মন খারাপের গান শুনতে কেন আমাদের বেশি ভালো লাগে?
প্রায় চল্লিশ হাজার পূর্বে প্রথম সঙ্গীতের সূচনা হয়েছিলো। সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সঙ্গীত মানব সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। গান শুনতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন। মন খারাপের সময়গুলোতে গান যেন হয়ে উঠে আরো আপন কিছু, হৃদয়ের অতি কাছের কেউ। গানকে বলা হয়ে থাকে হৃদয়ের ভাষা।
একটা ছোট প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি-
বলুন তো মানুষের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য কি?
প্রায় সব মানুষের একটাই লক্ষ্য। সুখী হওয়া।
কিন্তু গানের বেলায় কেন আমরা মন খারাপের গান অনেক বেশি শুনি এবং বিষণ্নতায় ভুগতে ভালোবাসি? অদ্ভুত এক প্যারাডক্স!
এই প্যারাডক্স নিয়ে গবেষণা করেছিলেন ড: স্যান্ড্রা গ্যারিডো। উনি এবং উনার কিছু সহযোগী মিলে প্রায় এক হাজার মানুষের উপর একটা পরীক্ষামূলক সার্ভে করেন। কেন এই মানুষগুলো মন খারাপের গান বেশি শোনেন, কখন বেশি শোনেন, এর ইফেক্ট কি, কোন সিচুয়েশনে কিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় এবং আরো কিছু ফ্যাক্টর কন্সিডার করা হয়েছে এই সার্ভেতে।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে ড: গ্যারিডো সুনির্দিষ্টভাবে একটা কারণও বের করতে পারেনি কেন মানুষ মন খারাপের গান বেশি শোনে। তবে উনি কিছু ক্যাটাগরি করতে পেরেছিলেন।
- কিছু মানুষ আছে যারা গানের কথাগুলো নিজের জীবনের সাথে মিশিয়ে ফেলে। গানের প্রতিটা বাক্য সে নিজেকে দিয়ে যাচাই করে, নিজেকে সেখানে বসিয়ে দুঃখবিলাসে ভেসে যায়। এরা প্রায় বেশিরভাগ মন খারাপের গান শুনেই ভাবতে থাকে, আরেহ! এই গানটা তো আমার জন্যই লেখা হয়েছে! এজন্যই দুঃখের গান শুনতে এরা বেশি পছন্দ করে।
- দ্বিতীয় ক্যাটাগরির মানুষরা গানের কথাকে নিজের জীবনের সাথে মিশিয়ে ফেলে না। এরা গানের করুণ সুরের আবেগী যাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে উপভোগ করতে থাকে। মন খারাপের গানে এদের মনে তেমন নেগেটিভিটি তৈরি হয়না।
- তৃতীয় ক্যাটাগরির মানুষরগুলো হচ্ছে কিছুটা প্রথম ক্যাটাগরির মানুষগুলোর মত। গানটাকে নিজের জীবনের সাথে মিশিয়ে ফেলে নিজের দুঃখবোধটাকে আরো অনেক বেশি বাড়িয়ে ফেলে। ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা এই ক্যাটাগরির মানুষগুলো গানের করুণ সুরের সাথে নিজেকে আরো বেশি সংযুক্ত করে ফেলে ডিপ্রেশনের লেভেলটাকে আরো কড়া করে ফেলে। নিজের জীবনের সমস্যা, বেদনাগুলোকে গানের সাথে সাথে সামনে নিয়ে আসে। নিজেকে তুচ্ছ মনে করে, নিজের অস্তিত্বকে মূল্যহীন মনে করতে থাকে। এবং একসময় এরা সুইসাইডাল হয়ে যায়।
কিছু মানুষ আছে যাদের মধ্যে নেগেটিভিটি অত্যন্ত বেশি। তারা স্যাড মিউজিক শুনে আর ভাবে এর মাধ্যমে তারা তাদের জমে থাকা কষ্টগুলো উপড়ে দিতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে হয় তার উল্টোটা। তারা নেগেটিভিটির একটা দুষ্টচক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে। এই অবস্থাটাকে বলা হয় Rumination.
দুই ধরনের rumination হয়।
- Low Rumination
- High Rumination
ড: গ্যারিডোর পরীক্ষায় উনি দেখতে পান, high ruminatist মানুষরা স্যাড মিউজিক শুনে আরো অনেক বেশি ডিপ্রেশনে পড়ে যায়, তারা আরো বেশি অফ মুডে থাকে। অন্যদিকে low ruminatist মানুষরা কিছুটা অফ মুডে গেলেও কুইক রিকভার করে ফেলতে পারে। ডিপ্রেশনে আবদ্ধ হয়ে থাকেনা। আর যারা ক্লিনিক্যাল মেজর ডিপ্রেশনে আছে, তাদের ক্ষেত্রে স্যাড মিউজিকের ইমপ্যাক্টটা খুবই ভয়াবহ এবং সুইসাইডাল।
“Gloomy Sunday” নামক এক হাঙ্গারিয়ান সুইসাইডাল গান শুনে আঠারো জন মানুষ সুইসাইড করেছিলো। BBC তে প্রায় ৬৬ বছর নিষিদ্ধ ছিলো গানটি। এরপর ২০০২ সালে ব্যান তুলে নেয়া হয়েছিলো।
তাই আপনি যদি মেজর ডিপ্রেশনে থাকেন তাহলে অতি অবশ্যই মন খারাপের গান শোনা থেকে বিরত থাকবেন, একা থাকবেন না এবং হ্যাপি মিউজিক শোনার চেষ্টা করুক। এটা আপনার ডিপ্রেশন লেভেল কমিয়ে আনবে।
তো পাঠক, আপনারও কি মন খারাপের গান শুনতে বেশি ভালো লাগে? কোন ক্যাটাগরির অর্ন্তভুক্ত আপনি?
More Resources:
Why we love sad music- (https://www.google.com/amp/s/www.psychologytoday.com/us/blog/the-theater-the-brain/201811/why-we-love-sad-music%3famp)
আমার ক্ষেত্রে অনেকবার লক্ষ্য করেছি শুধু স্যাড সং না, আমি কোন দুঃখের মনগড়া কাহিনী ভেবে কাঁদতেও আমার ভালো লাগে। তার পেছনের সাইকোলজি জেনে অবাক হলাম
??
মন খারাপের গান শুনতে ভালোই লাগে। মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে Sad song শোনা হয় ঠিকই। কিন্তু কখনো আরও বেশি depressed হইনি আপাতত। আমি তো ভুলেই যাই কিজন্য মন খারাপ করেছিলাম??।