আপনার সন্তান পরীক্ষায় পাশ করার পাশাপাশি শিক্ষিত হচ্ছে তো!
প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষা গুলোর রেজাল্টের পর কিছু ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায় সর্বোচ্চ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীরা জানে না দেশের ইতিহাস, জানে না দেশের বিজয় দিবস কবে! স্বাধীনতা দিবস কবে! গ্রামারের শত শত নিয়ম পড়ে যারা ইংলিশে এতো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয় তারা জানে না ‘আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি’ এর ইংলিশ অনুবাদ কি? আর একটু যদি আমাদের স্কুল কলেজের শিক্ষা অর্জনটি দেখতে যাই, প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গুলোতে পাশও করতে পারছে না।
এই গুলো কথা তো সবাই বলে, অনেকই পক্ষে-বিপক্ষে তাদের মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখুন নিজেদের অবস্থান থেকে আমরা নিজেদের কিভাবে তৈরি করছি? নিজের সন্তানদের কি শুধু ভালো নম্বরের পিছনে ছুটতে শেখানো হচ্ছে নাকি তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছি!
দিনের পর দিন পিতামাতা সন্তানের মাথার অপর চাপিয়ে দিচ্ছেন নম্বরের বোঝা, সন্তান কোন বিষয়ে দুর্বল হতে পারে, তার আগ্রহ সব বিষয়ে একই রকম থাকবে না এইটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পিতা মাতার সব বিষয়ে পুরা নম্বর চাই। সব বিষয়ে এ-প্লাস চাই তা না হলে ভাবী সমাজে কথা বলা যাবে না। এমনটাই আমাদের সমাজের অবস্থা।
কখনো কি ভেবেছেন সন্তান কি চায়! তার আগ্রহের জায়গাটা কোথায়! তার কোথায় সমস্যা হচ্ছে! যেই শিক্ষা অর্জন করার জন্য তার কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে, তার পাঠ্য প্রস্তুকের সঠিক শিক্ষাটি কি সে অর্জন করতে পারছে ! সে কি সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে !
শিক্ষার নানা সংজ্ঞা আছে তার মাঝে উল্লেখযোগ্য একটি হল- “ মানুষের আচরণের কাঙ্ক্ষিত বাঞ্ছিত এবং স্থায়ী পরিবর্তন হল শিক্ষা”
আমাদের শিশুরা সপ্তম শ্রেণী হতে অষ্টম শ্রেণীতে উঠলেই ভুলে যায় তারা সপ্তম শ্রেণীতে কি পড়েছিল, অর্থাৎ তাদের জ্ঞান অর্জন জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, বার্ষিক পরীক্ষা তাদের সারাবছরের অর্জনের সমাপ্তি।
একটু চিন্তা করে দেখুন আমরা সারাজীবন পিতা মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা পড়ে এসেছি কিন্তু আমরা যখন বড় হই তাদের আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে । আবার ধর্ম বইয়ে সত্য ও ন্যায়ের কথা পড়ে এসেও সমাজে অনৈতিক কাজ গুলো কত অবলীলায় করে যাচ্ছি। তাহলে এই শিক্ষার মূল্য কোথায়!এটা কি শুধুই সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় নাকি শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি!
শিক্ষাকে শিক্ষার্থী-বান্ধব করার জন্য কিন্তু আমাদের কারিকুলাম সহ শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করা হচ্ছে। এই ধরুন শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যা পরিহার করে তাদের মেধা বিকাশের জন্য সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন করা হল। আমরা কি করলাম! সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের জন্য যেই গাইড অথ্যাৎ যে গাইডলাইন দেওয়া হয় আমার সেই গাইডের প্রশ্ন গুলো মুখস্থ করা শুরু করলাম।শিক্ষার একটি বিশাল অংশ সংগঠিত হয় বিদ্যালয়ে, তাদের ভূমিকা কতটুকু!
স্কুল,কোচিংয়ের শিক্ষকরা শিটের পর শিটের বোঝা ঝুলিয়ে দিছেন শিক্ষার্থীর মাথার ওপর সেগুলো মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় তুলে দিচ্ছে, পিতা-মাতা পেয়ে যাচ্ছেন সন্তানের ভালো নম্বর আর শিক্ষকদের সময় শ্রম দুটো কম লাগছে। এই পদ্ধতিতে আসলেই কি বাচ্চারা কিছু শিখছে?
আপনার বাচ্চাকে তোতাপাখির মতো নয় মানুষের মতো মানুষ তৈরি করুন। শুধু নম্বরের পিছনে না ছুটে শিক্ষা অর্জনের পিছনে ছুটুন। আপনার বাচ্চাকে বুঝতে শিখুন সে কি চায়! তার আগ্রহের জায়গাটি খুঁজে বের করুন, তাকে সময় দিন, মানসিক দিক থেকেও যাতে সে একজন মানবিক মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেই পথে হাটঁতে তাকে সাহায্য করুন। আপনার সারাজীবনের অর্জিত জ্ঞানকে নিজের মাঝে ধারণ করুন সেই আলোয় নিজের সন্তানদের আলোকিত করুন।
শিক্ষা শুধুমাত্র বই-পুস্তুকে নয় শিক্ষা থেকে জীবনের প্রত্যেক পদে পদে। আপনার সন্তানের জন্য নির্ধারিত যে কারিকুলাম,পাঠ্যপ্রস্তুক সেটি সঠিকভাবে তাকে বুঝতে সাহায্য করুন। শিশুর শিক্ষাকে বাস্তব-নির্ভর করে গড়ে তুলন। যাতে আপনার সন্তান ‘মানুষের মতো মানুষ হতে পারে’ ।