এপেন্ডিক্স! আতংক নয়, সচেতনতা

মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গই প্রায় কোনো না কোনো কাজের সাথে জুড়ে আছে। প্রত্যেক কেই মানবদেহ সচল রাখতে বাধ্যতামূলক ভাবে সুস্থ থাকতে হয় এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হয়। কিন্তু মানবদেহের ভেতর এমন একটি অঙ্গ আছে যেটি একেবারেই কাজের না। অর্থাৎ মানবজীবন বাঁচিয়ে রাখতে এর কোনো প্রকার ভূমিকা নেই। বেঁচে থাকতে উক্ত অঙ্গটির কোনো দরকার নেই।

দেহে একটা অঙ্গ শুধু শুধু পড়ে থাকলেও হয়তো সেটা কোনো প্রকার সমস্যা হতো না। কিন্তু ঐ অপ্রয়োজনীয় অঙ্গটা যখন মৃত্যুর হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তখন ব্যাপারটা সত্যি ভাবার বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে অঙ্গটা কি?

appendicitis

জি ঠিক ধরেছেন, অঙ্গটি হচ্ছে এপেন্ডিক্স। এই অঙ্গটি ৬ ইঞ্চি লম্বা ও পেটের নিচের ডান দিকে অবস্থিত। এই অঙ্গটি ঠিক মানবদেহে কেনো আছে আর এর কাজ -ই বা কি সেটা এখনো জানা যায়নি।
এই এপেন্ডিক্স যদি কোনো কারণে ব্লক হয়ে ফেটে যায় তবে মৃত্যু নিশ্চিত বলা যায়। এপেন্ডিক্স যখন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে যেই অবস্থার সৃষ্টি করে তাকেই এপেন্ডিসাইটিস বলে। আপনার এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে কিনা কখন বুঝবেন, এপেন্ডিসাইটিস হলে কি করবেন, প্রতিরোধে করণীয় সবকিছু নিয়ে সাবধান করে দেবার জন্যই লেখাটা একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা মাত্র। এতে যদি আপনাদের বিন্দু মাত্র উপকার হয়ে থাকে তবেই এই লেখা সার্থক।

সবার আগে জেনে নেওয়া যাক এপেন্ডিক্সের  ব্লক অর্থাৎ রাস্তা কেন বন্ধ হয় আর ফেটেই বা কেন যায় এবং ফেটে গেলে কেন মৃত্যু নিশ্চিত।

এপেন্ডিক্স ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে ও ফুলে গেলে তাকে এপেন্ডিসাইটিস বলে। মূলত এর মধ্যে মিউকাস, কোনো ধরণেত পরজীবি কিংবা মল যদি জমে যায় তখন অনেক যন্ত্রণা হয়। জমতে জমতে একসময় অঙ্গটা ফুলে যায়। উদ্দীপ্ত এপেন্ডিক্সের ভেতর আবার ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত হারে বংশ বৃদ্ধি করে। এই সমস্যার সমাধান না করা গেলে এপেন্ডিক্স ফুলে ফেপে একসময় বিস্ফোরিত হয়ে যেতে পারে। যদিও দেহে এর কোনো ব্যাবহার তেমন নেই। কিন্তু হাজার হোক এটি শরীরের একটি অঙ্গ, এর সাথে স্নায়ুর যোগাযোগ রয়েছে। তাই বিস্ফোরিত হয়ে গেলে শুধু ব্যাথা যে করবে তা নয়, এর সাথে সব ব্যাকটেরিয়া শরীরের এখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়বে। আর তাই মানবজীবন একেবারে শেষের দিকে চলে যায়।

কখন বুঝবেন আপনার এপেন্ডিসাইটিস হয়েছে?

এপেন্ডিসাইটিসের সাধারণত কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হলো-

পেট ব্যাথা, বিশেষ করে নাভির চারপাশ ও পেটের ডান পাশ
পেট ফুলে যাওয়া অর্থাৎ গ্যাস জমে যাওয়া
বমি বমি ভাব হওয়া এবং বমি হওয়া
ক্ষুধামন্দা, খাওয়ার প্রতি রুচি চলে যাওয়া
পরিপাকের সমস্যা
হালকা জ্বর, ১০০° ফারেনহাইটের মতো

পেট ব্যাথা আসলে অনেক রোগেরই লক্ষণ। মেয়েদের পিরিয়ড থেকে শুরু করে ফুড পয়জনিং সবকিছুরই লক্ষণ পেট ব্যাথা। পাকস্থলীর যেকোনো সমস্যা তো বটেই আরও অনেক ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রেও পেট ব্যাথা লক্ষণ হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করে৷ তাই পেট ব্যাথা হলে সাধারণত হেলাফেলা করা উচিৎ না। অতি তুচ্ছ কারণেও যেমন পেট ব্যাথা হতে পারে, তেমনি অনেক বড় রোগের জন্যও পেট ব্যাথা হতে পারে।

এপেন্ডিসাইটিস কিভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়?

রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাস্নোগ্রাম, ইউরিন টেস্ট এর মাধ্যমে সাধারণত জানা যায় এপেন্ডিসাইটিস আছে কিনা। উক্ত পরীক্ষা গুলোর উপর নির্ভর করে এপেন্ডিসাইটিস এ অস্ত্রোপচার করতে হবে কিনা।

চিকিৎসা –

উক্ত সমস্যা দু’ধরণের চিকিৎসা রয়েছে। একটি শল্য চিকিৎসা বা ঘরে বসে ঔষধ সেবন করা আরেকটি অস্ত্রোপচার। অবশ্য দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি-ই নির্ভর করে এপেন্ডিক্স এর অবস্থার উপর।
যদি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় তবে নিম্নোক্ত অস্ত্রোপচার গুলো করা হয়ে থাকে-

ল্যাপারোস্কোপিক
ল্যাপারোটমি
খোলা অস্ত্রোপচার এবং
এন্টিবায়োটিক থেরাপি

এন্টিবায়োটিক থেরাপি সাধারণত ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী।

এপেন্ডিক্স এর প্রতিরোধ আছে কি?

সত্যি বলতে এপেন্ডিক্স সম্পূর্ণই শারীরিক ঘটিত একটু ব্যাপার। আপনি আপনার শরীরের ভেতরকার অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। আপনি ব্যাকটেরিয়ার বংশ বৃদ্ধি ঠেকাতে পারবেন না। এমনকি মিউকাস বা মল জমে যাওয়ার মতো ব্যাপার ঠেকানোও আপনার পক্ষে ঝামেলা হয়ে দাড়াবে। তবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন অবশ্যই করা যায়। এতে যদি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমত বাড়ানো যায় তবে দেহ নিজে থেকেই ব্যাপারটা সামলে নেবে।

প্রতিরোধের জন্য আপনি খেতে পারেন –

মেথি
জিনসেং চা
সবজির জুস
পুদিনা পাতা
এবং বাদাম তেল পেটে মালিশ করতে পারেন

আর যদি এমন হয় যে আপনার উক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেননা এটি মৃত্যুর কারণ হতে একদমই সময় নেবে না।

আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন।

Similar Posts