ওজন কমায় খুব দ্রুত এই ১৮টি খাবার
বেশীর ভাগ মানুষ তাদের শরীরের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে প্রধানত তাদের লাইফস্টাইল এবং খাদ্য গ্রহণ করার অভ্যাসের কারণে।
এমন কোন খাবারের নাম বলা যাবেনা যা একাই শরীরের সব ফ্যাট বার্ন করে ফেলবে। কিন্তু কিছু খাবারের কম্বিনেশন এবং সঠিক ডায়েট প্ল্যান আপনার বডির লিপিড কে ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করবে যা এনার্জি হিসেবে জমা হয়ে থাকে।
ওজন কমায় সেই ১৮টি খাবারের নাম খুঁজছেন?
তার আগে কিছু টিপস জেনে নিন, যা সেই খাবার গুলোর পাশাপাশি আপনার শরীরের চর্বিকে খুব দ্রুত পুড়াতে করতে সাহায্য করবে।
* সকালের নাস্তায় হাই প্রোটিন খাবার গ্রহণ করুন প্রতিদিন। সকালে উচ্চমাত্রার প্রোটিন গ্রহণ করলে সারাদিন আপনার ক্ষুধা কম হবে এবং ক্যালরি গ্রহণ ও কম হবে।
* ফলের জুস খাবেন না। চিনিযুক্ত যে কোন ড্রিঙ্কস বাদ দিন। অনেক মানুষ সারাদিন অনেক বেশী জুস পান করেন যা তাদের শরীরে ফ্যাট জমার একটা বড় কারণ।
* খাবার গ্রহনের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পানি পান করুন। University of Birmingham এর এক গবেষণায় দেখা গেছে পানি পান করার এই অভ্যাস নাটকীয়ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
* দ্রবনীয় আঁশ জাতীয় খাবার অথবা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। যেমন glucomannan। এটি একধরনের মেটে আলুর থেকে তৈরি ক্যাপসুল। খুব দ্রুত ফ্যাট বার্ন করার ক্ষমতা আছে এর।
* ক্যাফেইন শরীরের মেটাবলিজম কে বুস্ট করে। যত খুশি চা কফি পান করুন। তবে অবশ্যই চিনি ছাড়া।
* আস্তে আস্তে খাবার খান। গবেষণায় দেখা গেছে যারা খুব দ্রুত খান তারা অদুর ভবিষ্যতে মোটা হয়ে যান। আস্তে খেলে আপনার পেট ভরবে দ্রুত খাবার শেষ হবার আগেই। না হলে খাবার শেষ হয়ে যাবে কিন্তু পেট ভরবেনা।
* ছোট প্লেটে খাবার নিন। এটি খুব কার্যকরী একটা উপায় ওজন কমানোর গবেষকরা ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন আপনি যখন ছোট প্লেটে খাবার খান তখন তুলনামুলকভাবে কম খান।
* পরিমিত ঘুমান। অল্প যাদের ঘুম হয় তাদের রিস্ক থেকে যায় ওজন বাড়ার। তাই ওজন কমাতে হলে রাতে ভালো ঘুম যেন হয় তা নিশ্চিত করুন।
পেটের মেদ কমানোর সহজ উপায় – ওজন কমানর সেই ১৮টি খাবারের তালিকা নিচে দেয়া হলঃ
1.মিস্টি আলুঃ মিস্টি আলুকে বলা হয় “Slow Carb”। তারা ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। এরা হজম হয় খুব আস্তে এবং আপানাকে দীর্ঘক্ষ্ণ কাজ করার এনার্জি দেয়।
মিস্টি আলুতে খুব উচ্চমাত্রায় ক্যারটিনয়েডস, এন্টি অক্সিডেন্ট আছে যা আপনার রক্তের সুগারের মাত্রাকেও স্ট্যাবল রাখে। এরা ভিটামিন এ, সি এবং বি ৬ এ ভরপুর যা আপনাকে জিমে ঘাম ঝরাতে সাহায্য করে।
2.লাল মরিচঃ
American Journal of Clinical Nutrition তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন ক্যাপ্সাইনিন নামক একটি উপাদান যা লাল মরেচে থাকে তা খুব দ্রুত শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এটা আপনার কপেতের ক্ষুধাকেও দমন করে।
3.এভোকাডোঃ
শরীরের ফ্যাট বার্ন করে যেসব খাবার এভোকাডো তাদের মধ্যে অন্যতম। Monounsaturated fat এ ভরপুর এই ফল পেটের অংশে ফ্যাট জমা কে বাধা দেয়।
4.ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ মাছঃ
প্রোটিন শরীরের মাংশপেশীকে গঠন করে। যত বেশী মাসল তত বেশী ফ্যাট বার্ন। মাছ খুব স্বাস্থ্যকর একটা সোর্স প্রটিনের। অমেগা৩ সমৃদ্ধ মাছ চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে চর্বি জমা হতে বাধা দেয়। এছাড়া প্রোটিন হজম হতে সময় লাগে তাই আপনার ক্ষুধা কম হয় এবং ওজন কমতে থাকে।
5.সাদা চাঃ
