প্রিয়জনের মন জয় করার উপায়
আপন মানুষটির মুখে এক চিলতে হাসি দেখা – সে যেন শত জনমের এক প্রাপ্তি৷ প্রিয় মানুষটাকে খুশী করার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। তার একটুখানি মন পাওয়ার জন্য চেষ্টা তদবিরের অন্ত থাকেনা কখনো। কারণ, প্রিয় মানুষটা সুখে থাকলেই তো নিজে তৃপ্তির সাগরে ভাসা যায়। তার হাসি দেখেই নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেওয়া যায় প্রহরের পর প্রহর। কিন্তু সেই হাসি তো এমনি এমনিতে আসে না। তার মন জয় করার জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। মন জয় করার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কৌশল নিয়েই আমাদের আজকের এ আলোচনা।
সময় দিন পর্যাপ্ত, খোঁজখবর নিন নিয়মিত
প্রিয় মানুষটার সাথে যত বেশি সময় কাটাবেন, সে ততো বেশি কাছে আসবে। তাই তাকে যথেষ্ট সময় দিন। স্পেশাল মোমেন্টে পাশে থেকে তার আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিন। মাঝেমাঝে আকর্ষণীয় স্পটে ঘুরতে নিয়ে যান তাকে। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে তার পাশে থেকে সাহায্য করুন। চরম মুহূর্তেও হাত না ছাড়ার মানসিকতা রাখুন। সঙ্গীর পরিবারের খোঁজ নিন নিয়মিত।
প্রশংসা করুন সবসময়, ভুল হলে ক্ষমা করুন
আপন মানুষটার প্রত্যেকটি ভালো কাজের প্রশংসা করুন। উৎসাহ দিন। এতে আপনার প্রতি তার আস্থা ও বিশ্বাস বেড়ে যাবে বহুলাংশে। কোনো কাজে তার ভুল হয়ে গেলে স্যাক্রিফাইস করার মানসিকতা রাখুন। সে যদি ভুল স্বীকার করে সরি বলে, ক্ষমা করুন, অপমান করবেন না। অতীতের কোনো ভুলের জন্য কথা শোনাবেন না। খোঁচার তীরে বিদ্ধ করবেন না প্রিয় মানুষটাকে।
নিজে হাসুন, প্রিয় মানুষটিকে হাসান
নিজে প্রাণ খুলে হাসুন। তাহলে ভালোবাসার মানুষটির মুখেও হাসি ধরে রাখতে পারবেন সবসময়। হাসিই পারে সব দুঃখ-গ্লানি ভুলিয়ে রাখতে। সঙ্গীকে সর্বদা ভালোবাসার কথা বলতে থাকুন। একটু রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার প্রতিটি কথা থেকে যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়ে অপার রসবোধ। তার কাছে নিজেকে করে তুলুন পরম আকর্ষণীয়।
উপহার দিন, পছন্দ-অপছন্দের খোঁজ রাখুন
মাঝেমধ্যে ছোট্ট কিছু উপহার অনেক খুশী করে দিতে পারে আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে। তাই সুযোগ পেলেই সাধ্যমতো সারপ্রাইজ গিফট দেওয়ার চেষ্টা করুন। কখনো কখনো ফুল নিয়ে হাজির হয়ে যেতে পারেন তার সামনে। এই পৃথিবীতে ফুলের চেয়ে বড় আর কোনো উপহার হতে পারে না। যত্নের সাথে সঙ্গীর পছন্দ-অপছন্দের খোঁজ রাখুন। তাকে পছন্দের খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
ঝগড়ায় মাথা ঠান্ডা রাখুন, সরি বলুন
একসাথে থাকতে গেলে ঝগড়া হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সামান্য মনোমালিন্য হলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠা যাবে না। একটু কষ্ট করে হলেও মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। মুখ ফসকে যা ইচ্ছা তাই বলে ফেলবেন না। পরিস্থিতি বুঝে কথা বলার চেষ্টা করুন। নীরবতা আর চুপ থাকাই এ সময় আপনাকে দিতে পারে সর্বাধিক সুবিধা। কখনোই বাড়াবাড়ি করবেন না। ঝগড়ার মুহূর্তে তার অবদানের কথা স্মরণ করুন। ভুলটা যারই হোক, আপনিই প্রথম এগিয়ে যান। দায় স্বীকার করুন, সরি বলুন। সর্বোচ্চ স্যাক্রিফাইস করে সবকিছু মিটমাট করুন।
হিসাব-নিকাশ বাদ দিন, সহযোগিতা করুন
আপনি যতই চেষ্টা করুন, চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কখনো মিলাতে পারবেন না। তাই “আমি তার কাছ থেকে কী পেলাম বা পাচ্ছি” এই চিন্তা থেকে দূরে সরে একটু ভাবুন “আমি তাকে কী দিলাম বা দিতে পেরেছি”। পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মানসিকতা দূর করুন। তার প্রতি মনের ভুল ধারণাগুলো আজই ঝেড়ে ফেলে দিন। একে অপরের কাজে সহযোগিতা করুন। তার সুবিধা অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখুন। প্রিয় মানুষটাকে একটু স্বাধীনতা দিন।
শেয়ার করুন সবকিছু, ধরে রাখুন স্বকীয়তা
মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রিয় মানুষটার কাছে বলতে না পারলে আর কার কাছে বলবেন? তাই কিছু লুকানোর চেষ্টা না করে প্রাণখুলে সবকিছু বলে ফেলুন। শেয়ার করুন মনের সব কথা, সব ব্যথা। সত্য কথা বলুন সবসময়। তবে অবশ্যই নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন। স্বকীয়তা বিসর্জন না দিয়ে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন।
আমরা অনেক সময় গাধার মতো খেটেও প্রিয় ব্যক্তিটির হৃদয় স্পর্শ করতে পারি না। পারি না শান্তির ছোঁয়া দিয়ে তাকে আপন করে নিতে। কিন্তু একটু বুঝে এই ছোট ছোট কাজগুলো করতে পারলে প্রিয় মানুষটার মন জয় করা এত কঠিন কিছু নয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
“হিসাব-নিকাশ বাদ দিন, সহযোগিতা করুন”
সেরা পয়েন্ট ছিল।