হাম হাম জলপ্রপাত || মৌলভীবাজার
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য জলপ্রপাত গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাম হাম জলপ্রপাত। বছর দশক আগে একদল পর্যটকের হাত ধরেই আবিস্কৃত হয় এই জলপ্রপাতটি। এটি মৌলভীবাজার জেলায় রাজকান্দি নামক সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বাংলাদেশ -ভারত সিমান্তের কাছে অবস্থিত। ভূমিপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৫0 ফুট উপর থেকে ঝর্ণার পানি দুই ধাপে বয়ে পড়ে। গাছপালায় ঘেরা এ বনের মধ্যে অসম্ভব সুন্দর এই ঝর্ণাটি বনটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয়দের কাছে ঝর্ণাটি চিতা ঝর্ণা নামেও পরিচিত।
বর্ষায় মৌলভীবাজার জেলায় দেশের রেকর্ড পরিমান বৃষ্টি হয়ে থাকে। এজন্যে এ সময়টিতে ঝর্ণাটির স্রোতধারা বেশি থাকে। দেখে মনে হয় এ সময় ঝর্ণাটি যেন নবরূপ যৌবন লাভ করে। অন্যদিকে শীতকালে এর পানি প্রবাহ কমে যায়। তাই ঝর্ণার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষা মৌসুমে আসতে হবে। এদিকে বর্ষায় অধিক বৃষ্টিপাত হওয়াতে বনের মধ্যে পথটিও অনুকূলে থাকে না। পিচ্ছিল হয়ে যায় মাটির পথ, পিচ্ছিল পাথুরে পথের সাথে সাথে রয়েছে জোঁকের উপদ্রব। তবুও ঝর্ণাটি এক মায়াবী ডাকে ভ্রমণ পিপাসুদের তার নিকট আহবান করে।
যেভাবে যাবেনঃ
হাম হাম ঝর্ণার জন্য প্রথমে শ্রীমঙ্গল আসতে হবে যা মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল বাস / ট্রেন দুভাবেই আসা যায়। তবে ট্রেনের মাধ্যমে আসাটাই আরামদায়ক হবে। ঢাকা – সিলেট রুটে উপবন এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস – ট্রেনগুলো চলাচল করে থাকে। উপবন এক্সপ্রেস রাতে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। ভোর ৫.৩০ টার দিকে শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনে পৌঁছায়৷ এখানে থেকে সরাসরি হাম হাম ঝর্ণার উদ্দেশ্যে যাওয়া যাবে। ট্রেনে যাত্রীসেবা অনুযায়ী ভাড়া পড়বে ২৪০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা।
ঢাকা – শ্রীমঙ্গল রুটে হানিফ, এনা, বি আর টি সি – বাস চলাচল করে থাকে। রাজধানী সায়দাবাদ থেকে এসি – নন এসি বাস গুলো ছেড়ে যায়। যাত্রী সেবা অনুযায়ী ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা পড়বে। এছাড়াও লোকাল কিছু বাসও চলাচল করে। এখানে শ্রীমঙ্গল চৌমহনা বাস পয়েন্টে নামতে হবে। এই রুটে রাস্তা দু লেনের ও আকা বাঁকা হওয়াতে বাসের মাধ্যমে না আসাই উত্তম।
তো যাই হোক শ্রীমঙ্গল আসার পর এখান থেকে জীপ ভাড়া করতে হবে। একে অনেকে চান্দের গাড়ী ও বলে থাকে। এর ভাড়া পরবে ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। এই গাড়ি করে শ্রীমঙ্গলের চা এর বাগানের মধ্যে দিয়ে আকা বাঁকা পথ পেরিয়ে যেতে হবে কলাবাগান পাড়া। এখানে থেকে স্থানীয় আধিবাসী গাইড পাওয়া যাবে যিনি যাবার পথ দেখাতে সাহায্য করবে। এজন্য তাকে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দিতে হবে। শ্রীমঙ্গল থেকে কলাবাগানপাড়া আসতে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘন্টা। তারপর এখান থেকে ঝর্ণার উদ্দেশ্যে প্রায় ৫ কিলোমিটার বন্ধুর পথ হাঁটতে হবে। বর্ষা মৌসুমে আসলে অবশ্যই প্রতিটি মুহূর্তে সাবধান থাকতে হবে। কেননা সামান্য অসাবধানতা বড় কোনো দূর্ঘটনার কারণ হতে পারে। অবশ্যই শ্রীমঙ্গল থেকে হাম হাম এর উদ্দেশ্যে আসার পথে পর্যাপ্ত খাবার সঙ্গে আনতে হবে। কেননা কলাবাগানপাড়াতে খাবারের জন্য কোনো হোটেল নেই।
কোথায় থাকবেনঃ
শ্রীমঙ্গল পর্যটন কেন্দ্র হওয়াতে এখানে মধ্যম থেকে ফাইভ স্টার মানের অসংখ্য আবাসিক হোটেল রয়েছে। রেলস্টেশনের পাশেই হোটেলগুলো অবস্থিত। অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে রয়েছে ফ্রি ওয়াই ফাই ব্যবস্থা। এদের মধ্যে গ্রিন লিফ গেস্ট হাউস, সুলতান রেস্টুরেন্ট এবং গেস্ট হাউস, হোটেল স্কাই পার্ক, হোটেল ইশাকি আমোস, হোটেল টাওয়ার ইনন, হোটেল মেরিনা, শ্রীমঙ্গল ইনন হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট অন্যতম। এখানে রুম অনুযায়ী ভাড়া পড়বে ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা। আর খাবারে জন্য এখানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে থাকলেও স্টেশন থেকে হাতের কাছে পাওয়া যাবে পানসী রেস্টুরেন্ট। এখানে চা থেকে শুরু করে সকল ধরনের খাবার পাওয়া যায়। খাবারের গুণগত মানও যথেষ্ট ভালো।
হাম হাম জলপ্রপাতের নাম এই প্রথম শোনলাম। ধন্যবাদ নতুন কিছু জানানোর জন্য।