The Journal of Nutrition and Metabolism এর তথ্য অনুযায়ী সাদা চা ফ্যাট( lipolysis) কে ভেঙ্গে ফেলার গতি বৃদ্ধি করে এবং নতুন ফ্যাট সেল গঠন হতে বাঁধা দেয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে সাদা চায়ে প্রচুর পরিমান এন্টি অক্সিডেন্ট আছে সবুজ চায়ের থেকেও বেশী যা কোষ থেকে ফ্যাট সেলকে মুক্ত করতে সাহায্য করে এবং চরবিকে এনার্জিতে রুপান্তর করতে লিভার কে সাহায্য করে।
সাদা চা কি, কিভাবে বানাবেন বিস্তারিত পাবেন এই লিঙ্কেঃ http://bit.ly/what-is-white-tea
6.বেরি জাতীয় ফলঃ
Texas Woman’s University এর তাদের এক গবেষণায় দেখিয়েছেন বেরি জাতীয় ফল ,তাদের পলিফেনল নামক এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদানের জন্য ফ্যাট বার্ন করতে হেল্প করে।
এরা ওয়ার্ক আঊটের সময় আপনার পেশীতে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে ওজন কমানোর মাত্রাকে বৃদ্ধি করে। তারমানে ব্যায়ামের পর আপনি সুফল পাবেন তাড়াতাড়ি।
7.ডিমঃ
ডিম Choline নামক একধরনের পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে যা সে জিন গুলোকে নষ্ট করে যা আপনার পেটের অংশে চর্বি মজুদ করে। গবেষণায় দেখা গেছে আপনি যদি সকালের নাস্তায় একটা ডিম রাখেন তাহলে সারাদিনে আপ্ন্র শরীরের ফ্যাট বার্ন হওয়া বৃদ্ধি পায়।
8.কালো বিনঃ
কাল রঙের এই খাদ্যটি খুব আস্তে হজম হয় । এটি আপনার পাকস্থলীর উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে butyrate নামক রাসায়নিক উৎপাদনে সাহায্য করে যা শরীরের ফ্যাট সেল কে তাদের জ্বালানী হিসেবে কাজে লাগায়। এক কাপ পরিমানের কালো বিনে ৪.৮ গ্রাম দ্রবণীয় ফাইবার য়াছে।
9.নারিকেল তেলঃ
নারিকেল তেল শরীরের ফ্যাট বার্ন করে। এটা আমাদের তলপেটের চর্বি জমা কমায় কারণ এর ট্রাইগ্লিসারাইড চর্বি হিসেবে না জমে এনার্জি হিসাবে খরচ হয়।
10আমন্ডঃ
এই বাদামে এমন উপাদান আছে যা শরীরের চর্বি গ্রহনের মাত্রা কমায়।
L-arginine amino acid নামক উপাদান ফ্যাট এবং কার্বকে বার্ন করে। জার্নাল অফ আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশান এর মত এটি।
11.পালং শাকঃ
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ফলেট এবং আয়রন আছে যারা শরীরের এনার্জি তৈরি করে। Thylakoid নামক এর একটি উপাদান ক্ষুধা কমায় এবং ক্যালরি গ্রহনের মাত্রা কমায়।
12.দারচিনিঃ
দারচিনিতে পলিফেনল নামক এন্টি অক্সিডেন্ট আছে যা রক্তের চিনির মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখে এবং ক্ষুধা দমন করে।
13.ফুলকপিঃ
Institute of Human Performance এর Carlos Santana এর মতে ফুলকপি হজম করতে শরীরকে অনেক বেশী তাপ উতপাদন করতে হয় যার ফলে প্রচুর ফ্যাট বার্ন হয়।
14.কালো চালঃ
American chemical society এর মতে কালো চালে অনেক বেশী পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট ,ফাইবার এবং ভিটামিন ই আছে। এতে চিনির পরিমান খুব কম। এটি শরীরের চর্বি জমতে বাঁধা দেয়।
15.প্লাম ফলঃ
প্লাম জাতীয় ফল শরীরের মেদ জমানর জন্য দায়ী জিন গুলোকে বাধাগ্রস্ত করে।
16.পিনাট বাটারঃ
পিনাট বাটার মেদহীন পেটের জন্য দরকারি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এবং এটি রক্তের কোলেস্টরেলের মাত্রা কমায়। এতি উদ্ভিজ প্রোতিনের অনেক বড় উৎস। পিনাট বাটারে phenylalanine নামক এমাইন এসিড আছে যা ক্ষুধা কমায়, চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে এবং খুব দ্রুত ওজন কমায়।
17.রসুনঃ
রসুনে allicin নামক উপাদান আছে যা শরীরের চর্বির বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই উপাদেনের কারনেই রসুনের এই উৎকট গন্ধ এবং ঝাঁঝালো স্বাদ।
18.হলুদঃ
এই কমলা রঙের শিকড় খুব শক্তিশালী ফ্যাট ফাইটার। হলুদে curcumin নামক উপাদান আছে যা জেকোন প্রদাহের বিরুদ্ধে খুব কার্যকর। Journal of Oncogene এ প্রকাশিত এক স্টাডিতে দেখা গেছে আমাদের সময়ের সবচেয়ে বেশী প্রদাহরোধী খাদ্য হল হলুদ যা ওজন কমানর জন্য অনেক বড় বন্ধু।