মাথা ব্যথা : কারণ, প্রকার ও প্রতিকার ।। পর্ব-২

(গত পর্বের পরে)

৬। যে সকল রোগে, যেমনঃ ইনফুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, মেনিনজাইটিস, বসন্ত, হাম প্রভৃতিতে অন্যতম উপসর্গ রূপে জ্বর থাকে এবং তার সহযোগী থাকে মাথাধরা। এতে ব্যথা অনুভূতি সম্পন্ন অঙ্গগুলোতে রক্তের পরিমাণ, চাপ কম-বেশি হওয়ার ফলে মাথা ধরে।

headaches-causes-types-and-treatment

৭। উচ্চ রক্তচাপের জন্য প্রায়ই মাথা ধরতে দেখা যায়। আমাদের মধ্যে অনেকের ধারণা যে, মাথাধরা উচ্চরক্তচাপের একটা অনিবার্য উপসর্গ। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের জন্য মাথা ধরতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবশ্য উচ্চরক্তচাপ জানার ফলে রোগীর যে মানসিক দুশ্চিন্তা হয় তার জন্যই মাথা ধরে।

৮। মস্তিষ্কের ভিতরে টিউমার হলে আশেপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে মাথা ধরে। প্রথমদিকে এই মাথাধরার বিরতি থাকলেও পরের দিকে প্রায়শই সর্বক্ষণ মাথাধরা লেগে থাকে।

৯। উল্লেখিত কারণ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে মাথা ধরতে পারে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ – মাথায় আঘাত, বিভিন্ন ধরনের এলার্জি এবং কয়েকটি প্রদাহ (Temporal, Arteritis, Trigeminal Neuralgria) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া যে কারো মাথায় চোট লাগলে সেই ঘটনার কিছুদিন পরে মাথা ধরা শুরু হতে পারে।

মাথা ধরা থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন?

মাথাধরার দু-একটি ঔষধ খেলে হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু মূল রোগ ধরে চিকিৎসা না করলে মাথা ধরা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। মূল রোগ নির্ণয় করতে হলে যত শীগ্রই সম্ভব উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। লক্ষ্মণ অনুসারে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা বিভিন্ন রকম হয়। যেমন – প্রদাহ হলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক, এলার্জি থাকলে সেই অনুসারে ব্যবস্থা এবং মাইগ্রেনে জীবনধারায় সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। মাথার ভেতরে টিউমার হলে শল্য চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে। কিন্তু বহুল অংশে দেখা যায় যে, দৃষ্টিশক্তির হ্রাস ও প্রতিসরণের ব্যাঘাত হওয়ার ফলেই মাথা ধরে। সুতরাং চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নিলে মাথা ধরার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

এছাড়া ঘরোয়া পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমেও মাথা ধরা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যেমন-

আদা

আদা – প্রাকৃতিক উপাদান

১। আদা হচ্ছে মাথা ধরার প্রাকৃতিক ঔষধ। এক চা চামচ শুকনো আদা গুঁড়ো, দুই টেবিল চামচ পানির মধ্যে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কপালে লাগাতে হবে। এতে ব্যথা থেকে উপশম মিলবে।
২। আদা মাথার রক্তনালির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এতে রক্ত প্রবাহ জনিত কারণে হওয়া মাথা ধরা কমে যায়।
৩। সমপরিমাণ আদার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে খেলেও মাথা ধরা থেকে প্রতিকার মেলে।
৪। আদা গুঁড়ো বা কাঁচা আদা সিদ্ধ করে সেই ভাপ নিলেও মাথা ধরার প্রতিকার পাওয়া যায়।
৫। দীর্ঘ মেয়াদী মাথা ধরা দূর করতে দুই টুকরো আদার ক্যান্ডি প্রতিদিন চিবুনো উচিৎ।

পুদিনা পাতার রস

পুদিনা পাতা – ভেষজ ঔষধাগার

১। পুদিনা পাতায় রয়েছে ম্যানথল ও ম্যানথন। এই উপাদানগুলো মাথা ধরা দূর করার জন্য খুবই উপকারী। তাই পুদিনা পাতার রস মাথায় লাগালেও উপকার পাওয়া যায়।
২। এ ছাড়া পুদিনার চা পাওয়া যায় বাজারে। এটি স্বাস্থ্য সম্মত চা এবং মাথাব্যাথা উপশমে কার্যকরী।

বরফ

বরফ

বরফ কুচি কুচি করে নিয়ে একটি কাপড় বা তোয়ালে নিয়ে ঘাড়ে রাখলে মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকটা উপশম হবে। তবে ঠান্ডা জনিত সমস্যা থাকলে এই পদ্ধতি অনুসরণ না করাই ভালো।

মাথা আমাদের দেহের অপরিহার্য ও অসীম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। তাই কোনো মতেই মাথা ধরা বা মাথা ব্যথাকে অবহেলা করা যাবে না। সঠিক কারণ নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন এই কামনায় আজ এখানেই শেষ করছি।

 

প্রথম পর্ব – মাথা ব্যথা : কারণ, প্রকার ও প্রতিকার ।। পর্ব-১

Reference Book: Headache (Vol-97, 1st Edi.) – Giuseppi Nappi & Michael Moskowitz. Davidson’s Principles and Practice of Medicine (18th edition).

Similar Posts

One Comment

Comments are closed.