনেক ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ্যাজমা বা হাঁপানি।
অ্যাজমা বা হাঁপানি কি?
সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার ফলে এজমা বা হাঁপানি হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন বহিঃস্থ দূষিত পদার্থ বা রাসায়নিক বস্তু ফুসফুসে প্রবেশ করে, তখন সেটিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য দেহের যতোটুকু প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা তারচেয়ে যদি বেশি অংশে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে তাহলে সেই অবস্থাকে বলা হয় অ্যাজমা বা হাঁপানি।
বলে রাখা ভালো অনেক ক্ষেত্রেই হাঁপানি আক্রান্ত রোগীদের শুরু থেকেই এলার্জির ইতিহাস থাকে। এটি বংশের ধারা অনুসারে বাহিত হয়ে আসতে পারে।প্রকৃত অর্থে অ্যাজমা বা হাঁপানি নিরাময়ে যোগ্য কোন রোগ নয়, এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয় আবার কোন জীবাণুবাহিত রোগও নয়।
অ্যাজমা বা হাঁপানি তে আক্রান্ত হবার বেশ কিছু কারণ রয়েছে :
বায়ুর সাথে ধোয়া ধুলাবালি শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে। যে সকল খাবার গুলোতে রোগীর এলার্জি হয়েছে সে সকল খাবার গুলো খেলে হাঁপানি বা অ্যাজমার উপসর্গগুলো দেখা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে শুধু এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে রোগী অ্যাজমা আক্রান্ত হতে পারে তেমন কোন কথা নেই। শিশুদের সাধারণত সর্দি-কাশি থেকে হাঁপানি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। আবার অনেকের বছরের বিশেষ ঋতুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় দেহে ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল নামক দুইটি শ্বেত রক্ত কণিকার অভাব দেখা দিলে এলার্জি দেখা যেতে পারে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এলার্জি হওয়ার ফান্ডামেন্টাল টপিক।
ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল কি?
আমরা জানি রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শ্বেত রক্তকণিকা বা লিউকোসাইট কে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। অ্যাগ্রানুলোসাইট এবং গ্রানুলোসাইট। গ্রানুলোসাইট কে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো:
১.নিউট্রোফিল
২.ইওসিনোফিল
৩.বেসোফিল
এরমধ্যে ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল হিস্টামিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন করে যা দেহের এলার্জি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যদি কোনো কারণে ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল এই ২ ধরনের শ্বেত রক্তকণিকার ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে দেহ সহজেই অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে এবং তা থেকে ধীরে ধীরে হাঁপানির উপসর্গগুলো দেখা দেয়।
কিভাবে ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে হয়?
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে সকল নিয়মগুলো মেনে চলতে হয় সেই সকল নিয়ম মেনে চললেই ইওসিনোফিল এবং বেসোফিল শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ বেড়ে যাবে। সহজার্থে শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমান বেড়ে যাবে।
হাঁপানির লক্ষণ:
১.হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়
২.শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হয়ে আসে।
৩.গলার শিরা ফুলে যায়। ফুসফুসের বায়ুথলি তে ঠিকমতো অক্সিজেন সরবরাহ হয় না বা বাধাগ্রস্ত হয়।
৪.সাধারণত গায়ে জ্বর আসে না। তবে ক্ষেত্রবিশেষে জ্বর হতে পারে।
৫. শ্বাস নেওয়ার সময় রোগীর পাঁজরের মাঝে চামড়া ভেতরের দিকে ঢুকে যায়।
৬. রোগী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে শরীরের ওজন হ্রাস পেতে থাকে ।
হাঁপানি বা অ্যাজমার প্রতিকার :
১.সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ রূপে হাঁপানি প্রতিকার করা যায় না। তবে ঔষধ, ইনহেলার ইত্যাদি সেবনে রোগী কিছুটা আরাম অনুভব করে।
২.আলো-বাতাস পূর্ণ ঘরে বসবাস করতে হবে।
৩.রোগী যেসকল বস্তুতে বিরক্তি বোধ করে সেই সকল বস্তু থেকে বিরত রাখতে হবে। বিশেষ করে পশুর লোম, কৃত্রিম আশ ইত্যাদি।
৪.ধূমপান, সাদাপাতা, জর্দা ইত্যাদির সংস্পর্শে আসে যাবে না।
৫.শ্বাসকষ্টের সময় রোগীকে বেশি করে তরল খাদ্য খাওয়াতে হবে।
হাঁপানির প্রতিরোধ:
অবশ্যই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে হবে এবং বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষ সতর্কবার্তা :
হাতুড়ে চিকিৎসকের অনেক সময় উচ্চমাত্রায় ক্ষতিকারক স্টেরয়েড দিয়ে হাঁপানি রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। তবে এর ফলে রোগীর দেহে অপূরণীয় এক ক্ষতিসাধন হয়। সুতরাং এ ধরনের চিকিৎসকের কাছ থেকে বিরত থাকাই ভালো।