সাবধান ! অজীর্ণতা নাকি হার্ট অ্যাটাক?
অজীর্ণতা শব্দটির সাথে আমরা তেমন পরিচিত না থাকলেও মাঝেমধ্যেই অজীর্ণতা জিনিসটির সম্মুখীন আমরা হয়ে থাকি। অজীর্ণতা কে বদহজম হিসেবেই আমরা বেশি চিনে থাকি। খাবারের অনিয়ম, অতিরিক্ত পরিমাণে ভোজ, তৈলাক্ত খাবার খাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অজীর্ণতা বা বদহজমের সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। বদহজমের লক্ষণ গুলির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত সাধারণত পেট ফাঁপা, বুকে ব্যথা, বুক চেপে আসা, টক ঢেকুর ওঠা, অস্বস্তিবোধ, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি বদহজমের প্রধান লক্ষণ ৷
তবে আপনার সাথে যদি বদহজমের কোনো কারণ ছাড়াই বদহজমের উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ দেখা গিয়েছে যে বদহজম বা অজীর্ণতা রোগের বৈশিষ্টের সাথে হার্ট অ্যাটাকের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বেশ কিছু মিল রয়েছে এবং মূলত প্রধান কারণগুলোর ই মিল রয়েছে।
সুতরাং চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে যদি আপনি কোন ধরনের কারণ ছাড়াই বদহজমের উপসর্গগুলোর সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শুধু চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে নয় ইদানিং হার্ট অ্যাটাক এ আক্রান্ত হতে পারে যুবকেরাও৷ যদি কারো উপসর্গগুলো দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷ তবে অনেক ক্ষেত্রেই বদহজমের কারণ ব্যতীত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
বর্তমানে কর্মব্যস্ততার যুগে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। তাই আমরা অনেকেই ঠিকঠাক সময় খাবার গ্রহণ করি না৷ এর ফলে আমাদের পাকস্থলী তে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের আধিক্য দেখা দেয়। প্রশ্ন আসতে পারে,
হাইড্রোক্লোরিক এসিড কি?
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড হচ্ছে এক ধরনের তীব্র অ্যাসিড যা পাকস্থলিতে অবস্থান করে।এই এসিড এর প্রধান কাজ হচ্ছে খাদ্য পরিপাক করা। এছাড়াও যদি খাদ্য উপাদানে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলে সেই ব্যাকটেরিয়া কে ধ্বংস করতে সাহায্য করে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড।
তবে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ক্ষারিত হয় এবং সচরাচর যখন মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে তখন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষারিত হওয়ার জন্য মানুষের খাদ্য সঠিকভাবে পরিপাক হতে পারে। তবে সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ না করলে এই হাইড্রোক্লোরিক এসিডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যদি হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড অধিক সময় ধরে অবস্থান করে তাহলে পাকস্থলীর ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। আর এই কারনেই অনেক সময় উক্ত উল্লেক্ষিত বদ হজমের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। সুতরাং আপনারা বুঝতেই পারছেন তৈলাক্ত খাবার অথবা অতিরিক্ত ভোজ ব্যতীত আপনার বদ হজমে সমস্যা হতে পারে।
আপনার যদি হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে থেকে কোন আশঙ্কা থেকে থাকে যেমন অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাদ্য গ্রহণ, বিষন্নতা ইত্যাদি তাহলে হয়তো বা বদহজম ব্যতীত মাঝের মধ্যেই এই ধরনের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে সেই ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক।
আমার অজীর্ণতা অথবা হার্ট অ্যাটাক কোনটি হয়েছে সেটি বুঝবো কিভাবে?
অজীর্ণতা অথবা বদহজমের ক্ষেত্রে আপনি সাধারণত যে সকল এর ওষুধগুলো গ্রহণ করে থাকেন, সেই সকল ঔষধের দ্বারা যদি আপনি বদহজম থেকে কোন ধরনের উপশম না পান, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার হার্ট অ্যাটাকের যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে৷
এছাড়াও প্রকৃতপক্ষে যদি আপনি হার্ট অ্যাটাকের আক্রান্ত হন, তবে অজীর্ণতার লক্ষণ এর পাশাপাশি আপনি প্রচন্ড ভাবে ঘামতে থাকবেন এবং আপনার শরীরের বাম অংশে ব্যথা অনুভব হবে। একসময় মনে হবে যে আপনার শরীরের বাম অংশ অবশ হয়ে আসছে৷
তবে সেফটি ফার্স্ট!! অজীর্ণ হোক বা হার্ট অ্যাটাক, ওপরের লক্ষণগুলি যদি আপনার কখনো দেখা দেয় তাহলে অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি ইসিজি করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আর যদি আপনি সত্যিকার অর্থে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই
নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলুন :
১.ধূমপান করা যাবে না।
২ নিয়মিত ব্যায়াম এবং হাঁটাচলা করতে হবে।
৩.হাটা চলার অভ্যাস থাকতে হবে
৪.খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে কাঁচা ফল এবং শাকসবজি বেশি করে খেতে হবে
৫. চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা
৬.ভাজা খাবার মসলাযুক্ত খাবার অথবা ফাস্টফুড খাওয়া যাবেনা
৭.ঔষধ গ্রহন আবশ্যক।
মনে রাখবেন জীবন আমাদের সকলের প্রিয়। সুতরাং খানিকক্ষণের আনন্দ বা মানুষিক তৃপ্তির জন্য জীবনকে বিসর্জন দেওয়ার কোন মানে হয় না৷
সুতরাং সব সময় রুলস মেনইটেন করে চলতে শিখুন, এটি আমাদের সকলের কাম্য।