মুখের চামড়া কামড়ানোর অভ্যাস: মানসিক রোগের লক্ষণ
আমাদের প্রায় সবারই কোনো না কোনো বদ অভ্যাস আছে। যেমন যখন তখন দাঁত দিয়ে নখ কাটা, নাকের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করা, কথা বলার সময় মাথা চুলকানো ইত্যাদি। এরকমই আরেকটি অভ্যাস হলো মুখের চামড়া কামড়ানো। মুখের ভেতরকার গালের নরম চামড়া, ঠোঁটের আশেপাশে চামড়া দাঁত দিয়ে চিবুতে থাকা বা ছিঁড়তে থাকা এ ধরনে অভ্যাসের মধ্যেই পড়ে। অনেক ছোট বাচ্চা আবার ছেঁড়া চামড়া জমাতে থাকে। বড়রা অবশ্যি এমনটা করে না। ৫-১০ বছরের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত এই অভ্যাস দেখা যায়। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৭৫০ এর চেয়েও বেশী সংখ্যক লোক মুখের চামড়া কামড়িয়ে অভ্যস্ত। তবে এক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় বেশী।
এটি মূলত একধরনের পুণরাবৃত্তিমূলক বদঅভ্যাস যেটা এক ধরনের মানসিক ডিজঅর্ডারের (অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার) সাথে সম্পর্কযুক্ত। মানুষের অন্যান্য শরীর-কেন্দ্রীক পুণরাবৃত্তিমূলক ডিজঅর্ডার যেমন-চুলটানা, নখ কামড়ানো, ঠোঁট কামড়ানো অবসেসিভ ডিজঅর্ডারের সাথে জড়িত।
এর কারণ কী:
কোন ধরনের ডেন্টাল সমস্যা না থাকলে এই বদঅভ্যাসের কারণকে মানসিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো কোনো গবেষক মনে করেন এ ধরনের অভ্যাস জিনেটিক কারণে হয়ে থাকে। আবার একটি পরিবারের মা-বাবা কিংবা ভাই বোনের দেখাদেখি ছোটদেরও এ অভ্যাস গড়ে ওঠে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রনিক আকার ধারণ করে। আবার কিছু অভ্যাসকারী লোক বলেছেন, মুখের ভেতরের অমসৃণ চামড়া মসৃণ করতে তারা এ কাজ করেন।
চিন্তা, আবেগপূর্ণ অবস্থায় এমনকি পরিবেশগত কারণেও কোনো মানুষ আনমনে বারবার কোনো একটা কাজ করতে থাকে যা একপর্যায়ে অভ্যাসে পরিণত হয়।
বিজ্ঞানীরা এর মূল কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে এটির জিনেটিক ফ্যাক্টর নিয়ে গবেষণা চলছে। জিনের ঠিক কোন অংশটি এ ধরনের অভ্যাসের জন্যে দায়ী, তা তাঁরা খুঁজে বের করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রোগের জটিলতা:
বারবার চামড়া চিবুতে থাকলে সেই সব অংশের টিস্যু মুখের অন্যান্য অংশের টিস্যুর চেয়ে পাতলা হয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং মাঝে মাঝে ওইসব জায়গাকে লাল হয়ে ফুলে উঠতে দেখা যায়। যেখানে ব্যথার কারণে অনেকসময় ব্যথানাশক ঔষধও সেবন করা লাগতে পারে।
একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন, আপনি নিজেই নিজের ক্ষত সৃষ্টি করছেন যার জন্যে আবার আপনাকে ঔষধ সেবন করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে অভ্যস্ত ব্যাক্তি বেশীরভাগ সময়েই খেয়াল করেন না যে সে কী করছে। কোনো একটা কাজ যেমন লেখা, টাইপিং করা, রান্না করা কিংবা চিন্তা করার সময় সে ক্রমাগত মুখের চামড়া চিবুতে থাকে। বারবার এমনটা করার পর যখন রক্তের ক্ষারীয় স্বাদ জিহ্বায় লাগে, তখন বুঝতে পারে যে এতক্ষণ সে ঠিক কী করছিল। এ ধরনের আরও কিছু অভ্যাস যেমন দাঁত দিয়ে আঙুলের চামড়া ছেঁড়া, নখ কামড়ানো ইত্যাদিকে আবার মনোবিজ্ঞানের আরেক টার্মে অটো-ক্যানিবল বা স্বভোজ রোগের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে মনে করা হয়। তবে এ ব্যাপারটা বিতর্কিত।
কিভাবে এ অভ্যাস বন্ধ করা যায়:
সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন থেরাপিস্ট রোগীকে অহেতুক চামড়া ছেঁড়ার ব্যাপারে এবং ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করেন এবং কিভাবে এই বদ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা যায় সে উপায় বের করেন ।
লক্ষণীয় বিষয় এই যে , কোনো বিশেষ খাবার, ইলেকট্রনিক্যাল অনুপ্রেরণা, হিপনোসিস বা সম্মোহন কিংবা অন্যকিছু যেটা এ অভ্যাস থেকে সম্পূর্ণ পরিত্রাণের পথ বাতলে দেবে এমন কোনো প্রমাণ নেই।
তবে সচেতন থাকার মাধ্যমে এই ক্রনিক চক্র থেকে অনেকটা বেরিয়ে আসা যায়:
১. আপনার কাছের মানুষদের এ অভ্যাস থাকলে তাদের বারবার মনে করিয়ে দিন। অথবা আপনার এ সমস্যা থাকলে অন্যদের ধরিয়ে দিতে বলুন।
২. শিশুদের ঠোঁট, নখ কামড়ানো, কিংবা আঙুল মুখে দিতে বাঁধা দিন।
৩. পুরনো অভ্যাস সহজে যায় না। গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দিতে গিয়ে যদি চামড়া চিবানোর সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন, তবে একটা চিউয়িং গাম মুখে দিন। খাবার জাতীয় কিছু চিবুলে এ থেকে বিরত থাকা যাবে।
৪. গুরুত্ব সহকারে অভ্যাসটা ত্যাগের চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনার ইচ্ছা আর মানসিক দৃঢ়তাই এর অন্যতম সমাধান। এ ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করলে এসব পরবর্তীতে ক্রনিক আকার ধারণ করে।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.netdoctor.co.uk/healthy-living/wellbeing/a27415/we-need-to-talk-about-cheek-biting/