একদিনে ভাটিয়ারী ভ্রমণ

ভাটিয়ারী সমুদ্র আর পাহাড়ে ঘেরা ভ্রমণ পিপাসুদের একটি তীর্থস্থান

জায়গা বর্ণনাঃ হাটহাজারি-ভাটিয়ারি লিংক রোডের দূরত্ব প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার। দেখে যেন মনে হয় এক মিনি পার্বত্য অঞ্চল। চারিপাশে ছোট ছোট টিলা, তার মাঝ দিয়ে চলে গেল আকা-বাকা, উচু নিচু রাস্তা। আর এই ১০-১২ কিমি রাস্তা জুড়ে রয়েছে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনের মাধ্যম হত পারে ভাটিয়ারী ভ্রমণ। যেখানে দেখতে পারেন ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্ট; ভাটিয়ারী ক্যাফে ২৪; ভাটিয়ারী লেক; ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব, আরো করতে পারেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত এডভেঞ্চার ট্রেইল। আসুন আমরা নিচে বিস্তারিত জেনে নিই।

ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্ট আর্মি পরিচালিত একটি রেস্তোরা। যেখানে দাঁড়িয়ে দূর সাগরের সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন। সর্ব সাধারণের জন্য উম্মুক্ত, তবে আপনি চাইলে রেস্তোরা বসে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে কফি, চা, চিপস, আইস্ক্রিম সহ ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন। এটি হাটহাজারী-ভাটিয়ারি লিংক রোডে বড়দিঘী পাড় থেকে ১০ কিমি এবং ভাটিয়ারী থেকে ২ কিমি দূরে অবস্থিত।

তারপর দেখতে পারেন অনাবিল রূপমাধুর্য্যের অধিকারী ভাটিয়ারী লেক। এটিও সর্ব সাধারণের জন্য উম্মুক্ত, তবে আপনি চাইলে প্যাডেল নৌকা/ইঞ্জিল চালিত নৌকা/সাম্পান ভাড়া করে লেকের চার পাশে ঘুরে দেখতে পারেন। পাহাড়ে ঘেরা লেকের মধ্যে ঘুরা বেড়ানোর মজাই আলাদা। এটি হাটহাজারী-ভাটিয়ারি লিংক রোডে বড়দিঘী পাড় থেকে ৮ কিমি এবং ভাটিয়ারী থেকে ৪ কিমি দূরে অবস্থিত।

ছবিঃ ভাটিয়ারী লেক
ছবিঃ ভাটিয়ারী লেক

এরপর দেখে নিতে পারেন লেকের আশেপাশে কিংবা সানসেট পয়েন্ট থেকে দেখতে পাওয়া সবুজ গলিচাময় ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে গড়ে ওঠা ভাটিয়ারীগলফ এ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব দেশের প্রায় ১২টি গলফ ক্লাবের মধ্যে সেরা। প্রবেশ করে ঘুরে আসতে পারেন যদিও নিরাপত্তা স্বার্থে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হয়।

ছবিঃ ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব
ছবিঃ ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব

সর্বশেষ দেখে নিতে পারেন ভাটিয়ারী ক্যাফে ২৪ রেস্টুরেন্ট যদিও অনেকেই শুধুমাত্র ক্যাফে ২৪ পার্ক ঘুরতে যায়। চারদিকে ছোট পাহাড়, নীল আকাশ আর খোলা প্রান্তরে এই ক্যাফে সময় কাটানোর জন্য চমৎকার। ক্যাফে ২৪ রেস্টুরেন্ট একটি ছোট্ট পার্ক যার প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। টিকেট কেটে মূল পটক পড়িয়ে সামনে দেখতে পাবেন ক্যাফে ২৪ রেস্টুরেন্ট, আর ডানপাশে দেখতে পাবেন নানারকম পাখির এক বিরাট খাঁচা, পাহাড় ঢালে বসার ছাউনি দোলনা, আর সবুজ মাঠের মধ্যে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য নানা রকম রাইড। আর বা পাশে দেখতে পাবেন একটি নয়নাভিরাম কনফারেন্স রুম, পাশে হরেক রকম ফুল ও পাতা বাহার গাছ। আর কৃত্রিম ঝর্ণাধারা পানি মিশে যাচ্ছে লেকের পানিতে আর লেকে রঙিন রাইডগুলো ভেসে বেড়াই চারদিকে।আর সকল বয়সী মানুষের জন্য রয়েছে ট্রেন রাইড সহ অসংখ্যা বিনোদন।

ভাটিয়ারী ক্যাফে ২৪ পার্ক
ছবিঃ ভাটিয়ারী ক্যাফে ২৪ পার্ক প্রবেশ পথে ঝর্ণা

ভ্রমণ পাগল মানুষদের জন্য পার্কের ভিতর ঠিক লেকের পাশের পাহাড়ে রয়েছে অসাধারণ সেনাবাহিনীর ট্রেনিং এডভেঞ্চার। যার মধ্যে আপনি পাবেন কখনো দড়ি বেয়ে হাঁটা, কখনো উঁচু পথ লাফিয়ে পার হাওয়া বা দড়ি ধরে ঝুলে পার হাওয়া, আবার কখনো সুড়ঙ্গের মতো পথ দিয়ে হামাগুডি দিয়ে চলা সব এডভেঞ্চার।

