ছোট্ট দেশ ভ্যাটিকান ভ্রমণের গল্প (২)- ভ্যাটিকান মিউজিয়াম
ভ্যাটিকানের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন পোপ। আর পোপের নিজস্ব রক্ষীবাহিনী হচ্ছে ভ্যাটিকানের সুইস গার্ড। সুইজারল্যান্ডের মিলিটারি স্কুল শেষ করে তারা ভ্যাটিকানে চলে আসে। পোপকে রক্ষার জন্য তারা জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে। চার্চের বাহিরেই তারা গার্ডরত অবস্থায় ছিল। সুইস গার্ডদের পোশাক একদম ভিন্নরকম আর অনেক উজ্জ্বল রঙের। এমন রঙিন পোশাকের গার্ড আমি আগে কখনো দেখিনি। তাই ইচ্ছা ছিল ছবি তোলার কিন্তু তাদের গম্ভীর মুখশ্রী দেখে পরে আর সে অনুরোধ করা হয়ে ওঠেনি। পোপ আর কার্ডিনালদের (পোপের কাজে সহায়তার জন্য ধর্মীয় উপদেষ্টা) মতোই সুইস গার্ডরাও ছোট্ট ভ্যাটিকানের স্থায়ী বাসিন্দা।
সেইন্ট পিটার’স ব্যাসিলিকা ছাড়াও ভ্যাটিকানের আরো একটা প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ভ্যাটিকান মিউজিয়াম যেটা পৃথিবীর অন্যতম বড় আর্ট মিউজিয়াম। লম্বা হলওয়ে, গ্যালারি আর কোর্টইয়ার্ড মিলিয়ে এই মিউজিয়ামের সংগ্রহ এতো বেশি সমৃদ্ধ যে এটা কোনভাবেই একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। সেটা ভালোভাবে দেখার জন্য এক মাসও কম হয়ে যায়। এই মিউজিয়ামের সংগ্রহ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গড়ে উঠেছে। পোপেরা শিল্পের মূল্য বুঝতেন। একেকজন পোপ তাঁর ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহ করেছিলেন- অধিকাংশই ইতালীয় শিল্পীদের তৈরী পেইন্টিং, ভাস্কর্য, সেকালের ইতালির রাজ্যসীমার ম্যাপ এবং ট্যাপেস্ট্রি (বিশেষ একধরনের কাপড় যেটায় চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলা হয়)। এছাড়া ইতালির বাইরের অন্যান্য দেশ যেমন সুদূর গ্রীস এবং মিশর থেকেও তাঁরা সংগ্রহ করেছেন, আবার কিছু অন্যান্য দেশের রাজা রানীদের কাছে থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন।
শতবর্ষী শিল্পকর্মের পাশাপাশি মর্ডার্ন আর্টও এই মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে-পাইনকোন কোর্টইয়ার্ডের বড় ব্রোঞ্জ গোলকটার সামনে ছবি তুলেননি, মিউজিয়ামে আসা এমন দর্শনার্থী বিরল। তবে এতোসব কিছু ছাপিয়ে মানুষ ভ্যাটিকান মিউজিয়ামে আসে সিস্টিন চ্যাপেল দেখার জন্য যেটা মিউজিয়ামের প্রধান আকর্ষণ। মিউজিয়ামে ঢুকেই মানুষের স্রোত এগিয়ে চলে সিস্টিন চ্যাপেলর দিকে যেটা মিউজিয়ামের লম্বা হলওয়ের শেষ মাথায় অবস্থিত। মানুষের ভিড় সেখানে এতোটাই বেশি যে দাঁড়িয়ে থাকলেও মনে হবে সেই ভিড় সামনে ঠেলে নিয়ে চলেছে।
চ্যাপেলটা হচ্ছে একটা প্রার্থনাগৃহ যেটার সিলিং এ ইতালীয় শিল্পী মাইকেলাঞ্জেলো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম এঁকে গেছেন- বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্বের নয়টি দৃশ্য। সৃষ্টিতত্ত্বের বর্ণিত কাহিনীর ঈশ্বর এবং মানুষের এতো সুন্দর, প্রায় জীবন্ত চিত্রায়ন এর আগে অন্য কোন শিল্পী করেননি। এজন্য মাইকেলাঞ্জেলো তাঁর জীবদ্দশাতেই মানুষের সম্মান ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন; এই সিলিং এর পেইন্টিং যখন তিনি শেষ করেন তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৭ বছর। মাইকেলাঞ্জেলোর তৈরী অসংখ্য পেইন্টিং আর ভাস্কর্যের মাঝে মানুষ তাঁকে মনেই রেখেছে সিস্টিন চ্যাপেলের এই অসাধারণ চিত্রকর্মের জন্য। ইতালির রেনেসাঁ শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির পরেই তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। দীর্ঘ চার বছর তাঁর সময় লেগেছিল এগুলো শেষ করতে। প্রায় চারশত বছর বয়সের এই পেইন্টিং গুলোর উজ্জ্বল রং কালের বিবর্তনে অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছিল। অতি যত্নের সাথে সেগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয় যদিও বিশেষজ্ঞদের দাবি রং ফিরিয়ে আনাতে এই অমূল্য শিল্পের ক্ষতিসাধন হয়েছে। চ্যাপেলের ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ, তাই সেটার ছবি এখানে আর দিতে পারছিনা।
সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতরে পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় যেটাকে কনক্লেভ বলে। বহুবার সংস্কার, পরিবর্তনের পরে ভ্যাটিকান রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা আজকের পর্যায়ে এসেছে।
ভ্যাটিকানের আগের লেখাগুলো যথাক্রমে গ্রীস এবং রোম নিয়ে। সেগুলো নিচের লিংকে গিয়ে পড়া যাবে।
গ্রীস ভ্রমণ (১)- গ্রীক পুরাণ, প্রাচীন সভ্যতা ও আধুনিক গণতন্ত্রের মেলবন্ধন- https://banglavibe.com/travel-to-greece-part-1/
গ্রীস ভ্রমণ (২)- ভূমধ্যসাগরে এক সন্ধ্যা- https://banglavibe.com/travel-to-greece-part-2/
রোমের গল্প (১)- https://banglavibe.com/the-story-of-rome-part-1/
রোমের গল্প (২)- https://banglavibe.com/the-story-of-rome-part-2/