আপনার রক্ত বাঁচাবে একটি প্রাণ
মানব সেবা অনেক বড় ব্রত। কথায় আছে “জীব প্রেম করে যেই জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর”। এই জীব প্রেমের মধ্যে কিন্তু মানুষও অন্তর্ভুক্ত। শুধু পশু পাখি প্রেম-ই বোঝায় তা না। এই জীব প্রেমের অন্তর্ভুক্ত কিংবা অনেক বড় এক ব্রতের অন্তর্ভুক্ত একটা কাজ হচ্ছে রক্ত দান করা। রক্ত দানের মতো সামাজিক কর্মসূচি সত্যি-ই মহৎ। রক্ত দান করে যে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের জান বাঁচাচ্ছে ব্যাপারটা শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই রক্ত দানের মাধ্যমে মানুষ তার নিজের শরীরটাকেও সুস্থ রাখতে পারছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের মতো দেশে রক্ত দানের ব্যাপারটায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী রক্ত এই দেশে পাওয়া যায় না। গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় রক্তের ৩৫-৪০ ভাগ পাওয়া যায় রোগীর নিকটজন থেকে, ১৫-২০ ভাগ স্বেচ্ছাসেবী থেকে ও ১৫-২০ ভাগ পেশাদার রক্ত বিক্রেতা থেকে। বাকি ২০-২৫ ভাগ বা প্রায় ২.৫ লাখ ব্যাগ রক্তের ঘাটতি থেকে যায়। আপনার রক্ত আরেকজনের শরীরে প্রবাহিত হয়ে তার প্রাণ বায়ুকে সচল রাখছে, এর থেকে বড় প্রাপ্তি তো আর কিছু হতে পারে না। ধর্মের দিক দিয়ে চিন্তা করলেও বলা যায়, মানুষটা যতদিন বেঁচে থাকবে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। আপনার জন্য দোয়া করবে। তাই আপনি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হয়ে থাকলে, বেশি বেশি রক্ত দিন। এতে আপনার কোনো ক্ষতি নেই বরং লাভ আছে।
আপনি কখন এবং কোথায় রক্ত দেবেন?
রক্ত দেওয়া একটি সামাজিক কর্মসূচি। তাই আপনার মুল্যবান রক্ত গ্রহণের জন্য সমাজের আশেপাশেই ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের রক্ত দান সংগঠন। আপনি এসব সংগঠনে যোগাযোগ করে আপনার শরীরের খানিকটা রক্ত সেখানে জমা করে আসবেন।
কোনো সময় যদি আপনি এমন কাউকে দেখেন যে, দূর্ঘটনার বশবর্তী হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণের শিকার হয়েছে এবং রক্ত না পেলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, আপনি তৎক্ষনাৎ তাকে রক্ত দিয়ে বাঁচতে সাহায্য করুন। খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার এবং রক্ত গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ যেন এক হয়।
যদি আপনার সাথে তার রক্তের গ্রুপ ম্যাচ না করে তবে অন্তত আরেকজন এমন ব্যাক্তিকে খুঁজে বের করুন যিনি রক্ত দিতে সক্ষম এবং তার সাথে রক্ত স্বল্পতার শিকারে মানুষটির রক্তের গ্রুপ পুরোপুরি ভাবে মিলে যাচ্ছে।
আপনি রক্ত দিতে ইচ্ছুক হলেও কখন কখন রক্ত দিতে সক্ষম হবেন না?
মানব সেবা, এই মহৎ ব্রত রক্ত দান কর্মসূচিতে যোগদান করতে চান অনেকেই। অনেকেই চায় তার রক্ত যাতে আরেকজনের প্রাণ বাঁচাতে পারে। কিন্তু অনেক কারণেই তার পক্ষে রক্ত দান করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আপনি কখন বুঝবেন যে আপনার রক্ত দান করার সামর্থ্য আপাতত নেই?
নিম্নোক্ত বিষয় গুলো যদি আপনার ভেতর উপস্থিত থাকে তাহলে বুঝে নিবেন আপনি আপাতত রক্ত দান করার সামর্থ্য অর্জন করতে পারেন নি।
১. আপনার বয়স আঠারো না হওয়া পর্যন্ত আপনি রক্ত দিতে পারবেন না।
২. আপনি বিগত ছয় মাসের ভেতর যদি রক্ত ক্ষয়ে যাওয়ার মতো বিরাট দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন তবে আপনার শরীর রক্ত দান করার মতো উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি।
৩. আপনার ব্লাড ক্যান্সার থাকলে। কিংবা আপনারা যারা কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, এন্টিবায়োটিকের মতো ঔষধ সেবন করছেন তারা দয়া করে রক্ত দান করার ঝুঁকি নেবেন না।
৪. হাপানি বা এজমার মতো শ্বাস প্রশ্বাসে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে এমন রোগীরা রক্ত দান করতে পারবেন না। এক-ই সাথে রক্ত বাহিত বিভিন্ন রোহের বাহক হলেও রক্ত দান করতে পারবেন না।
৫. গর্ভবতী ও মাসিক চলাকালীন নারীরা রক্ত দিতে পারবেন না। বলা হয়ে থাকে সন্তান জন্ম দেওয়ার এক বছরের মধ্যেও নারীর শরীর রক্ত দান করার মতো উপযুক্ত হয়ে ওঠে না।
৬. হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বা মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং রক্ত চাপ ও শরীরের তাপমাত্রায় সমস্যা আছে এমন কেউ রক্ত দান করতে পারবেন না।
কখন আপনি রক্ত দিতে পারবেন?
পূর্ণ বয়স্ক অর্থাৎ আঠারো থেকে ষাট বছরের মধ্যে সকল নারী পুরুষ যারা কি না শারীরিক ভাবে সুস্থ, ওজনও ঠিক আছে, তারা সকলেই রক্ত দিতে পারবেন।
রক্তের “লোহিত রক্ত কণিকা” খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তাই এক ব্যাগ রক্ত প্রদান করার চার মাস পর আপনি আবার রক্ত দিতে পারবেন। রক্ত দান করার সুফল গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, আপনি যদি কখনো রক্তের অভাব বোধ করেন, তখন ব্লাড ব্যাংক থেকে বিশেষ ছাড়ে রক্ত পেয়ে যাবেন। আর নিয়মিত রক্ত দানের ফলে রক্তে বিদ্যমান ফ্যাট কেটে যায় ও অস্থিমজ্জা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে সাধারণত ব্লাড ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
আজ এ পর্যন্তই। ধন্যবাদ।