প্রায় ১০-১২ কিমি এই রাস্তা হেটে যেতে পারলে সব সৌন্দর্য মোক্ষম ভাবে উপভোগ করা সম্ভব, সাইকেল রাইডের জন্যও এটি একটি স্বর্গময় রাইড।

টিকেটঃ ভাটিয়ারী ক্যাপে ২৪ জনপ্রতি টিকেট মূল্য ৫০ টাকা আর এডভেঞ্চার জনপ্রতি ১০০ টাকা। ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্ট এবং ভাটিয়ারী লেকে কোন টিকেট প্রয়োজন হয়না। ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব প্রবেশ করতে অনুমতি প্রয়োজন হয়।

যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ সারা বছর ভাটিয়ারী ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। যদি সব গুলো স্পট দেখতে চান বা একদিনের প্ল্যান থাকলে সকাল বেলা চলে যাওয়াই ভালো। তবে প্রতিটি স্পট বিকাল ৩-৬ টা সময়টা খুব ভাল লাগবে।

কিভাবে যাবেন:

দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর হবার কারণে দেশের অনেক গুলো শহরের সাথে চট্টগ্রামের সড়ক ও রেলপথে সংযুক্ত। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় প্রতি ৩০ মিনিট পর পর গাড়ী ছেড়ে যায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।

বাস: নন এসি: ইউনিক, শ্যামলী, ইগল, সৈাদিয়া, এস আলম, টি আর, রিল্যাক্স, হানিফ। প্রায় সব নন এসি গাড়ী ছাড়ে সায়েদাবাদ থেকে। ভাড়া ৪৮০ টাকা। টিকেট কেনা যাবে কলাবাগান, ফকিরাপুল এবং আরামবাগ থেকে। এছাড়া অনলাইনে সহজ.কম থেকেও কিনতে পারেন। নন এসি গুলোর মধ্যে ইউনিক বেশ ভালো (নিরাপদ চালানো ও সিট হিসেবে)

এসি বাস: দেশের সেরা এসি বাসগুলো চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে। দেশ ট্রাভেলস, টি আর ট্রাভেলস, রিল্যাক্স পরিবহন, গ্রীনলাইন, সোহাগ পরিবহন, সেন্ট মার্টিন পরিবহন ইত্যাদী। ভাড়া ইকোনমি ক্লাস ৯০০ এবং বিজনেস ক্লাস ১২৫০ টাকা।

ট্রেন: ঢাকা চট্টগ্রামের মধ্যে বেশ কিছু ভালো ট্রেন চলাচল করে। সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধূলী, তূর্ণা নীশিথা ও চট্টগ্রাম মেইল। এর মধ্যে তূর্ণা ও মেইল চলে রাতে, বাকীগুলো দিনের বেলায়। ভাড়া ও বিস্তারিত রেলওয়ে ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে: www.railway.gov.bd বলে রাখা ভালো চট্টগ্রামের ট্রেনের টিকেটের সব সময় সংকট থাকে, ট্রেনে যাবার ইচ্ছা থাকলে অন্তত ৫ দিন আগেই টিকেট কেটে নিবেন।

বিমান: ঢাকা-চট্টগ্রাম অনেকগুলো বিমান চলাচল করে। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ বিমান, নভো এয়ার, ইউএসবাংলা, ইউনাইটেড, রিজেন্ট। সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত বিমান চলাচল করে। ভাড়া ৪,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা (ওয়ান ওয়ে)।

*** ঢাকা থেকে বাসে, ট্রেনে বা বিমানে যে কোন উপায়েই যাওয়া যাবে চট্টগ্রামে। এরপর অক্সিজেন মোড় থেকে লোকাল সিএনজি অটোতে চড়ে বড় দীঘির পাড় নামবেন, ভাড়া ১০ টাকা। সেখান থেকে চান্দের গাড়ি টাইপ লেগুনায় চড়ে ভাটিয়ারি যাবার পথে যেকোন স্থানে নেমে যেতে পারবেন, ভাড়া ২০ টাকা।

অথবা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ভাটিয়ারিতে নেমে বড় দীঘির পাড় যাওয়ার লেগুলায় চড়ে এখানে নেমে যেতে পারেন। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য ১০-১৫ মিনিট পর পর লেগুনা যাবেন এক স্পট থেকে অন্য স্পট ভাড়া নিবে ১০ টাকা করে।

নোটঃ এই রাস্তাটি মূলত ভাটিয়ারি-হাটহাজারি/অক্সিজেন মোড় ভায়া বড়দীঘির পাড় এর বাইপাস সড়ক। তাই নিরাপত্তা কথা চিন্তা করে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে উক্ত রোডে সকল যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

Similar Posts