রোমের গল্প (২)
হাঁটতে হাঁটতে দেখা যাবে রোমের প্রায় সব রাস্তা বা চত্বরগুলোতে কিছুদূর পরপরেই রয়েছে শৈল্পিক ফাউন্টেন বা ঝর্ণা। সেগুলোর কোনটায় দেবশিশু, কোনটায় বিশালাকৃতির ঝিনুক এবং অধিকাংশ গুলোতেই বিভিন্ন রোমান দেবদেবী ও পৌরাণিক চরিত্রের ভাস্কর্যরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ঝর্ণাগুলোতে প্রায়ই কয়েন পড়ে থাকতে দেখা যায়, ট্যুরিস্টরা সেগুলো ফেলে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এইসব কয়েন চুরি করার লোকেরও অভাব হয়না! রাতে সেগুলো গায়েব হয়ে যায়। এমন ব্যস্ত আর ব্যয়বহুল শহরে সেটা খুব একটা অস্বাভাবিক ঘটনা না।
রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত ঝর্ণা ট্রেভি ফাউন্টেনে এই কাহিনী আরো বেশি ঘটে। কিংবদন্তি বলে এই ঝর্ণায় কয়েন ফেললে কোন একদিন আবারো রোমে আসা যাবে। সেই আশায় প্রতিদিন এখানে আসা পর্যটকেরা কয়েন ফেলে যান। দিনশেষে সেই মুদ্রার মান কখনো কখনো তিন হাজার ইউরোতে গিয়ে ঠেকে! এখন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সেই অর্থ রোমের একটা চ্যারিটিতে চলে যায়। এই শৈল্পিক ঝর্ণাগুলো ছাড়াও রোমের অলিগলি তে ছোট পানীয় জলের ঝর্ণা আছে; সেগুলো ক্লান্ত দর্শনার্থীদের তৃষ্ণা মেটায়।
রোমের এইসকল ঝর্ণা, দূর্গ, চার্চ, চত্বর, কলোসিয়াম, প্যান্থিয়ন, মিউজিয়ামের পেইন্টিং ও ভাস্কর্যের পাশে তাদের ইতিহাস সংক্ষেপে রোমান এবং ইংরেজি ভাষায় লেখা থাকে। তবে তাদের পেছনের গল্পগুলো এর চেয়েও বড়। রোমানদের একসময়ের প্রাণকেন্দ্র রোমান ফোরাম এখন শুধুই ভগ্নস্তূপ। ভূমিকম্প এবং পাথর চুরির কারণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও কলোসিয়াম আধুনিক পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যে স্থান করে নিয়েছে।
প্যান্থিয়নের মতো দু’হাজার বছরের পুরনো মন্দির আজো স্থাপত্যবিদদের মুগ্ধ করে। পরবর্তীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং আমেরিকায় প্যান্থিয়নের আদলে স্থাপনা তৈরী হয়েছে। যে দুর্গের দখল নিয়ে একসময় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হত, আজ সেটা একটা মিউজিয়াম। যে মন্দিরে রোমান দেবদেবীদের উপাসনা হত, এখন সেটা চার্চে পরিণত হয়েছে। পুরনো চার্চ ভেঙে পরবর্তীতে সেটাকে আরো বৃহদাকারে নির্মাণ করা হয়েছে বৃহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। এমন প্রতিটা প্রাচীনত্বের সাথেই মিশে রয়েছে অনেক গল্প যার একেকটা নিয়ে হয়তো পুরো একটা বই হয়ে যায়। রাতের রোম সোনালি আলোকে আলোকিত থাকে। সেই অদ্ভূত সুন্দর আলোতে এই শহরকে দেখে মনে হয়, এইসব পুরনোদিনের গল্পেরা যেন নতুন দিনের মানুষের ভিড়ে আরো একবার জীবন্ত হয়ে উঠতে চায়!
সেই সাদাকালো টেলিভিশনের যুগ থেকেই রোম নিয়ে সিনেমা, সিরিয়াল, ডকুমেন্টারি তো আর কম তৈরী হয়নি। অড্রে হেপবার্ন এবং গ্রেগরি পেক অভিনীত ক্ল্যাসিক ‘’রোমান হলিডে’’ থেকে শুরু করে দিনে দিনে সেই তালিকা শুধু দীর্ঘই হয়েছে। বিখ্যাত লেখকদের লেখনীতেও রোম বারবার উঠে এসেছে। আর সেগুলোর জন্য ট্যুরিস্ট শহর হিসেবে রোমের জনপ্রিয়তা এত বেশি। প্রায়ই দেখা যায় স্প্যানিশ সিঁড়ি বা ট্রেভি ফাউন্টেনে পর্যটকরা তাদের প্রিয় অভিনেতা বা অভিনেত্রীর অনুকরণে ছবি তোলার চেষ্টা করছেন। তবে টিভির পর্দার রোমের চেয়ে বাস্তবের রোমে পর্যটকের ভিড় অনেক বেশি থাকে। আর যেসকল দর্শনীয় স্থানে প্রবেশ ফি নেই, সেগুলোতে মানুষের ভিড় আরো বেশি থাকে।
রোমে ঘুরে বেশ ভালো লেগেছিল, তাই বাকি সকল ট্যুরিস্টদের মতোই আমরাও ট্রেভি ফাউন্টেনে কয়েন ফেলে এসেছি রোমে আবারো যাবার সুপ্ত বাসনা নিয়ে। সত্যিই আবার যাওয়া হবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।
(পরবর্তী পর্ব ভ্যাটিকান সিটি নিয়ে)।
রোমের পূর্ববর্তী লেখাগুলো গ্রীস নিয়ে; সেগুলো নিচের লিংকে গিয়ে পড়া যাবে,
গ্রীস ভ্রমণ (১)- গ্রীক পুরাণ, প্রাচীন সভ্যতা ও আধুনিক গণতন্ত্রের মেলবন্ধন: https://banglavibe.com/travel-to-greece-part-1/
গ্রীস ভ্রমণ (২)- ভূমধ্যসাগরে এক সন্ধ্যা: https://banglavibe.com/travel-to-greece-part-2/