উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ ।। শেষ পর্ব
অন্যান্য পুরষ্কার: প্রতিবছর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন দলকে কাপ ও নগদ অর্থ দ্বারা পুরষ্কৃত করে থাকে। এছাড়া বিজয়ী দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে স্বর্ণ পদক ও রানার্সআপ দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে রৌপ্য পদক দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়।
ফুটবল বিশ্বকাপে পর পর তিনবার জয়ী হওয়ার জন্য ব্রাজিলকে যেমন জুলে রিমে ট্রফি স্থায়ীভাবে প্রদান করা হয়, তেমনি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগেও এমন একটি নিয়ম ছিলো। ১৯৬৮-৬৯ আসর থেকে ২০০৮-০৯ আসরের আগে পর্যন্ত পরপর তিন বার অথবা মোট পাঁচবার চ্যাম্পিয়নস লীগের শিরোপা জয়লাভ কারী দলকে স্থায়ীভাবে মূল শিরোপাটি প্রদান করা হতো। কোনো ক্লাব স্থায়ীভাবে শিরোপা জিতলে পরবর্তী আসরের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি শিরোপা (কাপ) তৈরী করা হয়। এখন পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ, আয়াক্স, বায়ার্ন মিউনিখ, এসি মিলান এবং লিভারপুল – এ পাঁচটি দল উয়েফার মূল শিরোপা স্থায়ীভাবে জিতে নিয়েছে। ২০০৯ এর পরবর্তী আসর থেকে শুধু মাত্র একটি প্রতিলিপি প্রদান করা হয়।
নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকে প্রতিটি অংশগ্রহণ করা দলের জন্য। বাছাইপর্বে অংশগ্রহণের জন্য দলগুলো ২৩ হাজার ইউরো পেয়েছে ৫৭তম আসরে। এছাড়া রানার্সআপ দল ও বিজয়ীদল যথাক্রমে ১৫ মিলিয়ন ও ১৯ মিলিয়ন অর্থ পুরষ্কার পেয়েছে। এতো শুধুমাত্র কোনো দল বিজয়ী হলে তাকে দেওয়া অর্থ পুরষ্কার গেলো, আরও অনেক ধরনের অর্থ পুরষ্কার থাকে দলের জন্য। সবমিলিয়ে কোনো ক্লাবই মোটামুটি ৫০ মিলিয়ন ইউরোর কম পায় না।
ক্লাবগুলোর আয়: ২০১৮-১৯ বিজয়ী লিভারপুলের আয় ১১১ মিলিয়ন ইউরো, তৃতীয় হওয়া বার্সেলোনা পেয়েছে ১১৭ মিলিয়ন ইউরো।
চ্যাম্পিয়ন এর আয় কম, তৃতীয় হওয়া দলের আয় বেশি!! কেনো?
চ্যাম্পিয়নস লীগ থেকে আয়ের কয়েকটি উপায় রয়েছে। গ্রুপ পর্বে অংশ গ্রহণ করার জন্য নির্দিষ্ট একটি অর্থ পায় ক্লাবগুলো। প্রতিটি ম্যাচে জয়, হার ও পরাজয়ের ওপর নির্ভর করে আরও কিছু অর্থ যোগ হয়। আর গ্রুপ পর্ব পার হতে পারলে প্রতিটি নক-আউট পর্বের জন্য বাড়তি অর্থ যোগ হয়। এভাবে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের ভাগেই সবচেয়ে বেশি অর্থ জোটে। কিন্তু উয়েফা ক্লাবগুলোকে আরও কিছু ব্যাপারে অর্থ পুরষ্কার দেয়।
উয়েফার নিয়মানুযায়ী, যে দেশের ক্লাবগুলোর খেলা সম্প্রচার করতে টেলিভিশন চ্যানেলগুল অধিক আগ্রহী হবে; তাদের জন্য ‘মার্কেট পুল’ থেকে আয় হিসেবে অর্থ বরাদ্দ থাকবে বেশি। প্রতিবছর নতুন হিসেব করা হয়, “মার্কেট পুল” থেকে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো মোটামুটি ৩০-৪০ মিলিয়ন ইউরো করে পায়। যেমন: টিভি সত্ত্ব, ঐতিহাসিক অর্জন ও দেশের অবস্থান (চ্যাম্পিয়নস লিগের ওই মৌসুমে নির্দিষ্ট একটি দেশের অন্য ক্লাবের অবস্থা)।
২০১৮-১৯ আসরের কথা যদি চিন্তা করি, সব মিলিয়েই বার্সেলোনা লিভারপুলের চেয়ে এগিয়ে গেছে। যেমন: ঐতিহাসিক অর্জনের দিক থেকে বার্সেলোনা ৩৪ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছে, যেখানে লিভারপুল পেয়েছে ২৩ মিলিয়ন ইউরো। কারণ চ্যাম্পিয়নস লিগে আগের মৌসুমে ফাইনালে উঠলেও নিকট অতীতে ভালো করেনি লিভারপুল।অন্যদিকে বার্সেলোনা ২০১৫ সালে বিজয়ী হওয়ার পর প্রতিবারই অন্তত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। তাই সবমিলিয়ে বার্সেলোনারই আয় বেশি।
এবার ২০১৯-২০ আসরে কোন ক্লাবের আয় কত? ২০১৯-২০ ফাইনালে বিজয়ী হয় বায়ার্ন মিউনিখ, তাদের আয় ১১৭.৩ মিলিয়ন পাউন্ড, অন্যদিকে রানার্সআপ হওয়া পিএসজি আয় করে ১১৯.৭ মিলিয়ন পাউন্ড। এখানেও রানার্সআপ পিএসজি-র আয় বেশি। কেনো? কারণ ঐ যে “মার্কেট পুল”।
এক কথায় উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের দিনগুলো ফুটবল প্রেমীদের কাছে উৎসবের চেয়ে কোনো অংশে কম না।